প্রশান্তি ডেক্স ॥ আর্লিং হরলান্ড ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। ফুটবল বিশ্ব এখন মাতোয়ারা দুজনকে নিয়ে। আগামী দিনের শ্রেষ্ঠ দুজন স্ট্রাইকার মানা হচ্ছে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও পিএসজির এই দুই রতœকে। অনেকে আবার শুধু স্ট্রাইকারের গন্ডিতেই নন, হরলান্ড-এমবাপ্পেকে ভাসাচ্ছেন আরও বড় প্রশংসায়। মেসি-রোনালদোর হাত থেকে ফুটবলীয় শ্রেষ্ঠত্বের দ্বৈরথের ব্যাটন এ দুজনের হাতেই উঠবে বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু এ দুজনের মধ্যে সেরা কে? অনেকে এগিয়ে রাখছেন হরলান্ডকে, অনেকের চোখে এমবাপ্পেই এগিয়ে। আতলেতিকো মাদ্রিদের উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ অবশ্য প্রথম দলেরই সদস্য। পিএসজির এমবাপ্পে নয়; বরং ডর্টমুন্ডের হরলান্ডকেই মনে ধরেছে তাঁর। আর কেন মনে ধরেছে, এর পেছনের কারণও জানাতে ভোলেননি তিনি। গত ১০ বছরের মধ্যে সেরা স্ট্রাইকার কে—প্রশ্নের জবাবে যাঁর নাম ওপরের দিকে থাকবে, তাঁদের মধ্যে লেভানডফস্কি, বেনজেমা, ইব্রাহিমোভিচদের পাশে সুয়ারেজ অবশ্যই থাকবেন। কিছুদিন আগেই ক্যারিয়ারে ৫০০ গোল করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন এই মৌসুমের শুরুতে বার্সেলোনা থেকে আতলেতিকোয় যোগ দেওয়া এই স্ট্রাইকার। তিনি ভালো করেই জানেন, এককালে স্ট্রাইকার হিসেবে যে আলো ছড়িয়েছেন, সে পথে এখন আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছেন হরলান্ড ও এমবাপ্পে।
অনলাইন গেমিং স্ট্রিমিং সাইট ‘টুইচ’–এ সেদিন সরাসরি এসেছিলেন বার্সেলোনা ও লিভারপুলের সাবেক এই স্ট্রাইকার। সেখানেই আরএসিওয়ানের সাংবাদিক জেরার্দ রোমেরোর করা এক প্রশ্নের জবাবে হরলান্ডের প্রতি তাঁর অনুরাগের কথা জানিয়েছেন সুয়ারেজ, ‘এমবাপ্পে ও হরলান্ডের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে বললে আমি হরলান্ডকেই বেছে নেব। হরলান্ড অসাধারণ একজন খেলোয়াড়। নিজেকে অনেক উঁচু মানে নিয়ে গেছে সে। স্ট্রাইকার হিসেবে ওর শরীরের শক্তি সমীহ করার মতো। আমার মনে হয়, বর্তমান সময়ে বিশ্বের সেরা “নাম্বার নাইন”দের মধ্যে ও অবশ্যই থাকবে। ওর হাতে একটা নতুন যুগে প্রবেশ করবে ফুটবল।’ হরলান্ডের গুণ গাইতে গিয়ে এমবাপ্পেকে যে ভুলে গেছেন সুয়ারেজ, তা কিন্তু নয়। এমবাপ্পেরও সুনাম করেছেন এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার, ‘তবে এমবাপ্পের কথাও বলতে হবে। সে-ও অনেক উঁচু মানের খেলোয়াড়।’কেন তাঁদের নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে, এই মৌসুমের প্রতিমুহূর্তে সেটা জানান দিয়ে যাচ্ছেন হরলান্ড, এমবাপ্পে দুজনই। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই মৌসুমে ৩৬ ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে এমবাপ্পের, গোল করেছেন ৩০টি। কিছুদিন আগে ক্যাম্প ন্যুতে দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় করে দিয়েছেন বার্সেলোনাকে, দলকে উঠিয়েছেন কোয়ার্টার ফাইনালে।
ওদিকে হরলান্ডও কম যান না। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩১ ম্যাচ খেলে ৩৩ গোল করা হয়ে গেছে তাঁর। দলকে নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছেন তিনিও। এমবাপ্পে-হরলান্ড যেখানে হেসেখেলে চ্যাম্পিয়নস লিগের পরের রাউন্ডে উঠেছেন, সেখানে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর লিওনেল মেসি বাদ পড়েছেন আগের রাউন্ডেই। এ যেন আক্ষরিক অর্থেই পালাবদল আসছে ফুটবলে! দুজনের সম্ভাব্য ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন নিয়ে সরগরম ফুটবলপাড়া। এমবাপ্পেকে দলে নেওয়ার জন্য রিয়াল মাদ্রিদ, লিভারপুলের মতো দলগুলো আগ্রহী বলে শোনা গেছে। ওদিকে হরলান্ডের পিছে লেগে আছে চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি, বায়ার্ন মিউনিখ, রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মতো ক্লাবগুলো। সামনের এক বছরের মধ্যে যে দুজন ক্লাব ছাড়বেন, তা মোটামুটি নিশ্চিতই বলা চলে। বার্সেলোনার নতুন সভাপতির পদে বসেছেন হুয়ান লাপোর্তা। সুয়ারেজ যাওয়ার পর থেকেই বিশ্বমানের একজন গোলদাতার অভাব অনুভব করছে বার্সেলোনা। সে লক্ষ্যে হরলান্ডের মতো একজনকে দলে আনার জন্য সম্ভাব্য যা কিছু করা যায়, সব করবেন বলে জানিয়েছেন নতুন সভাপতি। যাঁর বিকল্প হিসেবে হরলান্ডকে আনা হবে, সেই সুয়ারেজই হরলান্ডকে নিজের সুনামের সনদটা দিয়ে দিলেন। বার্সেলোনা এখন ইঙ্গিতটা বুঝে হরলান্ডকে দলে আনার চেষ্টা আরও বাড়িয়ে দেয় কি না, সেটাই দেখার বিষয় এখন।