ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের লাশ গত সোমবার (২৪ মে) ভোররাত সাড়ে চারটায় তার জন্মভ’মি খাড়েরা গ্রামে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। হাফিজুরের বড় ভাই হাবিবুর রহমান ছাড়া অন্য কেউ সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। বাবা মুজিবুর রহমান পুত্রশোকে মুহ্যমান। দুপুর ১টা ৩০মিনিট নাগাদ কসবা থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার অদূরে হাফিজুরের পৈত্রিক বাড়ির উঠুনে ২০/২২ জন নারী পুরুষ বসে কথা বলছেন। সকলের চেহারায় বিষাদের ছাঁপ।
এতো অল্প বয়সে এই ছেলেটির এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেননা। গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মীর হেলাল উদ্দিন জানান;ছেলেটি আমাদের গ্রামের রতœ ছিলো। অসম্ভব মেধাবী, অমায়িক, শান্ত ও ভদ্র ছিলো। তিনি বলেন, আমরা একজন প্রতিভাবান সন্তানকে হারিয়েছি। হাফিজুরের বড় ভাই হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, শাহবাগ থানার ওসি গত রবিবার প্রেসব্রিফিংয়ে বলেছেন হাফিজ আত্মহত্যা করেছেন এতে তারা হতাশ হয়েছেন। ওসি এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন না করে এভাবে প্রেস ব্রিফিং করা আদৌ সমিচিন কিনা তিনি প্রশ্ন রাখেন। এ ছাড়া কিছু সংখ্যক অনলাইন পোর্টালে তথ্যনির্ভর সংবাদ না দিয়ে প্রচারিত হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। হাবিব আরো বলেন; হাফিজ রক্তাক্ত হয়ে পুলিশের সাথে একটি ডাবের দোকানে ঢোকা এবং পরে রিক্সায় উঠিয়ে কোথাও দেয়ার পৃথক পৃথক যে দুটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এতে অনুমান করা যায় হাফিজুরের সঠিক চিকিৎসা হলে সে বেঁচে থাকতো। মামলা করবেন কিনা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন; আমরা এখনো পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। হাফিজুুরের বাবা মুজিবুর রহমান ও মা সামছুন্নাহার সাংবাদিকদের সংগে কথা বলবেননা বলে হাবিবুর রহমান জানান। জানা যায়; হাবিবুর ও হাফিজুর এরা দুভাই ও একবোন। একমাত্র বোন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজে অনার্স পড়ছেন। মা ও বোন দুজনই পর্দানশীন তাই ক্যমেরার সামনে কেউ আসবেননা।
বাংলাদেশ মুকাভিনয় ফেডারেশনভ’ক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুকাভিনয় সংগঠন মাইম এ্যাকশন’র সাধারন সম্পাদক ছিলেন হাফিজুর। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৫/১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। একজন প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে সে ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে অতি পরিচিত মুখ। হাবিবুর রহমান জানান; পরিবারের সদস্যরা তার এসমস্ত কাজ পছন্দ করতোনা। তবে কেউ বাধাও দেয়নি। বাড়ির লোকজন জানান; ঈদুল ফিতরের পরদিন ১৫ মে হাফিজুর রহমান বন্ধুদের সংগে দেখা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যায়। এরপর থেকে তাকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, গত শুক্রবার ২১ মে তার মা সামছুন্নাহার কসাব থানায় জিডি দায়ের করেন। জিডি নং-১২৮৩। উল্লেখ্য হাফিজুর রহমান আজিমপুর এলাকায় একটি মেসে থেকে পড়াশুনা করতো।
একই মেসের সদস্য বন্ধু বাপ্পীর নিকট তার দুটো মোবাইল সেট আছে বলে শাহবাগ থানা ওসি হাফিজুরের পরিবারকে নিশ্চিত করেন। জানা যায়,তারা চার বন্ধু মিলিতভাবে ঈদের পরদিন বান্দরবনে যাওয়ার কথা ছিলো। অপর দুই বন্ধুরা হলো ঢাকা কলেজে অধ্যয়নরত রাফসান ও অন্তুু। তবে রাফজান ও অন্তুুর মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। কোন বন্ধুই ইচ্ছে করে নিহতের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখছেনা। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে কসবা সচেতন নাগরিক সমাজ। অবিলম্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্তটিম গঠন করে এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য আগামীকাল ২৬ মে সকাল ১১টায় বিক্ষুব্দ নাগরিক সমাজ কসবা উপজেলা সদরের স্বাধীনতা চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছেন। অপরদিকে ২৬ মে দুপুরে নিহত হাফিজুরের কুলখানী খাড়েরা গ্রামের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে বলে তার পরিবার থেকে জানানো হয়েছে।