দু:খের পরেই আনন্দ

জাতীর এই ক্রান্তিকালে সামনে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র অবলম্বন হলো খোদায়ী জীবন যাপন। খোদার বা আল্লাহর অথবা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার কোন বিকল্প ইেন। মানুষের ইচ্ছা বা শয়তানের নিজস্ব ইচ্ছায় নেই কোন শান্তি ও নিশ্চয়তা এবং স্থিতিশীলতা। তবে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় পরিচালিত হয়ে কিছু করলে সেখানে নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজমান থাকবে; যা যুগে যুগে প্রমানিত হয়েছে। বিশে^র সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে আমাদের এখন যে সমস্যা তা হলো কোনদিকে যাই… যেদিকে যাই সেদিকেই যেন সমস্যা। তাই হিতাহিত জ্ঞান না হারিয়ে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করুন যেন তিনি আমাদেরকে পথ দেখান। আল্লাহ মালিক বলেছেন ধৈয্য ও সহ্যের অতিরিক্ত পরীক্ষা তিনি আমাদেরকে দেন না। তাই ধৈয্য ও সহ্যকে সঙ্গে নিয়ে সাহসের সঙ্গে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করে আল্লাহর দেখানো পথে এগিয়ে যাব। তাহলেই আমাদের শান্তি ও নিরাপত্তা এবং নিশ্চয়তা আর স্থিতিশীলতা বিরাজমান থাকবে।
চলমান লকডাউনে যে ব্যবস্থা দৃশ্যমান তা হলো মানলেও ক্ষতি আর না মানলেও ক্ষতি। তাই এখন যাই কোথায়। তবে সরকারের দেয়া আদেশ মান্য করে ক্ষতির সঙ্গে আলিঙ্গন করাই শ্রেয়। তারপরও যদি মানুষ শান্তি পায়; নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা পায়। আমাদের প্রত্যেকেরই আইনকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে নিয়ে পালন করা উচিত। আইনের উর্দ্ধে যেন আমরা কেউ-ই না হয় সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আইন পালন ও বাস্তবায়নে উভয়ের মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। কেউ-ই যেন সুযোগ বুঝে কারো উপর ক্ষমতা প্রয়োগের চর্চা না করে সেইদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাত-পাত এমনকি রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত না হয়ে বরং আমরা সকলে আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীবে পরিচিত হই। আল্লাহর কাছ থেকে সবাই এসেছি এবং আল্লাহর কাছেই সবাই ফিরে যাব এই বিশ^াসে একমত হয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে থেকে সকল রহমত, বরকত এবং সকল ফজিলতে পূর্ণ হই। আমাদের সামনে যে অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দুরভীত হবেই ইনশাআল্লাহ। আমরা সবাই সেই দিনের প্রত্যাশায় দোয়া ও মোনাজাতে থাকি অবিরত। একে অন্যের ভালগুণের প্রশংসা এবং চর্চায় লিপ্ত থাকি। সকল ভালকাজে মনোনিবেশ করি এবং তৌবা করে খোদার পবিত্রতা লাভে সচেষ্ট থাকি।
জন্মের পরেই মৃত্যু তবে মানুষ মাঝপথে বিবাহ যুক্ত করেছে। তাই বলা যায় জন্ম, মৃত্যু এবং বিয়ে এই তিনই উপরওয়ালার ইচ্ছায়। তাই এই তিনে কারো হস্তক্ষেপ গ্রহনযোগ্য নয় এমনকি আল্লাহ তায়ালা তা বরদাস্ত করবেন না। বরং তিনি তার সৃষ্টিকে রক্ষা করতে সক্ষম এমনকি যুগে যুগে করেও যাচ্ছেন। তাই আল্লাহর সুরক্ষায় থাকার জন্য সদা প্রস্তুত থাকুন। আল্লাহ তাঁর অসংখ নবী ও রাসুলদের মাধ্যমে এর প্রমান রেখেছেন এবং আমাদের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ সেই গল্প বা কাহিনী তিনি তাঁর কালামে লিপিবদ্দ করে রেখেছেন। তাই খোদার কালাম পড়–ন এবং জানুন যেন সেই কালামের উপর ভরসা করে নির্ভয়ে সামনে এগুতে পারেন। আল্লাহর কোন কালামই বাতিন নয় বরং বাস্তবায়ন না করলে আমাদের কোন ভিত্তিই নেই এই বিষয়ে পবিত্র