বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে ; প্রধানমন্ত্রী

প্রশান্তি ডেক্স ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলায় যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পাঠক যেন বই পড়ার এবং ঘুরে ঘুরে বই দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হন সে চিন্তা থেকেই এ মহামারীর মধ্যেও বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। তবে যারা এখানে আসবেন অবশ্যই স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলবেন। তিনি বলেন, সবাইকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে পড়ার বিষয়ে উৎসাহিত করতে হবে। রাজধানীর বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে বাংলা একাডেমির মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, সংস্কৃতি সচিব মো. বদরুল আরেফিন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ গ্রন্থের ইংরেজি ভার্শন (নিউ চায়না ১৯৫২)-এর মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস অনেক ক্ষতি করেছে। জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে গেছে। এটি কাটিয়ে উঠতে আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রণোদনা ঘোষণা করেছি, প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকেও সহযোগিতা করেছি। সমগ্র বাংলাদেশে ৭ হাজার ৫০০ শিল্পীকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। তা ছাড়া অন্যান্য শ্রেণি-পেশার লোকদেরও সহযোগিতা করেছি, কেউ বাদ যায়নি। তিনি বলেন, সবাইকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে পড়ার বিষয়ে উৎসাহিত করতে হবে। কেননা সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষ সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং আরও অনেক কিছু জানতে পারে। তিনি বলেন, ছোটদের বইয়ের প্রতি ঝোঁক বাড়ানো দরকার।
আমাদের সময় বাচ্চাদের বই পড়ে শোনানো হতো। এখনো আমরা তা করি। সব সময় ঘরে একটা ছোট্ট লাইব্রেরি করে রাখি। বইয়ের প্রতি ঝোঁক বাড়াতে হবে। পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, এখন তো মোবাইল ডিভাইসেও পড়ার সুযোগ আছে। তবে বই হাতে নিয়ে বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার আনন্দই আলাদা। বইয়ের আবেদন মুছে যাবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারে থাকি আর বিরোধী দলে থাকি এক দিনের জন্য হলেও বইমেলায় যাই। এখন করোনার কারণে যেতে পারছি না। কারণ আমি গেলে ১ হাজার লোকের সম্পৃক্ততা হয়। তাদেরও সবার সংক্রমণের কথা চিন্তা করে আমি যাচ্ছি না। তবে আমার মনটা পড়ে আছে সেখানে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন আর ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেড়াবার দেশ নয়। এখন আর কেউ বাংলাদেশকে অবহেলা করতে পারবে না। বাংলাদেশকে আর পেছনে টানতে পারবে না। বাংলাদেশ কারও মুখাপেক্ষী হবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেড়ে ওঠে এবং স্বাধীনতার এ সুফল বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়- সেটাই আমরা কামনা করি। করোনা ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য আমরা টিকা এনে তা দিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে ৪৫ লক্ষাধিক মানুষ করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু টিকা নিলেও সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে। মুখে মাস্ক পরা, ঘন ঘন হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ইত্যাদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কারণ আপনারা নিজেদের সুরক্ষিত রাখলেই অন্যকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।
এখন কোথাও দ্বিতীয় বা তৃতীয় ওয়েবও শুরু হয়েছে। তাই সবাইকে সতর্ক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করছি। আমার দেখা নয়া চীন, সিক্রেট ডকুমেন্টস, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা প্রকাশিত এসব বই সবাইকে পড়ার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এসব বই পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবেন, ইতিহাসের অনেক সত্য ঘটনা জানতে পারবেন। অনেক কিছু জানার সুযোগ আছে। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে কী ভাবতেন, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কী ভাবেন বা আমাদের ধর্মীয় অনুশাসন নিয়ে কী ভাবেন সবকিছুই কিন্তু ‘আমার দেখা নয়াচীন’-এ চমৎকারভাবে লেখা আছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা ‘স্মৃতিকথা’- সেটাও ভবিষ্যতে প্রকাশ করব। বাংলা সাহিত্যের পুরস্কার পেলেন ১০ জন : ২০২০ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ১০ ক্যাটাগরিতে ১০ সাহিত্যিককে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। বিকালে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিকদের হাতে পুরস্কার হিসেবে ৩ লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন। এ বছর কবিতায় কবি মুহাম্মদ সামাদ, কথাসাহিত্যে ইমতিয়াজ শামীম, প্রবন্ধ সাহিত্যে বেগম আখতার কামাল, অনুবাদে সুরেশ রঞ্জন বসাক, নাটকে রবিউল আলম, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, মুক্তিযুদ্ধে সাহিদা বেগম, বিজ্ঞান ও কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা ও ভ্রমণকাহিনি বিভাগে ফেরদৌসী মজুমদার এবং ফোকলোর বিভাগে হাবিবুল্লাহ পাঠান পুরস্কার নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.