স্পোর্টস ডেক্স ॥ বাংলাদেশের পুরো ম্যাচটাই ডিফেন্ডারদের অসম্ভব সম্ভবের গল্প। তাঁদের প্রতিরোধে পুরো প্রথমার্ধে ম্যাচে ছিল, আবার পিছিয়ে পড়ার পর রিয়াদুল-তপুর যুগলবন্দিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১-১ গোলের নাটকীয় ড্র। ছয় ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে দুই পয়েন্ট।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের পুরো ম্যাচেই ডিফেন্ডারদের কৃতিত্ব। এ এমন এক দল যে ফরোয়ার্ড থাকলেও গোল হয় না, আবার না রাখলেও কেমন দেখায়। তাই রীতি মেনে ফরোয়ার্ডরা খেলেন এবং তাঁদের ব্যর্থতাও ঢাকতে হয় ডিফেন্ডারদের। ৮৪ মিনিটে তপু বর্মণের অমন এক গোল বাংলাদেশের যেকোনো ফরোয়ার্ডের জন্য শিক্ষণীয়। দুই প্রহরীকে পরাস্ত করে এই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার দুর্দান্ত এক গোল করে অবিশ্বাস্য এক ড্র উপহার দিয়েছেন।
প্রথমার্ধ পর্যন্ত লড়াইয়ে ছিলেন তপু-রিয়াদরা। আফগানিস্তানের আক্রমণাত্মক ফুটবলের বিপক্ষে ভালো লড়েছিল বাংলাদেশ। এই লড়াইয়ের মূল প্রেরণা রক্ষণভাগ। তপু-রিয়াদ-রহমত-তারিকদের প্রতিরোধে বারবার হতাশ হয়েছেন আফগান ফরোয়ার্ডরা। ডিফেন্ডাররা এতটুকু ভুল করেননি, তাই সুরক্ষিত ছিল গোলপোস্টও। অভিষেকে রাইটব্যাক পজিশনে চমৎকার খেলেছেন ফিনল্যান্ডপ্রবাসী তারিক কাজী। ডিফেন্ডারদের প্রতিরোধের মধ্যেও দুইবার অবশ্য কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে গোলরক্ষক আনিসুর রহমানকে।
১৯ মিনিটে আমির শরিফির শট এক ডিফেন্ডারের পায়ে লাগলে গোলরক্ষক বিভ্রান্ত হলেও শেষ মুহূর্তে দুর্দান্ত সেভ করেন। ৩৩ মিনিটে ফরশাদ নুরের শটে আরেকটি শট সেভ করে দলকে ম্যাচে রেখেছিলেন। আফগান আধিপত্যের মধ্যেও কাউন্টারে চোখে পড়েছে মতিন মিয়াকে। বসুন্ধরা কিংসের এই ফরোয়ার্ড ২৫ মিনিটে শেষ আফগান ডিফেন্ডারের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে সুযোগ তৈরি করেও শেষ মুহূর্তে ব্যালান্স হারিয়েছেন। তার আগে ১৬ মিনিটে দেখার মতো আরেকটি মুভ, মাশুক অফসাইড ট্র্যাপ ভেঙে পোস্টের সামনে দারুণ ঠেললেও ছিল না কোনো সতীর্থ। এভাবে গোলহীন প্রথমার্ধ শেষ হলেও কোনো আক্ষেপ নেই বাংলাদেশের।
তবে বিরতির পর বদলে যায় পুরো খেলা। এতক্ষণ যে ডিফেন্ডারদের গল্পে ম্যাচে থাকে লাল-সবুজের দল, সেই রক্ষণভাগেই চিড় ধরে মিনিটে। ডান দিক দিয়ে ফারশাদ নুর বারবার রহমতের পরীক্ষা নিয়েছিলেন প্রথমার্ধে, দুইবার পরাস্ত হলেও বিপদ হয়নি। এবার আহমেদ নাজেমে তিনি পরাস্ত এবং গোলের সূত্রপাত। নাজেমের কাটব্যাকে আমির শরিফি বল জালে পৌঁছে দিলে হতাশা নেমে আসে লাল-সবুজ শিবিরে। ডাগআউটে জেমি ডের চেহারায় সেই অভিব্যক্তি স্পষ্ট, মুহূর্তের ভুলে এতক্ষণের সফল প্রতিরোধ ভেঙে খান খান হয়ে গেল। সেই হতাশা ঝেরে এবার জেগে ওঠে গল্প রচনা করতে পাঁচজন বদলিকে মাঠে নামান কোচ।
‘ফ্রেশ লেগে’র প্রতিফলন দেখা যায় মাঠে। আফগানরা গোলের লিড বাড়ানোর বদলে এক গোল ধরে রাখতে পেছায় এবং সেই সুযোগে আফগান সীমান্তে হানা দেয় লাল-সবুজের দল। তারা জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি হয়। ৮০ মিনিটে দুই বদলিতে দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি হয় আবদুল্লাহর সামনে। মাশুকের বদলি মানিকের লং বলে দূরের পোস্টে বল আয়ত্তে নিয়ে ফাঁকায় দাঁড়ানো আবদুলল্লাহ পোস্টে শট নিলেও আফগান গোলরক্ষকের দারুণ সেভে লিড ধরে রাখে তারা।
এর পরও বাংলাদেশ হাল ছাড়েনি। নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা আফগান রক্ষণে। তখন আর বাংলাদেশের রক্ষণ বলে কিছু ছিল না, সবাই গোলের খোঁজে পেরিয়ে গেছেন আফগান সীমান্ত। ৮৪ মিনিটে ডান দিক থেকে উড়ে আসা আরেকটি লং বল রিয়াদুল হাসান হেড করে ফেলেন বক্সের মাঝখানে। সেখানে দাঁড়ানো তপু বর্মণকে দুজন প্রহরায় রেখেও থামাতে পারেননি। বলটা বুকের টোকায় নামিয়ে এই স্টপার ডান পায়ের গড়ানো শটে বল আফগানিস্তানের জালে পাঠিয়ে অবিশ্বাস্য এক মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে। যে আফগান দলটি ২০ মাস আগের চেয়েও ঢের বেশি প্রস্তুত হয়ে এসেছে, তাদের জালে বল পাঠিয়ে পয়েন্টের ক্ষুধা মিটিয়েছে বাংলাদেশ!