কোরআন আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, হে আহলে কিতাবধারীগণ তোমাদের উপর যা নাযিল হয়েছে এবং তোমাদের পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তা বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ভিত্তিই নেই। আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং সর্বব্যাপী; তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই তাঁর কালাম বাতিল করার ক্ষমতাও কারো নেই বরং সেই কালামের উপর ভরসা ও বিশ^াস এবং নির্ভরতা নিয়ে পথ চলাই এখন প্রত্যেকটি ঈমানদার মোমিনের কাজ।
সরকারের নেয়া প্রতিটি পরিকল্পনাকে সহায়তা করা এখন সময়ের প্রয়োজনে জনগুরুত্ববহ। তাই সহযোগীতায় এগিয়ে আসুন। সমালোচনা নয়; আর এখন ভুল ধরা বা ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের দ্বন্ধ চলমান রাখা নয় বরং সাম্য ও সম্প্রীতি অব্যাহত রাখা জনগুরুত্বপূর্ণ। ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাইয়ের যদি কিছু বলার থাকে তাহলে প্রথমে এই দ্বন্ধ মিটিয়ে আল্লাহর কাছে তৌবা করে ফরিয়াদ করুন এবং যদি আল্লাহর নামে কোনকিছু দান, কোরবানী দেয়ার ইচ্ছা হয় তা কোরবানী দিন যাতে আল্লাহ তা গ্রহণ করতে পারেন। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ফ্যাতনা থেকে বের হয়ে আসুন তাহলে আন্তর্জাতিক সমস্যাও দূর হবে। আল্লাহকে কাজ করতে দিন। শয়তানকে মোনাজাতের মাধ্যমে ধমক দিয়ে বিতারিত করুন। আমরা জানি নবী ও রাসুলগণ কিভাবে সংকট মোকাবেলা করেছেন। স্ব স্ব ধর্মে এই বিবরণ পাওয়া যায় তবে আমি হযরত দায়ুদ আঃ এর সংকট উত্তরণের জন্য দৃষ্টান্তের কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করতে চাই যা এই সময়ের জন্য উপযুক্ত।
““আল্লাহ তায়া’লার আশ্রয়ে যে বাস করে সে সর্বশক্তিমানের ছায়ায় থাকে। মাবুদের সম্বন্ধে আমি এই কথা বলব, ““তিনিই আমার আশ্রয় ও আমার কেল্লা; তিনিই আমার আল্লাহ যাঁর উপর আমি ভরসা করি।”” তিনি তোমাকে শিকারীদের ফাঁদ থেকে আর সর্বনাশা মহামারীর হাত থেকে রক্ষা করবেন। তাঁর পালখে তিনি তোমাকে ঢেকে রাখবেন, তাঁর ডানার নীচে তুমি আশ্রয় পাবে; তাঁর বিশস্ততা তোমার ঢাল ও দেহ -রক্ষাকারী বর্ম হবে। রাতের বিপদ আর দিনের হামলাকে তুমি ভয় করবে না; ভয় করবে না অন্ধকারের চলমান মহামারীকে কিংবা দুপুরের ধ্বংসকারী আঘাতকে। হয়তো তোমার একদিকে পড়বে হাজার খানেক, আর হাজার দশেক পড়বে আন্য দিকে, কিন্তু এ সব তোমার কাছেই আসবে না। দুষ্ট লোকেরা কেমন পাওনা পায় তুমি কেবল তা চোখে দেখবে।
“হে মাবুদ, তুমিই আমার আশ্রয়স্থান”। তুমি স্থির করেছে আল্লাহ তায়া’লা তোমার বাসস্থান; সেজন্য তোমার কোন সর্বনাশ হবে না, তোমার বাড়ির উপর কোন আঘাত পড়বে না; কারণ তিনি তাঁর দূতদের তোমার বিষয়ে হুকুম দেবেন যেন সব অবস্থায় তাঁরা তোমাকে রক্ষা করেন। তাঁরা হাত দিয়ে তোমাকে ধরে ফেলবেন যাতে তোমার পায়ে পাথরের আঘাত না লাগে। তুমি সিংহ আর কেউটে সাপের উপর দিয়ে হেঁটে যাবে, যুব সিংহ ও সাপকে পায়ে দলে যাবে।
মাবুদ বলেছেন, “মহব্বত দিয়ে যে আমাকে আঁকড়ে ধরেছে, তাকে আমি রক্ষা করব; আমি তাকে বিপদের নাগালের বাইরে রাখব, কারন সে আমাকে সত্যিই চিনেছে। সে আমাকে ডাকলে আমি তাকে সাড়া দেব; বিপদের সময় আমি তার সঙ্গে থাকব; তাকে আমি রক্ষা করব আর সম্মানের স্থান দেব। অনেক আয়ু দিয়ে আমি তাকে খুশী করব; আমার উদ্ধারের কাজ আমি তাকে দেখাব।” হ্যা প্রীয় ভাই ও বোনেরা হতাশ ও নিরাশ হবেন না। আল্লাহ আমাদের সাহস ও আশ্রয়। আল্লাহর উপর ভরসা করেই সামনে চলুন আনন্দ, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.