করোনা নিয়ে অনুভুতি

করোনা নিয়ে অনুভুতি প্রকাশের জন্য অনেক অপেক্ষা ছিল এবং করোনাকে কাছে থেকে দেখে এই অনুুভুতি প্রকাশে অভিজ্ঞতা পেয়েছি। অনেকেই অনেক কিছু বলেছেন বা বলে যাচ্ছেন কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে আমি নিজে আজ কিছু বলতে চাই যা আমার জীবনে এবং পরিবারের ও প্রীয়জনদের জীবনে ঘটে যাওয়া থেকে সঞ্চিত বা অর্জিত। আমাদের পরিবারে করোনার আক্রমন হয়েছে কয়েকবার এবং ঐ আক্রমন থেকে ঘরোয়া চিকিৎসা এবং ডাক্তারী চিকিৎসা দুটোই ব্যবহার করে আমরা সুস্থ্য হয়েছি। তবে অনেক আত্মীয়স্বজন আবার করোনায় মারাও গেছেন। তবে কাছের আত্মীয় বয়স আনুমানিক ৭৫ যিনি ডায়াবেটিস, বাইপাস সার্জারী, হার্ট, পেসমেকারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের রোগী হিসেবে চিকিৎসাধীন। এই সময়ে করোনা ওনার উপর আঘাত হানে কিন্তু কোন ক্ষতি সাধিত করতে পারেনি। সামান্য অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে মাত্র। আল্লাহ ওনাকে সুস্থ্য করে তুলেছেন।
করোনা কালে কোন ভয় বা আতঙ্ক অথবা শংকায় ছিলাম না তবে ধীরে ধীরে শংকার বা আতংকের কারণে পরিণত হয়েছি মাত্র। তবে পরিবেশ, ডাক্তার এবং মিডিয়ার কল্যাণে ঐ আতঙ্ক ঘনীভূত হয়েছিল মাত্র। যখন কোন মানুষ আতঙ্কে বা শংকায় থাকে তখন তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। যেটা আমার নিজস্ব; বাস্তব উপলব্দি বা অভিজ্ঞতা থেকেই বলা। এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল যে, ছেলে স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজন থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে নেয়ার মানষিকতা…। যেন কাছে গেলেই করোনা আক্রান্ত হবো বা ওর হবে তার হবে ভাব। সবই কাটিয়ে উঠার জন্য আল্লাহর সাহায্যই যথেষ্ঠ হিসেবে কাজ করেছে। আমরা পরিবারের সকলের সেবা সকলেই করেছি এবং সুস্থ্য হয়ে উঠেছি এমনকি অন্যদেরকে অভয়ও দিয়েছি। কঠিন পরিস্থিতি উৎরানোর জন্য আমার এই লিখা। ভয়ের কোন কারন নেই আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করবেন এবং একে অপরকে সেবা সুশ্রসা করলে আল্লাহ বরকতও দিবেন। দয়া করে ভয় পাবেন না এবং দুরে ঠেলে দিবেন না। এই দুই প্রকৃতি (ভয় এবং দুরে ঠেলে দেওয়া) আল্লাহ পছন্দ করেন না।
একটি ব্যতিক্রম ঘটনা বলব এখন; যা সদ্য ঘটে গেছে। আমার শ^শুর রুটিন মাফিক ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকা এসেছে; বা আমি নিজেই গিয়ে বাসা থেকে নিয়ে এসেছি। তারপর বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত হাসপাতালে সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে এমনকি ডাক্তার রিপোর্টসমেত ডাক্তার দেখানোও হয়েছে। সবকিছুই চমৎকার এবং ডাক্তার বলেছেন ছয়মাস পর আবার আসবেন। আপনার কোন সমস্যা নেই; এই কথা শুনে আমরা সবাই খুশি এবং আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করেছি এমনকি পেসমেকার কোম্পানী দ্বারা পেসমেকার চেক করে সন্তুষ্টি নিয়ে বাসায় ফিরেছি। শ^শুর আমাকে বলে এবার আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসো; আমি বলি আগামী শুক্রবার নিয়ে যাব। পরের দিন হঠাৎ হাত, পা, চিবানো এবং সামান্য জ¦র আসে। ঔষধ খেয়ে জ¦র ও চিবানো বন্ধ হয় আর আমরা সতর্ক হয়ে ওনার সেবায় মেতে উঠি। আমি, আমার স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলে ওনার পরিচর্যা করি। তবে একদিন পরে অফিস থেকে ফিরে দেখি একটু অন্যমনষ্ক হয়ে বাথরুমের লাইট না জেলে ওযু করছে। তখন আমি লাইট জেলে দিয়ে একটু চিন্তা করি এবং আমার স্ত্রীকে বলে সব খবরাখবর নিয়ে সেবা এবং মনযোগ বৃদ্ধি করি। নামাজ শেষে একসঙ্গে টিভি দেখি এবং গল্প করি ও আমার মেয়েকে দিয়ে সারা শরীর ম্যাসাজ করিয়ে দেই। কিন্তু তখনও ওনাকে একটু দুর্বল দেখে আমি চিন্তিত হই।
