প্রশান্তি ডেক্স ॥ হঠাৎ করেই খামারে ৬ ছয় মণ ওজনের একটি ষাঁড় অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই গরুটির নড়াচড়াও বন্ধ হয়ে যায়। তাই মৃত ভেবে কাউকে কিছু না জানিয়ে কসাই বাচ্চু মিয়া নিজেই গরুটি জবাই করেন। পরে গোপনে বস্তায় ভরে গরুর কিছু অংশ বিক্রির জন্য বাহিরে পাঠান। অবশিষ্ট মাংস তৈরির প্রক্রিয়া করা হচ্ছিল। বিষয়টি প্রতিবেশীরা জানতে পারলে স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীকে জানান। এরপর গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে উপজেলা ও পৌর প্রশাসন ঘটনা সম্পর্কে অবগত হন। পরে গত বুধবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে হাজির হন উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাওসার হাবিব ও ভাঙ্গুড়া পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। ঘটনার সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিক অবশিষ্ট প্রায় ৫ মণ মাংস মাটিচাপা দিয়ে কসাই বাচ্চু মিয়াকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ওই দুই কর্মকর্তা। তবে রাতের আঁধারে বাচ্চু মিয়া মাটিতে পুঁতে রাখা গরুর মাংস তুলে নিয়ে আবারও বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তবে বাচ্চু মিয়া তা অস্বীকার করেছেন। অভিযুক্ত কসাই বাচ্চু মিয়া পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরশহরের হারোপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। শহরের বড়াল ব্রিজ রেল স্টেশনের পাশে তার মাংসের দোকান রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাঙ্গুড়া পৌরশহরের হারোপাড়া মহল্লায় শতাধিক গরুর খামার রয়েছে। অর্ধেক খামারে স্থানীয় বাজারের মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য ষাঁড় ও বলদ জাতীয় গরু পালন করা হয়। এসব খামারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় দশ-বারোজন কসাই। অভিযোগ রয়েছে, কয়েকজন কসাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসুস্থ ও অর্ধমৃত গরু অল্প দামে কিনে নিয়ে এসে ভাঙ্গুড়াসহ আশেপাশের উপজেলায় মাংসের দোকানে বিক্রি করেন। বছরের এই সময়টিতে হিট স্ট্রোকের কারণে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে গরু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কসাইরা লোকচক্ষুর আড়ালে এসব গরু জবাই করে বিক্রি করেন। অথচ নিয়ম রয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস অথবা পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এসব গরু জবাই করতে হবে। কিন্তু কেউ-ই এই নিয়েমের তোয়াক্কা করছেন না। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতা রয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। একারণে বাচ্চু মিয়া সহ কয়েকজন কসাই প্রায়ই এ ধরনের অপকর্ম করে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকেন। একমাস আগে একই মহল্লার শহিদুল ইসলাম নামে আরেক কসাই অসুস্থ গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।
অভিযোগের বিষয়ে কসাই বাচ্চু মিয়া বলেন, অসুস্থ গরু জবাই করে নিজেরাই খাই। বাড়ির প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের কাছে পাঠাই। এগুলো মানুষের কাছে বিক্রি করি না। তাই কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে জবাই করি। এদিনও তাই করেছিলাম। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগের কারণে জরিমানা দিতে হয়েছে। মাংসের ব্যবসা করলে এরকম একটু হয়।
ভাঙ্গুড়া পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, পৌরসভাকে অবগত করে স্থানীয় কসাইরা গরু জবাই করে বাজারে বিক্রি করবেন বলে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু তারা সেটা করেন না। উপরন্তু তারা গোপনে জবাই করে আশেপাশের উপজেলায় মাংস ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠিয়ে দেন। সম্প্রতি এমন একাধিক ঘটনা ঘটায় বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।