টাকা কম দেওয়ায় চিকিৎসক থাপ্পর মারল শিশু রোগীকে

হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি ॥ সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ ওঠেছে। টাকা কম দেওয়ায় কুলসুম আক্তার (৬) নামে এক শিশু রোগীকে থাপ্পর মেরে অজ্ঞান করে ফেলা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কুলসুম আক্তার ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের আতকাপাড়া গ্রামের জলিল মিয়ার মেয়ে। গত বুধবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার আরকে চাকলাদার নিজেই এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন! এনিয়ে ওই দিন বিকেলে শিশুটির চাচা মো. রতন মিয়া বাদী হয়ে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ ও অসুস্থ শিশুটির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দুপুরে উপজেলার আতকাপাড়া গ্রামের জলিল মিয়ার মেয়ে কুলসুমা আক্তার বাড়ির অন্য শিশুদের সাথে খেলা করার সময় দায়ের উপর পড়ে গিয়ে তার ডান হাতের অনেকটা কেটে যায়। এতে সে গুরুতর আহত হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় শিশুটিকে নিয়ে তার চাচা রতন মিয়া ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার আরকে চাকলাদার
শিশুটির চিকিৎসার জন্য তার চাচা রতন মিয়ার কাছে ৪০০ টাকা দাবি করেনন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে টাকা লাগে না বলে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে রতন মিয়া ও আরকে চাকলাদারের মধ্যে তর্ক হয়। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে ওই চিকিৎসককে ১১০ টাকা দিয়ে দেন রতন মিয়া। তাতে তিনি সন্তুষ্ট না হয়েই শিশুটির চিকিৎসা শুরু করেন। হাতের কাটা স্থান সেলাই করার সময় ভয়ে শিশুটি চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। এ সময় চিকিৎসক আরকে চাকলাদার রেগে ওই শিশুটির গালে সজোরে থাপ্পর মারলে শিশুটি সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তার গালে পাঁচটি আঙ্গুলের ছাপ লেগে যায়। প্রায় আধাঘণ্টা পর শিশুটির জ্ঞান ফিরে আসে। পরে ওই দিন বিকেলেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
রতন মিয়া বলেন, এ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অভিযোক্ত চিকিৎসক আরকে চাকলাদার তার লোকজন নিয়ে ওইদিন রাতে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে গিয়ে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। আরকে চাকলাদার বলেন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেকে নিয়ে ভুল বুঝাবুঝির এ বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. এমরান হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এবিষয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সাব্বির জামান রকিকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনতাসির হাসান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবু তালেবকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট পৃথক আরো একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.