কিছুক্ষণ পর আবার নামাজের জন্য রুম থেকে বের হয়ে টয়লেটে যায়… আমি কিছুক্ষণ পর পানির শব্দ না পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে ওনাকে খোজ করতে থাকি। দেখি ওনি ড্রয়িং রুমে সোফার সামনে প্রস্রাব করছেন। তখন আমি জিজ্ঞাসা করি আব্বা আপনি এখানে কি করেন; তিনি বলেন আমি বাথরুম করছি। আমি বলি এটা বাথরুম না আসেন বাথরুমে নিয়ে যায়। এইভাবে সেবাযত্ন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রাত যাপন করি। জ¦র কয়েকবার মাপা হয় কিন্তু ৯৮ এর উপরে পাইনি। ভোরবেলায় ওনি ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যায়। আমি বুঝতে পারি কিন্তু অনেকক্ষণ বের না হলে আমি রুম থেকে বের হয়ে বেসিনে সামনে যায় তখন তিনি আমাকে ডাকেন; তখন আমি ও আমার স্ত্রী মিলে বাথরুম থেকে ওনাকে পরিস্কার করে এনে একসঙ্গে নাস্তা করে আমি অফিসে যায়। আর কিছুক্ষন পর পর ফোনে খোজ খবর নেই; সবই ভাল। তবে পেসমেকার কাজ করছে না তার জন্য মাঝে মাঝে সমস্যা হচ্ছে। এই দেখে আমার স্ত্রী বলে তুমি আসার সময় এক বক্স পেম্পার নিয়ে আইসো। তখন আমি বলি একটু পর্যবেক্ষণ কর; দেখি কি করা যায়। কিছুক্ষন পর আমার স্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে বলে তাড়াতাড়ি আস আব্বাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। আমি অফিস থেকে এসে দেখি ওনি দুর্বল এবং ওঠে দাঁড়াতে এমনকি বসতে পারছেন না। তাই প্রস্তুতি নিয়ে কয়েকজনে ধরাধরি করে ওনাকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং ভাল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তির পর পরীক্ষা নীরিক্ষা চলে; দীর্ঘ ৪ ঘন্টা পর রোগীকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। রাত ৮টায় খবর আসে ওনার কভিড পজেটিভ তাই আইসিইউ থেকে সি সি ইউতে স্থানান্তরিত করা হবে এবং কভিড জোনে রাখা হবে। সেই মোতাবেক আমাদের অবস্থান। আমরা পালাক্রমে রোগীর এটেনডেন্ট হিসেবে উপস্থিত থেকে হাজিরা দিচ্ছি। কিন্তু রোগীর দেখা পাচ্ছি না; শুধু ডাক্তারের ব্রিফিং শুনছি আর দিন গুনছি। এভাবেই দিনগুলি চলছিল; তারপর ডাক্তাদ্বয় বলেন যে, আপনার রোগীর একটি দামী ইনজেকশন লাগবে; যার আনুমানিক দাম ৭০০০০টাকা। তবে এর কোর্স দুটি ইনজেকশন। তবে আমি রাজি হলাম এবং একটি ইনজেকশন দেয়াতেই ভয় কেটে গেল এবং রোগী সুস্থ্য হয়ে সিসিইউ থেকে কেভিনে স্থানান্তরিত হলো কিন্তু চোখে দেখার সুযোগ নেই। তবে সিসিইউতে ভিডিউতে দেখানো হতো এবং টেলিফোনে কথা বলানো হতো। তবে কেবিনে যাওয়ার পর ওনার নিজের ফোন দিয়েই যোগাযোগ করার ব্যবস্থা হলো। এভাবেই দিনগুজার করা হলো। মাঝপথে জানাগেলো যে ওনার পেসমেকার এর প্রোগ্রাম রিসেট করতে হবে। কিন্তু পেসমেকার কোম্পানী নেগেটিভ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তা করতে অসৃকীতি জানাচ্ছে। যখন ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হলাম ডাক্তারও ঐ একই কথা বলে ঝেটিয়ে বিদায় করল। কি আর করা বিপদে ধৈর্য্য ধারন করে আল্লাহর উপর ভরসা নিয়ে সামনে এগুনো ছাড়া আর উপায় কি? পরবর্তীতে ডাক্তার বলল যে ১৪দিন পর পেসমেকার কোম্পানীর লোক আসবে এবং ডাক্তারও দেখে বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেবে। কিন্তু রোগীর কোন আইসিইউ বা সিসিইউ’র প্রয়োজন ছিল না এমনকি অক্সিজেনও লাগেনি। তিনি নিজেই স্বয়ংসম্পন্ন। যার জন্য ১৪দিন থাকারও প্রয়োজন ছিল না। কারণ ওনি সম্পূর্ণ সুস্থ্য এমনকি সবই ওনি নিজেই করে যাচ্ছেন। শুধু প্রয়োজন ছিল পেস মেকার রিসেট করার…যা আজও হয়নি। যদিও এতকিছুর প্রয়োজন ছিলনা তবু তারা তাদের দয়ায় ঐসকল ব্যবস্থা করায় হাজার শুকরিয়া। তবে কষ্টের ব্যাপার হলো বিশাল অংকের বিল পরিশোধ করা।
যাক আল্লাহর অশেষ কৃপায় এই যাত্রায়ও আমার শ^শুর পৃথিবীতে থাকার সুযোগ পেল। আল্লাহর শুকরিয়া এবং টিকার গুনাগুন বাস্তবে দেখা গেল। শুধু অভিজ্ঞতার জন্য পত্রিকায় দেয়া হলো। যার যা বুঝার দয়া করে বুঝে নিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.