নাটোর আধুনিক হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপে বিপর্যস্ত চিকিৎসা সেবা

নাটোর প্রতিনিধি ॥ বর্তমানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। সংক্রমণের হার ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বমুখির প্রেক্ষিতে হাসপাতালে ব্যাপক চাপ বেড়েছে রোগীর। রোগীর চাপ এতই বেশি যে রোগীদের মেঝেতে রাখার মতো জায়গাও নেই। এতে অনেক গুরুতর অসুস্থ রোগীও এখানে ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।
নাটোর সদর হাসপাতালে ৫০ শয্যার বিপরীতে গত শুক্রবার (৫ জুলাই) রোগী ভর্তি রয়েছেন ৯৩ জন। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে স্বাস্থ্যসেবার মান। বর্তমান পরিস্থিতি এমনটাই যেটাকে শুধু অসম্ভবই নয় এক প্রকারের সংকটময় মুহূর্ত বলে মনে করছেন সচেতন সমাজ। এমত অবস্থায় চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে শয্যা ও অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ বাড়ানোর দাবি নাটোর বাসীর। নাটোর সদর হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের এই ঠাসাঠাসিতে রোগী সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে রোগী আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন এমনটা মনে করছেন অনেক রোগীর আত্মীয়রা। এদিকে জেলায় বর্তমানে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। হাসপাতালে রোগীর চাপ এতই বেশি যে মেঝেতেও রাখার মত জায়গা নেই। জেলার প্রধান এই হাসপাতালেই ভরসা নাটোর জেলার রোগীদের। এছাড়া সংকটাপন্ন রোগীদেরকে এখান থেকে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপরেও প্রায় প্রতিদিনই এই নাটোর সদর হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড থেকে দুই থেকে একজন করে রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন। এ লক্ষণকে কোনোভাবেই ভালো মনে করছেন না সচেতন সমাজ।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সদর হাসপাতালে কয়েক দিন ধরে করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে। তবে শয্যা সংকটের কারণে সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না। করোনার উপসর্গ নিয়ে এলে নমুনা নিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন এমন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। হাসপাতালের নির্ধারিত ৫০টি শয্যা অনেক আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে। সদর হাসপাতালে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৯৩ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলেন। এ অবস্থায় নতুন রোগীদের হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থাও নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর আত্মীয় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা শুনেছিলাম নাটোরে বড় বড় কোম্পানির হাসপাতাল রয়েছে। করোনার এই সময় তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। তাদের হাসপাতালের সকল ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এই সংকটময় মুহূর্তে তারা কোথায়। যখন প্রতিদিনই মানুষ মৃত্যুবরণ করছে তখন নাটোরের মধ্যে একটি জেলায় কোন আইসিইউ বেড নেই। রোগীদের রাখবার জায়গা নেই। কোন দেশে বসবাস করছি আমরা।
নাটোর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালে রোগীদের চাপ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে বেড সংকট থাকায় সকল রোগীকেই ভর্তি করা যাচ্ছে না। শুধুমাত্র অক্সিজেন প্রয়োজন শ্বাসকষ্ট রয়েছে এমন রোগীকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। এদিকে বেশি গুরুতর হলে তাকে রাজশাহী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার রায় বলেন, সর্বত্রই করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে গ্রামে রোগীর সংখ্যা বেশি বাড়ছে। যেখান থেকেই আসুক তাকে আমরা জরুরি মনে করলে ভর্তি না নিয়ে পারছি না। নাটোর জেলায় এক দিনে গত ২৪ ঘণ্টায় নাটোরে ১৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ৭৮ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন। পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার ৪২ দশমিক ১৬ শতাংশ। জেলায় মোট মৃত্যু ৫৭ জন। মোট আক্রান্ত ৪০৮৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৮০৮ জন। সদর হাসপাতালে করেনাসহ উপসর্গ নিয়ে ৯১ জন ভর্তি রয়েছেন।
নাটোরের সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান জানান, আমরা সর্বত্মকভাবে চেষ্টা করছি করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে। আমাদের সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিচ্ছি আমরা। যে সমস্যাগুলো রয়েছে তাই আমি প্রতিনিয়ত ওপরে কথা বলছি। কিন্তু কবে নাগাদ হাসপাতালে সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে পারছি না বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.