কসবায় মামলা প্রত্যাহার না করায় হিন্দু পরিবারের উপর হামলা

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ মেয়ে অপহরণের মামলা কোর্ট থেকে প্রত্যাহার না করায় প্রদীপ দেবনাথ (৪৩) কে পিটিয়েছে আসামীরা। তাঁর স্ত্রী রতœা দেবনাথ (৩৯)ও একমাত্র পুত্র পীযুষ দেবনাথ (১২)ও রক্ষা পায়নি। গত রবিবার (২০ জুন) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার নয়নপুর গ্রামে রাত আটটায় এঘটনাটি ঘটে। এঘটনায় এলাকায় ভয়ংকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পরে ওই রাতেই প্রদীপ দেবনাথসহ পরিবারের তিন সদস্য কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে এব্যাপারে থানায় অভিযোগ করে। তবে পুলিশ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ ও স্থানীয়সুত্রে জানা যায় গত ২০২০ সালের ১০ মার্চ পার্শ্ববর্তী বাড়ির জয়নাল মিয়ার পুত্র মেহেদী হাসান প্রদীপ দেবনাথের একমাত্র কণ্যা শ্রাবন্তী রানীকে অপহরন করে। এবিষয়ে থানায় মামলা করলে প্রায় দুইমাস পর শ্রাবন্তীকে পুলিশ উদ্ধার করে। এমতাবস্থায় শ্রাবন্তীর এস.এস.সির রেজাল্ট বের হলে শ্রাবন্তীর মা বাবা তাকে টাঙ্গাইল ভারতেশ্বরি হোমসে ভর্তি করে। করোনায় কলেজ বন্ধ থাকায় শ্রাবন্তীকে কুমিল্লা আত্মীয়ের বাড়িতে রাখা হয়। সেখান থেকে পুনরায় শ্রাবন্তীকে অপহরন করে আসামীরা।
এবিষয়ে সালিশে নেতৃত্বদানকারী উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভুইয়া জীবনের সংগে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, মেয়েটিকে মেহেদিদের বাড়িতে আনা হলে আমরা তার মায়ের কাছে দিয়ে দিতে চেষ্ট্রা করে ব্যর্থ হই। ফলে পরে স্থানীয়ভাবে আমরা মিমাংসা করে মেয়ের মা বাবাকে জিতিয়ে দিই।
এবিষয়ে প্রদীপ দেবনাথ বলেন, মুসলমান সম্প্রদায়ের বখাটে ছেলে ও মাদক ব্যবসায়ী পরিবার আমার ঔরশজাত একমাত্র মেয়েকে অপহরন করে বশ করেছে এতে জেতার কি হলো ? আমারতো সবই শেষ। সালিশে যে সকল শর্ত ও সিদ্ধান্ত ছিলো কোনো কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি বরং শালিসে আমাদের স্বাক্ষর নিয়ে নিয়েছে। শুনেছি ওইদিন মামলাটি কোর্টে একতরফা শেষ করে আমাকে ও আমার পরিবারের উপর হামলা করেছে। ঈশ্বর সবই দেখেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অধিবাসীরা জানান প্রদীপ দেবনাথ ও তার পরিবারের উপর হামলাকারী; জয়নাল, হুমায়ুন,স্বপন,জামাল,বাছির এরা সকলেই মাদক চোরাকারবারী ও ভয়ংকর প্রকৃতির লোক। তাদের সকলেই একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং তাদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে অগ্নিসংযোগ,রেল লাইন উপড়ানো ও গাছকাটার মামলা ছিলো।
নয়নপুর বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান জানান, প্রদীপ ও তার পরিবারের উপর হামলা করা আদৌ ঠিক হয়নি। শুনেছি আসামীরা সাদেক সরকারের কাছে মিমাংসার সব কিছু দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তিনি তা বাস্তবায়ন না করে ঝুলিয়ে রেখেছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক সরকারের সংগে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিচারের টাকা আমার কাছে । আসামীরা টাকা ফেরত চাইলে আমার কাছে চাইবে। প্রদীপ ও তাঁর পরিবারকে মারধোর করা সঠিক হয়নি।
শ্রাবন্তীর অপহরনকারী মেহেদী হাসানের বাবা জয়নাল আবেদিন জানান আমরা প্রদীপ দেবনাথকে মারধোর করিনি। জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েছিলাম। প্রদীপ দেবনাথের স্ত্রী রতœা দেবনাথ জানান,আমি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মহোদয়কে বলেছি ওদের অত্যাচারে আমরা ওখানে বাস করতে পারবো না। কসবা পৌরসভায় ঊনার নিকট এক টুকরো ভূমি ভিক্ষা চেয়েছি। নয়নপুরে বসবাস করলে আমাদের মেরে ফেলবে। চোরাকারাবারীরা আমার স্বামীকে বার বার নির্যাতন ও হয়রানী করছে।
কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ আলমগীর ভ’ইয়া বলেন; প্রদিপ দেবনাথের একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের আলোকে তদন্ত চলমান রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.