প্রশান্তি ডেক্স ॥ দু’দিন আগে পুরান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এলাকায় সাংবাদিকের লাইভের মাঝে এক পথশিশু ঢুকে পড়ে লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পরে সেই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। অনেকে শিশুটির সাহসিকতা, সাবলীলভাবে কথা বলা ও স্মার্টলি ক্যামেরার ফ্রেম থেকে বেরিয়ে যাওয়া দেখে প্রশংসা করছেন। ঘটনাটি হল- সোমবার (১৯ এপ্রিল) করোনার উচ্চ সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা লকডাউন পরিস্থিতি তুলে ধরতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন কিংবা কোনো অনলাইন পত্রিকার একটি লাইভ অনুষ্ঠানে রিপোর্টার বুম হাতে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন। আচমকা ফ্রেমে ঢুকে পড়ে এক পথশিশু। রিপোর্টার কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে বলতে থাকে, ‘আচ্ছা, এই যে লকডাউন দিয়েছে, সামনে ঈদ, মানুষ খাবে কী? মাননীয় মন্ত্রী যে লকডাউন দিয়েছে,….এটা একটা ভুয়া। থ্যাংক ইউ।’
এই এক ভিডিও ক্লিপেই দেশব্যাপী আলোড়ন তুলেছে সেই পথশিশু। কে এই শিশু? আর কোথায় কবে ঘটল এই ঘটনা জানতে আগ্রহী নেটিজেনরা। সেই দুই প্রশ্নের জবাব পাওয়ার আগেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে ওই শিশুর আরো একটি ছবি। যেখানে দেখা গেছে, তার চোখে-মুখে মারের জখম, একটি চোখ ফোলা। ওই ছবিটি নিয়ে ফেসবুকে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, লকডাউন প্রসঙ্গে এমন বক্তব্য দিয়ে কোনো একটি পক্ষের রোষানলে পড়েছে শিশুটি। তাই তাকে মারধর করা হয়েছে।
এমন ছবি ও গুঞ্জনের বিষয়টি ফের ভাইরাল হয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়। অনেকেই দুঃখপ্রকাশ করে শিশুটির নির্যাতনকারীদের বিচার দাবি করেন। কেউ বা তার দায়িত্ব নিতে চান। অনেকে ছাত্রলীগ তাকে মেরেছে বলে গুজব ছড়াচ্ছেন। আবার অনেকে বলছেন পুলিশ তাকে মেরেছে। এমন পরিস্থিতিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাংবাদিকদের লাইভে এসে লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন তোলা শিশুটির নাম মো. মারুফ। সে একজন পথশিশু। বাবা-মা সঙ্গে থাকে না সে। রাজধানীর কোটকাচারি, জগন্নাথ বিশ্বিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া পার্ক,সদরঘাটসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ানোই তার কাজ।
কে বা কারা তাকে মেরেছে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে স্থানীয়দের অনেকের দাবি, মারুফের সঙ্গে তার এলাকার পথশিশুদের মারামারিতেই এই জখমের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মারামারিতে জখমের পর রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তি শিশু মারুফের সঙ্গে আদালত এলাকায় একটি সেলফি তোলেন। সেই সেলফি থেকে শিশুটির ছবিটি কেটে নিয়ে পরে ‘মনগড়া’ অভিযোগ তুলে ভাইরাল করা হয় ফেসবুকে। এদিকে রুহুল আমিনের ফেসবুকে একটি পোস্টে মারুফের সঙ্গে তোলা সেই সেলফিটি দেখা গেছে। ছবির নিচে একজন কমেন্ট করে জানতে চান, ছেলেটিকে কোথায় পাওয়া গিয়েছে। তার চোখ এমন ফোলা রয়েছে কেন? জবাবে রুহুল আমিন লেখেন, ‘জজকোর্টের সামনে। চোখে কি হইছে জিজ্ঞেস করি নাই। ফুটপাতে থাকে, নেশাও করে। হয়তো নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে পারে।’
গত বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা মারুফকে খুঁজে বের করেন। তাকে তার জখমের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়। মারুফ জানায়, লকডাউন নিয়ে এমন বক্তব্য দেওয়াতেই তাকে মারা হয়েছে। রাত ১০ টায় কোর্ট প্রাঙ্গনেই তাকে মারা হয়েছে। তবে কে বা কারা তা জানাতে পারেনি মারুফ। মারুফ জানায়, তার বাবা বিক্রমপুরে থাকেন। মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তিনি অন্যত্র সংসার করছেন। মারুফের বিষয়ে সদরঘাটের রিকশাচালক, দোকানদাররা জানিয়েছেন, শিশুটি ছিন্নমূল। পার্ক, ফুটপাতে ঘুমায়। কেউ খাবার দিলে খায়, আবার অনেক সময় চেয়ে নিয়ে খায়। সে মাদকাসক্ত। ডান্ডি নামক এক প্রকার মাদক সেবন করে সে। অনেকের মতে, লকডাউন নয়, হয়তো ডান্ডি সেবনের কারণে পুলিশ তাকে শাসিয়েছে বা মেরেছে। এমনটা এসব পথশিশুদের সঙ্গে হয় প্রায়ই। নেশা বা টাকা-পয়সা নিয়ে বন্ধুদের মধ্যেও প্রায়ই মারামারি হয় মারুফের। এটা ওদের জন্য স্বাভাবিক।
মারুফের বিষয়ে কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ওই শিশু বা ভাইরাল কোনো ঘটনার বিষয়ে এখন পযন্ত জানি না।’সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি ভাইরালের পর আমরা ওর খোঁজ নিয়েছি। কোনো পুলিশ ওর গায়ে হাত তোলেনি।’