আজ মহান মে দিবস যা অনেক কষ্টমাখা দু:স্পপ্নের স্মৃতিতে অম্লান এবং ত্যাগের অর্জনও বটে। কিন্তু আসলে এখনও কি সেই সু-স্বপ্ন বাস্ততে রূপায়িত হয়েছে? আমরা এই দিবসটিকে ভাষায়, মাধুর্যতাই, কাগজে-কলমে, আইনে-আদালতে এবং মুখে রং মাখিয়ে দিবস হিসেবেই পালন করে থাকি। এই দিবসটির তাৎপর্য এবং গুরুত্ব ও কার্যকারীতা এবং ভাবার্থ ও বাস্তবতার নিরীখে এর যথার্থতা বাস্তবায়ন করি কিনা তা এই সময়ের দাবি ও বিভেকের প্রশ্ন? আজ মহান মে দিবসে এই লিখা লিখতে আমার বিভেক বড় কষ্ট ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমি কি এই দিবসটির তাৎপর্য বুঝেছি এবং আমার কর্মক্ষেত্রে পালন করেছি? যদি না করি তাহলে এখন থেকে কি কবর? এই একই কথা আমাদের সকলেরই জন্য। তবে আজ এই দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য এবং পৃথিবীব্যাপী স্বরণ করে পালন করার জন্য কৃতজ্ঞ। এতেই বা কম কি? তবে এই পালনের মাধ্যমে যেন বাস্তবে দিবসটি নিত্যদিনের সঙ্গি হতে পারে সেইদিকে খেয়াল দিয়ে এগুতে সকলের প্রতি বিনীত আবেদন। তবে এই আবেদন বিভেকের তাড়নায়, সত্যের ও সুন্দরের এবং স্বচ্ছতার এমনকি মানবিকতার জাগরণে। আসুন আমরা এই দিবসটিকে বছরে একদিন নয় বরং ৩৬৫দিনই কাজে-কর্মে ও নিত্যদিনের সঙ্গি হিসেবে অঙ্গা-অঙ্গিভাবে জড়িয়ে সামনে এগোয়। তাহলেই সেইদিনের ত্যাগ সফলতায় আজকের আর্জনে পরিণত হবে।
দায়িত্ব একটি বড় বিষয় এবং বিভেকের মানদন্ডও বটে। দায়িত্ব কি, কাকে বলে এবং কিভাবে পালন করতে হয় তা আমরা সকলেই জানি এবং যুক্তিযুক্তভাবে মানিও বটে। কিন্তু আসলেই কি দায়িত্ব পালিত হচ্ছে অথবা দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী ভুমিকায় পরিণত হয়েছে; যদি না তাহলে আমাদের করণীয় কি? আল্লাহর কালামে বলেছেন মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে যেমন: “আল্লাহ তাঁর সঙ্গে মিল রেখে মানুষ সৃষ্টি করলেন। তাঁরা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখি, পশু বুকে হাটা প্রাণী এবং সমস্ত দুনিয়ার উপর রাজত্ব করুক। পরে আল্লাহ তর মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন। হ্যা তিনি তার মত করেই মানুষ সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করলেন পুরুষ ও স্ত্রী লোক করে। আল্লাহ তাদের আশির্বাদ করে বললেন, তোমরা বংশ বৃদ্ধির ক্ষমতায় পূর্ণ হও, আর নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে দুনিয়া ভরে তোলো এবং দুনিয়াকে নিজেদের শাসনের অধিনে আন। এছাড়া তোমরা সমুদ্রের মাছ, আকাশের পাখি এবং মাটির উপর ঘুরে বেড়ানো প্রত্যেকটি প্রাণীর উপর রাজত্ব কর।” এই ছিল আল্লাহর উদ্দেশ্য কিন্তু সেই উদ্দেশ্যের খানিকটা আমরা পরিপূর্ণতাই পূর্ণ করেছি যাতে ক্ষমতার বহি:প্রকাশ ঘটেছে। এটাও আল্লাহরই কথা- “মানুষ সব রকম পশু, পাখী, বুকে হাঁটা প্রাণী ও সাগরের প্রাণীকে দমন করে রাখতে পারে এবং রেখেছে, কিন্তু কোন মানুষ জিভ্কে দমন করে রাখতে পারে না। ওটা অস্থির ও খারাপ এবং ভয়ঙ্কর বিষে ভরা। এই জিভ্ দিয়ে আমাদের প্রভু আল্লাহর প্রশংসা করি, আবার এই জিভ্ দিয়ে আল্লাহর মত করে গড়া মানুষকে বদদোয়া দিই। আমাদের একই মুখ দিয়ে প্রশংসা আর বদদোয়া বের হয়ে আসে।” পৃথিবীতে আজ কি সব হচ্ছে যা দেখে বোঝা যায় আল্লাহর কালাম দ্বারা ছেকে বের করা যাচ্ছে সবই। আর আল্লাহ আমাদেরকে এই দিক নির্দেশনা দিয়েছেন যেন আমরা পরিবর্তন হই এবং সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে