প্রশান্তি ডেক্স ॥ আমরা রমজানের পবিত্রতা বলতে শুধু বুঝে থাকি, রমজানে হোটেল বন্ধ থাকা বা তার সামনে পর্দা ঝুলিয়ে দেওয়া। আসলে শুধু এটিই রমজানের পবিত্রতা রক্ষা নয়; বরং খাবার হোটেল তো মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তির জন্য খোলা রাখা অনেক ক্ষেত্রে জরুরিও বটে। আসলে রমজানের পবিত্রতা হলো, রোজাদার আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ওই সব কাজ পরিত্যাগ করা, যা তার জন্য অন্য মাসগুলোতে হালাল ছিল এবং রমজানেও হালাল। এসব কাজ এ জন্য পরিত্যাগ করা যে আল্লাহ তাআলা রোজা অবস্থায় এই কাজগুলো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই যেসব মন্দ কাজ আল্লাহ তাআলা সব সময়ের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন যেমন—মিথ্যা, প্রতারণা, খেয়ানত, আত্মসাৎ, গিবত, সুদ, জুয়া, ঝগড়া-বিবাদ, হারাম খাদ্য গ্রহণ, নামাজ না পড়া, সিনেমা-টিভি দেখা ইত্যাদি পরিহার করা অপরিহার্য।
এ বিষয়ে একটি হাদিস স্মরণীয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে পাপ, মিথ্যা কথা, অন্যায় ও মূর্খতাসুলভ কাজ ত্যাগ করতে পারে না, তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০৩) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রোজা হচ্ছে (দোজখের আগুন থেকে আত্মরক্ষার) ঢালস্বরূপ। সুতরাং যখন তোমাদের কারো রোজার দিন আসে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং অনর্থক শোরগোল না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, সে যেন তাকে বলে দেয়, আমি একজন রোজাদার।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘অনেক রোজাদারের রোজায় ক্ষুধা ছাড়া আর কোনো প্রাপ্তি নেই, আর অনেক রাত্রি জাগরণ করে নামাজি ব্যক্তির রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কোনো প্রাপ্তি নেই।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস : ১৬৯০) রমজানে ব্যবসা করা নিষিদ্ধ নয়। তবে এমনভাবে মগ্ন হয়ে পড়া যেন এ মাস ব্যবসারই জন্য এসেছে—এটা রমজানের নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষত ঈদকে কেন্দ্র করে রমজানে যে অবস্থা আমাদের সমাজে পরিলক্ষিত হয়, তা খুবই বেদনাদায়ক। অনেকে কেনাকাটার পরিবর্তে মার্কেটগুলোর পরিদর্শনে মগ্ন, না আছে ফরজ নামাজের জামাতে উপস্থিতি, না তারাবির গুরুত্ব। তিলাওয়াত, তাসবিহ, দোয়া ও রোনাজারিও পরিত্যাজ্য। এরপর নগ্নতা ও নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণসহ অন্য হারাম কাজগুলো তো রয়েছেই, যেগুলো আল্লাহর অভিশাপ ডেকে আনে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য ও কেনাকাটায় এত মগ্ন হওয়া উচিত নয় যে নামাজের জামাত ও তারাবি ছুটে যায়। আর ব্যবসায় ধোঁকাবাজি, অহেতুক মূল্য বৃদ্ধি ও প্রতারণা এবং সুদ ও জুয়াসহ অন্য সব হারাম কার্যকলাপ থেকে সারা বছরই বেঁচে থাকা ফরজ, রমজান মাসে এর অপরিহার্যতা আরো বেড়ে যায়। কেননা বরকতপূর্ণ সময়ের গুনাহও আরো সর্বগ্রাসী হয়ে থাকে।