ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখাচ্ছে জার্মানির হার

স্পোর্স্ট ডেক্স ॥ ধাক্কাটা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি জার্মানির পক্ষে। উত্তর মেসিডোনিয়ার মতো দেশের কাছে হারা বলে কথা! সেটাও আবার ঘরের মাঠে। গত পরশু বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ৬৫ নম্বরে থাকা দলটার কাছে নিজেদের মাঠে ২-১ গোলে হেরে গেছে জার্মানি। স্বাধীন হওয়ার পর যে দল কখনো বিশ্বকাপ খেলেনি, সে দলই কিনা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জার্মানিকে হারিয়ে দিয়েছে। এই হার ও চমক নিয়ে আরও বহুদিন কথা হবে নিশ্চিত।
হারের পর শুরু হয়েছে দল ও কোচের সমালোচনা। দলকে এগিয়ে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করায় সরাসরি স্ট্রাইকার টিমো ভের্নারকে দোষারোপ করেছেন কোচ ইওয়াখিম ল্যুভ। ওদিকে জার্মান সংবাদমাধ্যম ২০২০ ইউরোর (করোনার কারণে যেটি পিছিয়ে আগামী জুনে হওয়ার কথা) পর সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো ল্যুভকে নিয়ে পড়েছে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এমন দিন যে খুব বেশি দেখেনি দেশটি। তবে জার্মানির এমন দুর্দশায় খুশি হয়ে উঠতে পারে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা। বহুদিন পর এ দুই দেশকে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখাচ্ছে জার্মানির হার।
জার্মানির বিপক্ষে দলকে প্রথমবার এগিয়ে দিচ্ছেন এক সময়ে ইন্টার মিলানে খেলা মেসিডোনিয়ান ফরোয়ার্ড গোরান পানদেভ। ব্যাপারটা একটু প্যাঁচানো মনে হতে পারে। তারা ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী হতে পারে, এখনো পরাশক্তিদের মধ্যে বিবেচ্য হতে পারে, কিন্তু জার্মানিকে এখন আর বিশ্বকাপ জয়ের সবচেয়ে বড় দাবিদার মানা যায় না। বরং বর্তমান শিরোপাধারী ফ্রান্সই সে জায়গা নেবে। তাই জার্মানির এমন বাজে ফর্ম আর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এভাবে ছোট দলের কাছে হারে ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা কিংবা অন্য যেকোনো শিরোপাপ্রত্যাশী দলের বাড়তি খুশি হওয়ার কথা নয়।
ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার সমর্থকদের আশা বাড়ছে অন্য কারণে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জার্মানরা বরাবরই দুর্দান্ত। বাছাইপর্ব ব্যাপারটা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯৫ ম্যাচ খেলা দেশটি ৭৫ ম্যাচেই জিতেছে। আর গতকালের এই চমকে দেওয়া ম্যাচের পর তাদের হারের সংখ্যা মাত্র তিন! বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জার্মানির সর্বশেষ হার ছিল ২০০১ সালে। সেবার বাছাইপর্বের হারটা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। খুব একটা ভালো সময়ের মধ্যে যাচ্ছিল না দলটি। তবু ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের কাছে ৫-১ গোলে হার তো বিস্ময় জাগায়। বাছাইপর্বে জার্মানির অন্য হার ১৯৮৫ সালে। সেবারও ঘরের মাঠ পর করেছিল তাদের। পর্তুগালের কাছে সেবার ১-০ গোলে হেরেছিল জার্মানরা। টিমো ভের্নার অবিশ্বাস্যভাবে একটা গোল মিস না করলে হয়তো জার্মানিকে ম্যাচ শেষে এমন হতাশায় পুড়তে হতো না। মজার ব্যাপার, এ দুবারই বাছাইপর্বের হার দলটির বিশ্বকাপ–ভাগ্যে কোনো প্রভাব ফেলেনি। ২০০২ সালে তো সবাইকে চমকেই দিয়েছিল জার্মানি। ফেবারিট সব দল যখন ছিটকে পড়েছে, সেখানে টুর্নামেন্টের আগে গোনায় না রাখা জার্মানিই ফাইনালে উঠে গিয়েছিল। ১৯৮৬ বিশ্বকাপেও বাছাইপর্বের হারের দুঃখ ভুলে ফাইনালে উঠে গিয়েছিলেন রুমেনিগে-ম্যাথাউসরা।
আর এ তথ্যটাই আশা বাড়াতে পারে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার। আর্জেন্টিনা সর্বশেষ বিশ্বকাপ জিতেছিল ১৯৮৬ সালে, ওদিকে ব্রাজিলের সর্বশেষ বিশ্বসেরার স্বাদ পাওয়া ২০০২ সালে। জার্মানিকে হারিয়েই দুদল পেয়েছিল সে স্বাদ। ইতিহাসে মাত্র তৃতীয়বারের মতো বাছাইপর্বে জার্মানির হারে তাই এই দিক থেকে ইতিবাচক কিছু খুঁজে নিতেও পারে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.