সাফল্যে পরিণত করি। এই কথাগুলো যুক্তিযুক্ত এবং এর থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের প্রয়োজন জ্ঞানের এমনকি আল্লাহর সাহায্য। এই ব্যাপারে আল্লাহর কালামের আশ্রয় নেয়া যায় যেমন “ তোমাদের মধ্যে যদি কারো জ্ঞানের অভাব থাকে তবে সে যেন আল্লাহর কাছে চায়, আর আল্লাহ তাকে তা দেবেন, কারণ তিনি বিরক্ত না হয়ে প্রত্যেককে প্রচুর পরিমানে দান করেন।” হ্যা আল্লাহ এই কঠিন দুর্যোগে তুমি আমাদের জ্ঞান দিয়ে সাহায্য কর, কারন তোমার কাছ থেকে পাওয়া জ্ঞানই আমাদেরকে সঙ্কট কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। যেমন মানুষের জ্ঞান এবং জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ভাব থেকে বের হয়ে আসা সম্পর্কে আল্লাহ কি বলেন – “তোমাদের মধ্যে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান কে? সে তার সৎ জীবন দিয়ে জ্ঞান থেকে বের হয়ে আসা নম্রতা-ভরা কাজ দেখাক। কিন্তু তোমাদের দিল যদি হিংসায় তেতো হয়ে ওঠে এবং স্বার্থপরতায় ভরা থাকে তবে জ্ঞানের গর্ব কোরো না, সত্যকে মিথ্যা বানায়ো না। এই রকম জ্ঞান বেহেস্ত থেকে আসে না, বরং দুনিয়ার, খারাপ ইচ্ছার এবং ভূতদের সঙ্গেই তার সম্বন্ধ; কারণ যেখানে হিংসা ও স্বার্থপরতা থাকে সেখানেই গোলমাল ও সব রকমের অন্যায় থাকে।” হ্যা কথাগুলো বাস্তবে একশতভাগ সত্যে পরিণত হচ্ছে। আর আমাদের এই জ্ঞানেই পৃথিবী আজ বিপর্যন্ত। এখান থেকে উত্তরণের জন্যও আল্লাহ কালামই যথেষ্ট। এখন আমাদের জানতে হবে আল্লাহ থেকে যে জ্ঞান আসে তা কেমন-“ কিন্তু যে জ্ঞান বেহেশত থেকে আসে তা প্রথমত: খাঁটি, তারপর শান্তিপূর্ণ; তাতে থাকে সহ্যগুণ ও নম্রতা; তা মমতা ও সৎ কাজে পূর্ণ, স্থির ও ভন্ডামিশূন্য। যারা শান্তির চেষ্টা করে তারা শান্তিতে বীজ বোনে এবং তার ফল হল সৎ জীবন।” হ্যা আল্লাহর কাছ থেকেই জ্ঞান কামনা করি এবং সেই জ্ঞান দ্বারা জীবন পরিচালনা করে সামনের দিকে এগোই। আশা করি আমরা আল্লাহর ইচ্ছায় এবং জ্ঞানে সামনে অগ্রসর হব এবং সকল অন্ধকার দূর করে সামনে এগিয়ে যাব সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ে।
কথা হল দায়িত্বের বিষয়ে আমরা এখন কতটুকু সচেতন বা এই সচেতনতার ফলই-বা কতটুকু দৃশ্যমান। তবে মাঝে মাঝে দায়িত্বে অবহেলার ফল প্রকাশিত হয় এবং হচ্ছে যা দেখে আগামীর দায়িত্ব পালনে আরো সচেতন হওয়ার ইঙ্গিতই বহন করে। তবে এই সকল ঘটনাপ্রবাহ থেকে আমরা অতীতে এমনকি বর্তমানে শিক্ষা নিয়েছি তা কিন্তু দৃশ্যমান নয়। বিশ্বে আজও পিতা-মাতার দায়িত্বই সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হিসেবে স্বীকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত। এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারলে সমাজে অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম হতো না। এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালিত হলে বিশ্বময় এই দহন-পীড়ন এবং অর্ন্তজ্বালা দৃশ্যমান থাকত না। মিডিয়ার কল্যানে সবই আজ প্রকাশিত এবং প্রচারিত তবে মিডিয়ার কাছ থেকে কোন শিক্ষা না নেয়ার আহবান জানাচ্ছি। এই বিষয়গুলো জেনে শুনে সৃষ্টিকর্তার কাছে মোনাজাতের মাধ্যমে উত্তরণের পথ চেয়ে অগ্রসর হতে বিনীত অনুরোধ রাখছি। