৪০ বছরেও ঘোরেনি অনিলের ‘ভাগ্যের চাকা’!

প্রশান্তি ডেক্স ॥ বয়স যখন ১২ বছর তখন থেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য বাবার সঙ্গে জুতা সেলাই ও রঙ করার কাজ করেন অনিল চন্দ্র ঋষিদাস। পেটের দায়ে তাঁর বাবাই এ কাজে অনুপ্রেরণা দিয়ে বাধ্য করেছে। এরপর শৈশব-কৈশোর কাটিয়ে অনিলের বয়স এখন ৫২। বিভিন্ন অসুখে-বিসুখে তাঁর বয়স দ্রুত বৃদ্ধের কোঠায় এনে দিয়েছে, অথচ আজও তাঁর ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। বেতাগী বাসস্ট্যান্ডে পল্লী বিদ্যুতের সাব স্টেশনের সামনে ছোট একটা ঘরে বসে জুতা সেলাই আর কালি করার কাজ করেন অনিল। বাড়ি পাশ্ববর্তী উপজেলা মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী বাজারে মাত্র ২ শতাংশ জমি থাকলেও সেখানে ছোট্ট একটি টিনের ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গাদাগাদি করে থাকেন তিনি।
অনিলের সাথে একান্ত আলোচনায় জানা যায়, দুঃখভরা জীবনের গল্পের পরতে পরতে কেবলই অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তা। ২০০৭ সালের ১২ মার্চ মা সুমিত্রা রানী এবং ওই একই বছর ৫ ডিসেম্বর বাবা হরিচরণ ঋষিদাস মারা যান। ৩ ভাই ও ১ বোনেসহ ৩ ভাই-বোনের মধ্যে অনিল দ্বিতীয়। বাবা মা মারা যাওয়ার পর থেকে তাঁর বড় ও ছোট ভাই পৃথক হয়ে যায়। অনিলের স্ত্রী ও ২ ছেলেসহ ৪ সদস্যের সংসার চলে অনিলের আয়ের টাকা দিয়ে।
অনিল জানায়, আমার বাবার তেমন কোনো সহায়-সম্পদ ছিল না। টাকার অভাবে আমরা চার ভাই-বোনের কেউই পড়ালেখা করতে পারিনি। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই বাবা আমাদের এ কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। বাবার সঙ্গে জুতা সেলাই ও জুতায় কালিকরা শিখে ফেলেছি। ছোটবেলায় যে কাজ শুরু করেছি, তা আজও করে যাচ্ছি। বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের পরিবারের দুঃখ-কষ্ট বেড়ে যায়। টানাপোড়েনের সংসারে জীবনে কখনো ভালো খাবার খেতে পারিনি আমরা।
গত ৭ বছর যাবৎ লিভার ও কিডনিতে সমস্যা রয়েছে। প্রতিমাসে গড়ে ৩ হাজার টাকার ঔষুধ খেতে হচ্ছে। জুতা সেলাই ও কালি করে দিনে গড়ে ২০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে থাকেন। এ টাকা দিয়ে তো সবদিন ভালো খাবার খাওয়া যায় না। বছরে এক-দুবার মাংস-ভাত খাই। বাকি দিনগুলো শাক-সবজি খেয়ে কাটিয়ে দেই। ছেলে-মেয়েগুলোর জন্য খুব কষ্ট হয়। কষ্টের কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে তিনি কেঁদে ফেলেন। অনিলের বড় ছেলে অসিম ঋষিদাস (২৪) মাত্র ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এখন দিন মজুরের কাজ করছে। কিছুদিন পূর্বে বিবাহ করে সংসার থেকে আলাদা হয়ে যায়। ছোট ছেলে হৃদয় ঋষিদাস (১৮) মাত্র ৫ম শ্রেণি পযন্ত পড়ালেখা করে প্রতিমা তৈরির কাজ করছে। তিন বছর পূর্বে মেয়ে সবিতার বিবাহ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল সন্ধ্যার পরে বাসস্ট্যান্ডে তাঁর দোকানে পাশে তৈল ও পেট্রোলের দোকানে আগুন লেগে তাঁর দোকানও সম্পূর্ন পুড়ে যায়।
অনিল জানায়,’ টাকার অভাবে নিজে লেখাপড়া করতে পারিনি, এখন আমার ছেলে-মেয়েদেরকেও লেখাপড়া শেখাতে পারি নাই। বাবা হিসেবে নিজেকে খুব ব্যর্থ মনে হয়।’ তিনি আরো জানান,’ বাবা মা মারা যাওয়ার পর ভাইরেরাও পৃথক হয়ে যায়। এরই মধ্যে ঋণ ও ধারদেনা করে মেয়ের বিয়ে এবং নিজের অসুখে এখন অনেক টাকা ঋণী হয়েছি।’ এ বিষয় পৌরসভা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সলর মো. নাসির উদ্দিন ফকির বলেন,’ তাকে আমরা বিভিন্ন সময় সাহায্য করে থাকি এবং ভবিষ্যতে করা হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.