আমার কোনো কাগজ লাগে না, মুখে বলেছি এটাই দলিল’

ভোলা প্রতিনিধি ॥ ভোলার সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চর ভেদুরিয়া মৌজার কৃষিজমির মাটি জোর করে ইটভাটায় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রিয়াদ ব্রিকস ইটভাটার মালিক জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। গত সোমবার সকালে ২০-৩০ জন লোক নিয়ে সাব-কাওলা সূত্রে মালিক হালিমা খাতুনের জমিতে ভেকু দিয়ে মাটি কাটতে শুরু করেন তিনি। এর প্রতিবাদ করতে গেলে হালিমা খাতুনের ভাই মনিরকে অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করা হয়। জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আমার কোনো কাগজ লাগে না। আমি মুখে বলেছি এখানে জমি কিনেছি এটাই দলিল।
গত বুধবার সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ইটভাটার চালক স্কেভেটর মেশিন (খননযন্ত্র ভেকু) দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টরে তুলে ইটভাটায় পাঠাচ্ছে। এ সময় প্রতিনিধি ছবি তুলতে দেখে, খননযন্ত্রের চালক মো. মিরাজ পালিয়ে যান। কৃষকরা জানান, এসব জমি তিন ফসলি। ২০১০ সালের ২৪ নভেম্বর জমির মালিক কাজল চৌধুরীর কাছে ৭২ শতাংশ জমি কিনেছেন। ওই জমিতে তার ছেলেরা কৃষিকাজ করে আসছে। সেই জমিতে এখনো কুমড়াগাছ রয়েছে। সেই জমির মাটি জোর করে নিচ্ছেন ইটভাটার মালিক জহিরুল ইসলাম। জমির মালিক তোফাজ্জল হোসেন (৪৮ শতাংশ) ও মো. সবুজ (৪০ শতাংশ)। দেখা যায়, সব মিলিয়ে প্রায় দুই থেকে আড়াই একর জমির মাটি ইটভাটায় নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় একাধিক কৃষকের ভাষ্য মতে, রিয়াদ ব্রিকসের মালিক মো. জহিরুল ইসলাম ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন ২০১৩-এর আইনের সব ধারা লঙ্ঘন করে ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার কাছে কাগজ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি মুখে বলেছি জমি কিনেছি এটাই দলিল। এই মাটি আমি জোর করে কাটছি না। তিনি মাটি কিনেছেন শামীমের কাছ থেকে।
স্থানীয় পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের সেলিম মেম্বারের ছেলে মো. শামীম বলেন, তিনি মেহেন্দীগঞ্জের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। এখান থেকে জমি আমাকে দখল করতে বলেছে, তাই তিনি দখল করে মাটি কাটছেন। যারা জমির মালিকানা দাবি করছে জমির প্রকৃত মালিক তারা নয়।
এদিকে অভিযোগের ভিত্তিতে ভোলা সদর থানার ওসি মো. এনায়েত হোসেনের নির্দেশে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভেকু ড্রাইভার ও ট্রাক ড্রাইভার কাউকে আটক করতে পারেনি। পরে থানায় কাগজপত্র নিয়ে থানায় বসাবসি হলেও জহিরুল ইসলাম ও শামীম কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি। তারা মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সম্পাদকের নির্দেশে এ জমি দখল সূত্রে মালিক দাবি করছেন। তবে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সম্পাদকের সঙ্গে জড়িত কি না তার সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ভোলার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, লকডাউনের কারণে কোনো অভিযোগ পেয়েও অভিযান চালানো যাচ্ছে না। তার পরেও প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। ভোলার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত মো. মিজানুর রহমান বলেন, তিনি সদর উপজেলার সহকারী ভূমি কমিশনার ও তহশিলদারকে ঘটনাস্থলে তদন্তের জন্য বলেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.