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমাজ, প্রশাসন, রাষ্ট্র এই পাঁচে মিলে যদি দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করা হতো তাহলে অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রতিচ্ছবি বারবার দৃশ্যপটে আসত না। পিতা-মাতা হিসেবে যে দায়ীত্ব তা সঠিকভাবে পালন করুন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করুন, সমাজের যে দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করুন, প্রশাসনের যে দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করুন, রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব তাও সঠিকভাবে পালন করুন। সকলেই আল্লাহর কাছে সাহার্য্য চেয়ে আল্লাহর জ্ঞান দিয়ে সংকট মোকাবেলা এবং উত্তরণ ও দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হউন। আজকের ছেলে-মেয়েরাই আগামী দিনের পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ, প্রশাসন ও রাষ্ট্রের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন তাই তাদেরকে এখন থেকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করুন, দেখাশুনা করুন, খোজ-খবরও রাখুন এবং সততা ও ভালবাসায় পূর্ণতা দিয়ে আন্তরিকতার সহিত মানবিকতাবোধ এবং বিভেকবোধ জাগ্রত করে ভবিষ্যতের কান্ডারী হিসেবে গড়ে তুলুন। সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সু সম্পর্ক এবং সৃষ্টিকর্তার জ্ঞানে পুরিপূর্ণ করে দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ করুন। সম্পূর্ণরুপে ভরসা ও নির্ভরতা তৈরী না হওয়া পর্যন্ত সচেতনতা অব্যাহত রেখে খোজ-খবর রেখে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে অনাকাঙ্খিত ঘটনা মোকাবেলায় অগ্রসর হউন। সৃষ্টিকর্তার জ্ঞানে পূর্ণতা অর্জনে সহায়তা করুন। যাতে শয়তানের কুমন্ত্রনায় প্রলোভিত না হয়ে বরং খোদায়ী জ্ঞানে সকল কিছু মোকাবিলা করে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ, প্রশাসন, রাষ্ট্র বিনির্মানে আল্লাহর জ্ঞানের স্বাক্ষর রেখে পৃথিবীতে শান্তি, স্থিাতিশীলতা, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা ও মৌলিক চাহিদারা নির্ভরযোগ্য যোগানে পরিপূর্ণ হয়ে আগামীর কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত থাকতে পারে। বর্তমানে যা দৃশ্যমান তা আর দেখতে ও শুনতে চাইনা বরং অদৃশ্য আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলনই দেখতে কামনা করি।
তাই পরিশেষে বলতে চাই আমাদের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আমাদের নীতি ও উদ্দেশ্য যেন আল্লাহর কালামের কথানুযায়ী হয় “ তোমরা যাই করনা কেন তা মানুষের জন্য নয় বরং আল্লাহর জন্য করছ বলে মন প্রাণ দিয়ে করো, কারণ তোমরাতো জান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য যা রেখেছেন তা তোমরা পুরস্কার হিসেবে তাঁরই কাছ থেকে পাবে।” শেষ কথা হলো সবচেয়ে বড় হুকুম আজকের মে দিবস এবং দায়িত্ব নিয়ে যা আল্লাহই আমাদের তাঁর পাক কামালে বলেছেন“ আমাদের মাবুদ আল্লাহ এক, তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত দিল, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত মন এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমাদের মাবুদ আল্লাহকে মহব্বত করবে। তারপরের দরকারী হুকুম হল এই, তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত মহব্বত করবে।” এই দুটো হুকুমের চেয়ে বড় হুকুম আর কিছুই নেই। হ্যা আমরা এই বিষয়গুলো আরো জানব এবং খোদা তায়ালার সাহায্য নিয়ে প্রত্যেকে নিজ নিজ জীবনে প্রয়োগ করে সামনে অগ্রসর হব এই প্রত্যাশায় আগামীর কল্যাণে নতুন কিছু নিয়ে আসার অপেক্ষায়।