প্রশান্তি ডেক্স ॥ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন বা এসকাপ। গত মঙ্গলবার এসকাপ প্রকাশিত ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক জরিপ-২০২১’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এ অঞ্চলের ৫০টি দেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এসকাপ সার্বিকভাবে এ অঞ্চলে ২০২১ পঞ্জিকাবর্ষে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, অর্থনীতির পুনরুদ্ধার মোটামুটি তেজি হলে এটি ইংরেজি অক্ষর ‘কে’ আকৃতির হতে পারে। এর মানে অতিমারি-পরবর্তী পুনরুদ্ধার এবং উত্তরণকালীন দরিদ্র দেশ এবং অধিকতর ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী পিছিয়ে পড়তে পারে। রিপোর্টে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, পাকিস্তান ও নেপালের ক্ষেত্রে অর্থবছর অনুযায়ী প্রাক্কলন ও প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। এসব দেশের অর্থবছর একই অথবা কাছাকাছি সময়ে। এসকাপ ২০২০-২১ অর্থবছরে (২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির। করোনার প্রভাবে গত অর্থবছরে বাংলাদেশে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
হয়। আগের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। অবশ্য আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৮ শতাংশ হতে পারে বলে মনে করছে এসকাপ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কভিড-পূর্ববর্তী অবস্থায় অর্থনীতির ভিত্তি শক্তিশালী ছিল। এর সঙ্গে সরকারের দক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং রেমিট্যান্সের উচ্চপ্রবাহের সুবিধা পেয়েছে। অনেকের চেয়ে কভিডের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কম পড়েছে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে মূল্যস্ম্ফীতি কিছুটা বাড়তে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ম্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে।
এসকাপের প্রতিবেদনে ২০২০-২১ অর্থবছরে (এপ্রিল, ২০২০-মার্চ ২০২১) ভারতের জিডিপি করোনার বিরূপ প্রভাবে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যাওয়ার প্রাক্কলন রয়েছে। তবে আগামী অর্থবছরে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস রয়েছে। চলতি অর্থবছরে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ। ভুটানের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। নেপালের প্রবৃদ্ধি হতে পারে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। এদিকে এসকাপের জরিপের ভিত্তিতে এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে করোনার প্রভাবে গত বছর ৮ কোটি ৯০ লাখ লোক অতি দরিদ্র হয়ে গেছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। দৈনিক ১ দশমিক ৯০ ডলারের নিচে আয় করতে পারে এমন পরিবারকে আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে অতি দরিদ্র বলা হয়। অর্থনীতির শক্তিশালী পুনরুদ্ধারে কভিড-১৯-এর টিকা কার্যক্রম জোরদার এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে এসকাপ।