কথা দিয়ে কথা রাখা

কথা দিয়ে কথা রাখা যেন রেওয়াজে পরিণত হয় এই কামনা দিয়েই আজকের লিখার অবতারনা করলাম। ওয়াদা আর কথাদেয়া কিন্তু একই অর্থ বা ভাবার্থ প্রকাশ করে। ওয়াদা বরখেলাপকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। যদি আল্লাহতে ঈমান ও বিশ্বাস জাগ্রত এবং চর্চায় অবিরত থাকে তাহলেই কথাদিয়ে কথা রাখা যায়। আল্লাহ বলেন, “তোমার মুখের কথার হ্যা যেন হ্যা—ই হয় আর না যেন না—ই হয়।” হ্যা আমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে জীবনের সকল ক্ষেত্রে এই বাক্যের চর্চা অব্যাহত রাখি। তবে এই করোনা সংস্কৃতিতেও কথা দিয়ে কথা রাখার রেওয়াজ চর্চায় আনয়ন করা যায় নাই কারন করোনাও আল্লার প্রতি ভয় এবং ভালবাসা ও মহব্বতের জাগরণ সৃষ্টি করতে পারে নাই। তবে করোনা ভীতির জাগরণ ঠিকই বিরাজমান রয়েছে। যেখানে শতকরা ১ অথবা ২ভাগ মানুষ মারা যায় এবং বাকি সবাই সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে সেখানে করোনাকে ভয় করে বিভিন্নজন বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে কেউ কেউ আবার করোনাকে পুজি করে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। তবে এই ক্ষেত্রে মিডিয়ার কল্লানে সবই এখন প্রকাশিত হচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে হবে।
কথায় আছে রাজনীতিবিদরা কথা দিয়ে কথা রাখেন না। এই কথাটি বহুলাংশে সত্যে পরিণত হয়েছে। তবে এই বিষয়ে ভোক্তভোগীরাই বেশী জানে তবে আম জনতাও এখন এইসব জেনে গেছে এবং যাচ্ছে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে সততার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও বহমান রয়েছে। যার কারণে রাজনীতি আজও বেচেঁ আছে। রাজনীতির যে নীতি ও উদ্ধেশ্য তা বিলীন হতে চলেছে তবে তা পুনরুদ্ধারে কেউ কেউ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। খোদা তায়ালা হয়ত প্রতিনিয়তই সাহায্য করে যাচ্ছে। রাজনীতিবিদরাই কিন্তু মন্ত্রী, এমপি হয় এবং দেশ পরিচালনা করে থাকে। আজ একটি কথা বলতে হচ্ছে যে, চলমান সময়ে রোজিনা কাহিনীর ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদ এবং মন্ত্রী, এমপিদের ভাষ্য একই ছকের চকচক করা জনমতের প্রতিফলন এবং বাস্ততে যা সম্পূর্ণ উল্টো। আমাদের মন্ত্রীরা যে ভাষন বা বক্তব্য জনসমক্ষে এমনকি মিডিয়ায় দিয়ে যাচ্ছে সেই বক্তব্যের প্রতিফলন কোথায়? বলতে গেলে জেলে বসে জীবন কাটানোতো সম্পূর্ণ উল্টো; যেমন বক্তব্যের উল্টোপিঠে কিন্তু আমলাতন্ত্রের খড়গ চাপানো হচ্ছে। যেই খড়গের দৌঁড়গোড়াই সরকার এবং জনগণ মুখুমোখি হয়ে আছে। কারন একটাই তা হল দুর্নিতী। এই দুর্নীতি রুখতে সরকার বদ্ধ পরিকর আর সেই স্রোতে জনগন ও সাংবাদিকগণ। তবে এই স্রোতই আজ জেল খানায় বন্দি হিসেবে ঘোমড়ে ঘোমড়ে কাতরাচ্ছে। আর তাই যদি হয় তাহলে কেন আশারবানী শোনানে হচ্ছে এমনকি জনমনের আখাঙ্খা ও অভিপ্রায়ের আলোকে কথা বলা হচ্ছে? কারন একটাই আন্তরিকতার আলোকে বা ছুতোয় জনঅসন্তোস সামাল দেয়া। যা জনগন বুঝে এবং এইদেখে আরো অবিশ্বাস এবং অসন্তোষ’র গভীরতা প্রসারিত হবে।
জনগনের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে সেই জনগনকেই অবজ্ঞা করা এমনকি আইনের ভয় দেখিয়ে জেলখানায় পাঠানো সহজ কিন্তু খোদা এইসব সইবেন না। প্রমানতো খোদা তায়ালা ফেরাউন বা হিটলার দ্বারা পৃথিবীতে বিরাজমান রেখেছেন। ধরুন রোজিনারা অন্যায় করেছে, ঠিক আছে যেভাবে ঘটনা প্রবাহমান হয়েছে; সেভাবে বিচারের আওতায় না নিয়ে আরো সংযত হয়ে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এই বিষয়টি মোকাবেলা করা যেত। