সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ কালবৈশাখীর ভয়ানক তান্ডব ও চোখরাঙানি, শিলায় ক্ষয়-ক্ষতি এবং পাহাড়ি ঢলের আগ্রাসনের মুখে পড়তে হয়নি এবার সুনামগঞ্জের হাওর-ভাটির আড়াই লাখ চাষি পরিবারকে। তীব্র গরমে ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানো কষ্টকর হলেও এবার বোরো মৌসুমে ধান তেমন বিনষ্ট হয়নি। বাম্পার ফলন পেয়ে তাই হাসি কৃষকের মুখ। ফসলের ওপর বছরের জমানো স্বপ্ন এবার বাস্তবায়িত হবে এই প্রত্যাশা করছেন তারা।
২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার শতাধিক হাওরে ৯০ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। এই সপ্তাহেই ধান কাটা সারা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। মোসুম ভালো হওয়ায় এবার নির্বিগ্নে টানা ধান কাটতে পেরেছেন কৃষক। রোদের কারণে সেই ধানও সহজে শুকিয়ে গোলায় তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এবারও পানি উন্নয়ন নির্মিত ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফসলরক্ষা বাঁধ কোনো কাজে আসেনি। সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় গড়ে ৯০.৩৩ ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। তবে হাওর ও হাওরবহির্ভূত মিলিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত গড়ে ৭৭.৩০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। এবার মৌসুম অনুকূলে থাকায় দ্রুতগতিতে ধান কাটতে সক্ষম হয়েছেন কৃষক। সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগের মতে জেলার হাওরগুলোতে এ বছর এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে ২৯ এপ্রিল গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৯০.৩৩ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। সরকারি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ধান কাটা হয়েছে শাল্লা উপজেলায়। এ উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ৯৬.৫০ ভাগ। সবচেয়ে কম ধান কাটা হয়েছে জামালগঞ্জ উপজেলায়। এই উপজেলায় হাওরে ধান কাটার গড় হার ৭৯ ভাগ।
কৃষি বিভাগের মতে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় হাওরে ৮৩ ভাগ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৯৫ ভাগ, দোয়ারাবাজারে ৯৪ ভাগ, ছাতকে ৮৫.৯৯ ভাগ, জগন্নাথপুরে ৯৫.৯৯ ভাগ, দিরাইয়ে ৯২.০২ ভাগ, বিশ্বম্ভরপুরে ৯১.৯৯ ভাগ, তাহিরপুরে ৮০ ভাগ এবং ধর্মপাশায় ৯৩.৩৩ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এই সপ্তাহের মধ্যেই হাওরের সম্পূর্ণ ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে মৌসুমে হাওর বহির্ভূত আরো ৫৭ হাজার ৬৬৫ হেক্টর বোরো আবাদ হয়েছিল। হাওর ও হাওরবহির্ভূত মিলিয়ে আবাদ মোট হয়েছিল দুই লাখ ২৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর। হাওরের বাইরে মোট ধান কাটা হয়েছে ৩৯.৮৭ ভাগ। হাওরের বাইরের জমির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধান কাটা হয়েছে জগন্নাথপুর উপজেলায়। এই উপজেলায় ৬৭.০১ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। সবচেয়ে কম মাত্র ১৪ ভাগ ধান কাটা হয়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলায়।
ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইর রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কৃষক আমানুর রাজা চৌধুরী বলেন, আমাদের এলাকায় হাওরের ধান কাটা প্রায় শেষ।
প্রাকৃতিক বৈরিতার মুখে পড়তে হয়নি আমাদের। শ্রমিকসংকটও ছিল না। তাই দ্রুত ধান কাটতে সক্ষম হয়েছেন কৃষক। মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে এবার। তবে ধান কাটতে পেরে এখন হাওরের কৃষক খুশি। শনির হাওরের মধ্য তাহিরপুরের কৃষক মো. আয়ূব আলী বলেন, ‘আমি ১৬ কিয়ার জমিন খরছিলাম। সব খেতের ধান খাটিলিছি। ইবার আমার মতো অন্য গিরস্তরাও খুশি। সবাই ধান তোলতে পারব। এখন বান বৃষ্টি আইলেও আর কোনো সমস্যা অইতো না।’ সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, এ বছর মৌসুম ভালো। জেলার প্রায় আড়াই লাখ চাষি পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে বোরো ধান। গত বৃহস্পতিবার পযন্ত হাওরে ৯০ ভাগের বেশি ধান কাটা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই বোরো ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।