নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি উপলক্ষে নি:ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা ছিল। পুলিশের ভাস্য ও হম্বি-তম্বিতে তাই দৃশ্যমান ছিল। তবে বাস্তবে এর কমতি ছিল যথেষ্ট। ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট ছিল কিনা তা বলতে পারব না তবে সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানটি সফল হয়েছে এটাই বড় কথা। অনেক সাধারণ মানুষের মনের ক্ষোভও সঞ্চিত হয়েছে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে। কারো ব্যবসা এবং কারো জীবনের সর্বনাশও হয়েছে। তবে সবই সহনীয়তায় মেনে নিতে হবে এবং হচ্ছে। কিন্তু সারা দেশে জনাব মুদি সাহেবের আগমণকে কেন্দ্র করে যে প্রলয়ঙ্করী ঝড় বয়ে গেল তার জন্য কি পুর্ব প্রস্তুতি ছিল? না ছিল না বলেই চলে তবে ঢাকায় কিছুটা ছিল এবং পুলিশ ও জনগণ চেষ্টা করেছে এর মাত্রার তিব্রতা কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে।
তবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে চিহ্নিত মৌলবাদী বা ধর্মীয় উম্মাদনায় উন্মুক্ত স্থানগুলো আজ চিহ্নিত। তাই ঐসকল স্থানকে কেন সুরক্ষার চাদরে আবৃত করা গেল না তা অবুঝ জনগণের প্রশ্নের কারণ। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে বায়তুল মোকারম; এটা আরো কঠোর নিরপত্তায় আবৃত থাকা উচিত বলে মনে হয়। আর ঢাকার বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেখানে আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যাচ্ছে বারবার সেইখানে কেন পুলিশ বা প্রশাসন নিশ্চুপ? আমি ভোক্তভোগীদের একজন এবং পুরো ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছি যাতে দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করা যায়।
প্রথমত আমি সরাইল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসার পথে পুলিশ লাইন এর সামনে ব্যারিকেডের মুখে পড়ি। মৌলবাদি সন্ত্রাসীদের এক লাঠি মিছিল আসে এবং ঐ মিছিলে থাকারা পথে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। আমরা গাড়ি থামিয়ে ঘটনা প্রত্যক্ষ করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। তবে দেশের সম্পদের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে দেখে কষ্টে পাথর হয়ে যাচ্ছিলাম এবং প্রতিবাদী চরিত্র জেগে উঠে কিছু একটা করতে চাইছিল। আমরা সবাই নিবৃত হই আর পুলিশের নিষ্কিয়তা দেখতে থাকি। সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত পুলিশ শুধু ব্যারাকে বসে বসে তামাসা দেখছে… তবে ১ঘন্টা ৪০ মিনিট পরে তারা প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামে এবং সাধারণ জনগণ ও প্রত্যক্ষদর্শী এবং গাড়ির যাত্রী ও ড্রাইভারদের তাড়িয়ে দেন। আমরা গাড়ি ফেলে পাশেই আত্মিয়ের বাড়িতে উঠি আর ছাদ থেকে সবকিছু দেখি ও ভিডিও করি। ছাদথেকে ভিডিও করাতেও তাদের আপত্তি তাই তাদের ফাঁকা গুলি এবং বুলি একসঙ্গেই চলছে। ভোক্তভোগীরা বা প্রত্যক্ষদর্শীরা সবই বুঝেন এবং জানেন।
ঘন্টাখানেক চেষ্টা করে পুলিশ অন্তত সাধারণ মানুষের জটলা দুর করতে সক্ষম হন। আর ইতোমধ্যেই যা করার তাই করে ফেলেছেন ঐ মোল্লারা। তারপর আমি পুনরায় পুলিশ লাইন যাই এবং আমার গাড়িটি নিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আসি এবং আমার পরিবারের সকলকে নিয়ে বাড়ির উদ্যেশ্যে রওয়ানা দেই। ধ্বংসস্তুপে আচ্ছাদিত রাস্তায় সতর্কতার সহিত গাড়ি চালিয়ে সামনে অগ্রসর হয়। তবে ভয় এবং আতঙ্ক কোনটিই ছিলনা মনে। কিন্তু যতই সামনে অগ্রসর হচ্ছি ততই দেখছি ধ্বংসস্তুপ এবং উৎসুখ জনতার কোলাহল। এই করে যখন ভাদুঘর পৌঁছায় তখন বাধার সম্মুখিন হয় এবং আমার ও আমার পরিবারের পরিচয় দেয়। কিন্তু কেউ কেউ শুনলেও অন্যরা না শুনেই ঝড়ো বেগে আক্রমন চালায় যা দেখে মনে হচ্ছে পাকিস্থানী বাহিনীর কেউ আমি আর বাঙ্গালী মুক্তির মহানায়করা হাতে নাতে ধরে কঠোর ও কঠিন সাজা দিচ্ছে। নিমিষেই গাড়ির কাঁচগুলো নি:ছিন্ন হয়ে গেল এবং মা ও মেয়ে আঘাত পেয়ে আর বাবা হতবাগ হয়ে ঘটনা প্রত্যক্ষ করল। এই কঠিন সময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি সাধারণ জনগণ অথবা উৎসুখ জনতার কেউই আছে-পাশে ছিল না। তবে খোদা স্বয়ং পাশে ছিল এবং আমাদেরকে সুরক্ষা দিয়েছেন। তার পর আরো ঘন্টাখানেক সময় অতিবাহিক করে লুকিয়ে বিকল্প রাস্তা খুজে বাড়িতে ফিরার জন্য যাত্রা শুরু করি এবং দির্ঘ সময় পর আল্লাহর সহায়তায় গ্রামের বাড়িতে ফিরে যায়। অর্ধরাত গ্রামের বাড়িতে থেকে ভোর ৪টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে সকাল ৮টায় এসে ঢাকার বাসায় ঁেপৗছি।
এই গল্পের কোন অংশে কি প্রশাসনের পুর্ব প্রস্তুতির কোন লক্ষ্যন এমনকি বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলার কোন আলামত পরিলক্ষিত হয়েছে; আমার মনে হয় হয়নি তাই আগামীর জন্য প্রশ্ন রইল বিবেকসম্পন্ন গর্বিত প্রশাসনের কাছে। এটাই যে প্রথম তা কিন্তু নয় বরং অহরহ এই ঘটনা ঘটছে এবং ঘটবে তাই এর আলোকে কি কোন নিখুত পরিকল্পনা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থার বলয় তৈরী করা যায় না। ভাবুন এবং পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করুন। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজনে আপনারা স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে সফলতার ভূমিকা রাখুন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সহ সাড়া দেশে কি হয়েছে এবং ঘটেছে তা সবাই জানে তাই আগামীর করনীয়তে কাজ করুন। ঘটনা ঘটার আগেই সবকিছু শেষ করুন; ঘটার পরে নয়। আল্লাহ তুমি সহায় হও এবং আসহায়ের পাশে থেকে পথ দেখাও। আমীন॥

Leave a Reply

Your email address will not be published.