লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি ॥ নড়াইলের লোহাগড়ার কুমড়ি গ্রামে দু’পক্ষের বিরোধ ও সংঘর্ষ সামাল দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তারা লোহাগড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এসময় দুর্বৃত্তরা এক পুলিশ কর্মকর্তার সরকারি পিস্তল কেড়ে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে দু’ঘন্টা পর পুলিশ খোয়া যাওয়া ওই পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কুমড়ি-মাউলি-দিঘলিয়া এলাকায় দিঘলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কুমড়ি পূর্বপাড়ার সরদার ওহিদুর রহমান নেতৃত্বাধীন টুকু কটা, ইসলাম মোল্যা, জালাল মোল্যা গ্রুপের সাথে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চরমাউলি গ্রামের রোকন উদ্দিন মোল্যা ও লুটিয়ার ফিরোজ মেম্বরের নেতৃত্বাধীন গ্রুপের বিরোধ চলছিল।
সরদার ওহিদুর রহমান নেতৃত্বাধীন গ্রুপের লোকজন লুটিয়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। অসহায় লোকদের উপর জুলুম-নির্যাতন করতো তারা। ওই গ্রুপের লোকদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে চরমাউলী, মাটিয়াডাঙ্গা, খালচর, গাজিপুর, লুটিয়া সহ পাঁচ গ্রামের লোকে সংঘবদ্ধ হয়ে পঞ্চপল্লী নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলে।
পঞ্চপল্লী গ্রুপের সদস্য চরমাউলি গ্রামের ইকবল ও রব্বানী গত বৃহস্পতিবার(২২ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিল থেকে ধান কেটে বাড়ি ফিরছিলেন। তাদের দুজনকে মারবার জন্য সরদার ওহিদুর রহমান নেতৃত্বাধীন গ্রুপের লোকজন রামদা,ছ্যানদা, লাঠিসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে বিলের মাঝে ঢোকে। গ্রামের মহিলারা বিষয়টি টের পেয়ে চিৎকার শুরু করলে পঞ্চপল্লী গ্রুপের সদস্যরাও টের পেয়ে পাল্টা জবাব দিতে সেখানে চলে আসে। দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার খবর পেয়ে লোহাগড়া থানার এএসআই মীর আলমগীর হোসেন এবং এএসআই মিকাইল কুমড়ি পূর্বপাড়াস্থ টিকেরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে প্রবেশ করেন। এএসআই মীর আলমগীর হোসেন এসময় সরদার ওহিদুর রহমান গ্রুপের সনি সরদারকে ধরে ফেলেন। তাকে উদ্ধার করতে সরদার ওহিদুর রহমান গ্রুপের পলাশ সরদার, আজগার মোল্যা, সাদ্দাম কটা, সাজ্জাদ কটা, আজাদ কটাসহ প্রায় ২৫/৩০ জন এএসআই মীর আলমগীরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জখম করে সনি সরদারকে ছিনিয়ে নেয়। এসময় এএসআই মিকাইলও মারপিটের শিকার হন।
দুর্বৃত্তরা মারপিটের সময় এএসআই মীর আলমগীর হোসেনের সরকারি পিস্তল কেড়ে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া হাসপাতালে ভর্তি করে। খোয়া যাওয়ার দু’ঘন্টা পর পুলিশ মাউলী সড়কের পাশ থেকে ওই পিস্তল উদ্ধার করে। অভিযুক্ত সরদার ওহিদুর রহমান গ্রুপের সদস্যরা পলাতক থাকায় বক্তব্য নেয়া যায়নি। ঘটনার পরই কুমড়ি এলাকায় থানা পুলিশ ও ডিপি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় (পি,পি,এম) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, সরদার ওহিদুর রহমানের গ্রুপ পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের জখম করেছে এবং তারা অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। পরে ছিনিয়ে নেয়া অস্ত্র উদ্ধার করেছি। দোষীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।