প্রশান্তি ডেক্স্্ ॥ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। নতুন রাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেরই মুক্তিযোদ্ধারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ৫০ বছর পরে, ২৬ জানুয়ারি ভারতের গণতন্ত্র দিবসে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল ইতিহাসের অন্যতম সামরিক বিজয়ের স্মরণে দিল্লির রাজপথে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেছিল। ১২২ সদস্যের এই শক্তিশালী দলে ছিলেন যুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করা বাংলাদেশি সৈনিকরা। এই অংশগ্রহণ বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ
সামরিক প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দেয় এবং সামরিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং ইন্দিরা গান্ধী শান্তি ও বন্ধুত্বের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, যা বাংলাদেশ-ভারত সামরিক চুক্তির ভিত্তি রচনা করে। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। এ বছর যেহেতু বাংলাদেশ মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে, সেহেতু উভয় দেশের জন্যই প্রতিরক্ষা সম্পর্ক নবায়নের এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না। বাংলাদেশ ও ভারত বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মধ্যে সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, যৌথ অনুশীলন, মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগে ত্রাণ সহায়তার মতো বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতার (জিরো টলারেন্স) নীতি অনুসরণ করে এবং সরকার সন্ত্রাসবিরোধী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সন্ত্রাসবাদবিরোধী সহযোগিতা বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিরক্ষা সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, কারণ উভয় দেশই সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়ে চরম মূল্য দিয়েছে এবং এখনও ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন রয়েছে। দুই দেশই এ অঞ্চলে সহিংস ইসলামী চরমপন্থার বিস্তার রোধে সচেতন ছিল।
আরও ভালো যোগাযোগের মাধ্যমে মারাত্মক সন্ত্রাসী ঘটনা প্রতিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৬ সালে ঢাকার হলি আর্টিজান হামলা এবং ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার ক্ষতচিহ্ন এখনও দুই দেশের মানুষের মনে গেঁথে আছে। দুটি ঘটনাতেই সন্ত্রাসীদের একই ধরনের অনুপ্রেরণা, কৌশল, জিম্মি পরিস্থিতি ছিল। এ ধরনের ঘটনা রোধে সামরিক সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে সাতবার যৌথ মহড়া সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, উপসাগরে ঘনঘন ঘূর্ণিঝড় একটি সার্বক্ষণিক চ্যালেঞ্জ, যা উন্নত মানবিক এবং দুর্যোগে ত্রাণ দক্ষতার দাবি করে। দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ একে অপরের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার এবং প্রয়োজনের সময় বাধাহীন ও কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করার সুযোগ দেয়। রোহিঙ্গা সংকট দুই দেশের জন্যই একটি সক্রিয় নিরাপত্তা সমস্যা হিসাবে রয়ে গেছে এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতি বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর আরও সহায়তার সঙ্গে ভারতের সমর্থন এবং উপস্থিতির মাধ্যমে আরও উন্নত সংকট ব্যবস্থাপনা এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্ভব। অতীতে বাংলাদেশ ও ভারত একে অপরের সমস্যা চিহ্নিত করে একটি সাধারণ সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করেছে। এই ধারা বজায় রাখতে তাদের অবশ্যই স্বাক্ষরিত সব সমঝোতা স্মারক ও চুক্তির বাস্তবায়ন করতে হবে।