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এবং দিবালোকের মত স্পষ্ট হচ্ছে যে, ঐ সচিবদ্বয় এবং তাদের সুরক্ষাকারী সম্মানীত মন্ত্রীমহোদয় অন্যায়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত অথবা এর দায় তিনি এড়াতে পাড়েন না। যদিও বলতে আমার কষ্ট হচ্ছে কারণ আমি এই সরকারেরই অবিছেদ্ধ অংশ। তবে অনুমান নির্ভর কথা বলার দিন শেষ এবং প্রমাননির্ভর কথা বা স্বাক্ষ্য প্রমানের সময় এখন। তবে সরকার জনগণের কল্যানে সবই করে যাচ্ছে এবং যাবে তবে ঐ সকল দুর্নীতিপরায়নদের প্রকাশ্যে শাস্তির আওতায় এনে জনতার আস্থায় আরো গভীরতা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে এটাই এখন আমার ঐকান্তিক কামনা। তবে আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচারের বানী শোনানো বা সহায়তার আশ্বাস সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। যদি সহায়তাই করতে চান তাহলে কেন ঐ মহিলাকে ৫দিন বিনা বিচারে কারাবন্দি থাকতে হবে? যদি কারামুক্ত হয়ে বিচারের আওতায় থেকে সহযোগীতা এবং ন্যায়বিচারের আশ্বাস পাওয়া যেত তাহলে এইসকল বানি বা বুলিকে বিশ্বাস এবং আস্থায় নিয়ে জনমত বৃদ্ধিলাভে সহায়তা হতো। বরং এখন বুমেরাং বা হিতে বিপরীতই হচেছ বলেই ধরে নেয়া যায়।
সাংবাদিকতায় প্রকাশিত সংবাদ প্রকাশের দায় কার? যে সংবাদ আহরণ করেন/ যে সংবাদ পরিবেশন করেন/ যে সংবাদ সাজিয়ে লিখেন/ যে অনুসন্ধানি সংবাদের সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন নাকি সম্পাদকিয় প্যানেলে যারা কাজ করেন তাদের? যেমন সহ সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক বা জনাব সম্পাদক এই তিনের কি কোন ভূমিকা নেই?। যদি তাই হয় তাহলে রোজিনাকে হেনস্থা বা জেলে না পাঠিয়ে ঐ তিনকেই পাঠানো যেত যেন ভবিষ্যতে ঐ তিনে মিলে কোন ইতি অথবা নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করতে না পারেন। আজকের প্রথম আলো পত্রিকায় আমেরীকা প্রবাসী জনৈক অধ্যাপক এই বিষয়ে বিষদ আলোচনা করে দেখিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য স্পষ্ট যে অনেক ঝড় ঝাপ্টা অতিক্রম করে আজকের অবস্থানে আসা হয়েছে তাই কোনভাবেই এর ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। তিনি এও বলেছেন যে, দেশের ক্ষতি হয় এমন পরামর্শ সরকার গ্রহন করবে না; তাহলে ঐ মন্ত্রণালয়ের ভয় কোথায়? তারা নিজেদের অর্জিত দুর্ণাম ঘুচাতে গিয়ে সরকারের কাঁধে বিশাল এক দায় চাপিয়ে দিয়ে সরকার বনাম জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রাথমিক চেষ্টায় সফল হয়েছেন বটে। আমার পরামর্শ সময়ের স্রোতে এবং প্রতিকুলতার বেড়াজালে আর না জড়ায়ে বরং নম্রতা ও সৃজনশীল জ্ঞান বুদ্ধির চর্চায় এই জটিল সমস্যার সমাধান করা জরুরী। এই ক্ষেত্রে আমাদের মন্ত্রী এমপিদের অতিরঞ্জিত কথা না বলাও গুরুত্ব বহন করে। কারণ জল কোনদিকে গড়ায় এখনও স্পষ্ট নয় তাই ধৈয্য এবং নম্রতাই এই উদ্বুত্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সহায়তা করবে বৈকি। আমি আশা করব কথা দিয়ে কথা রাখার রেওয়াজ সচল হবে এবং রাজনীতিবিদদের বেলায় বহুল প্রচলিত বদনাম ঘোচানোর মোক্ষম সুযোগ হিসেবে এই ঘটানাটি দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে।
টিকা বাণিজ্যের যে মহড়া উন্মোচিত হয়েছে সেখানেও কথা দিয়ে কথা না রাখার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে আর সেইখানে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি। যাতে করে আগামী দিনে কোন চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক এর ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজে লাগতে পারে। বাংলা এবং বাঙ্গালী পেড়েছে এবং পেড়ে দেখাবে এটাই আমার বিশ্বাস। অতিতের সকল গ্লানি এবং অপবাদ দূরীভূত হবে এবং নতুন দিনের নতুন সূর্য উদিত হবে নিষ্কুলুষ এবং নিঝঞ্জাল ও নির্মোহ এবং ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ পৃথিবী নামক বেহেস্ত হিসেবে। এইখানেই বসবাস করবে সৃষ্টিকর্তা এবং তাঁর সৃষ্টি সকল কিছু। এইখানেই রেখেযাব আমাদের আগামী প্রজন্মের পর প্রজন্ম। যারা মৌলিক চাহিদার যোগানে একে অন্যের পরিপূরক হয়ে কাজ করবে। আমার এবং আমাদের আত্মার পরিতৃপ্তি তখন পরিপূর্ণ হবে। এই কামনা রেখেই আগামীর নতুল আশায় বুক বেধে অপেক্ষায় প্রহর গুনা শুরু করলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published.