নূন্যতম প্রয়োজন বা অতি প্রয়োজন অথবা লোভের প্রয়োজন মোট কথা সব প্রয়োজনই মানুষকে বিপদের মুখে ফেলে। কোন কোন সময় প্রয়োজন মানুষকে মৃত্যুঝুকিতেও ফেলে। তাই প্রয়োজন নির্বাচনে সচেতন হউন এবং প্রয়োজন মোকাবেলায় নিজে থেকে চেষ্টা না চালিয়ে আল্লাহর স্মরণাপন্ন হউন। প্রয়োজনকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং প্রয়োজনের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য খোদা তায়ালার সাহায্য নিয়ে অগ্রসর হউন। আসুন প্রয়োজন কিভাবে মানুষকে বিপদে ফেলে তা দেখি… এই লকডাউনে যারা প্রয়োজনে বের হয় তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখাপেক্ষি হতে হয় এবং প্রশ্নকারীর দয়ার উপরই তার প্রয়োজন মিঠে অথবা গুনতে হয় মরার উপর খারার ঘ্যাঁ (জরিমানা অথবা জেল)। প্রয়োজনেই মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনার স্বীকারে পরিণত হয় কখনো কখনো মৃত্যুঝুকিতে পড়ে আবার কখনো কখনো মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করেন। প্রয়োজনই মানুষকে অপকর্মে জড়ায় এবং পরিনতীতে জেল ও ফাঁসি পর্যন্ত ঘরাই। জীবন চলার পথে আরো কতকি প্রয়োজন আমাদেও : জাগতিক, অর্থনৈতিক, শারিরীক, মানুষিক, মাংসিক, পরলৌকিক, ইহকাল ও পরকালসহ আরো হাজারো? তাই সব প্রয়োজনেই কি সারা দেয়া দরকার; একটু ভেবে দেখবেন কি?
এই সম্পর্কে আল্লাহর কালামে আমাদেরকে বলেন, “দিলে গুনাহের টান বোধ করলে কেউ যেন না বলে ‘আল্লাহ আমাকে গুনাহের দিকে টানছেন’। কোন খারাপীই আল্লাহকে গুনাহের দিকে টানতে পারে না, আর আল্লাহও কাউকে গুনাহের দিকে টানেন না। মানুষের দিলের কামনাই মানুষকে গুনাহের দিকে টেনে নিয়ে যায় এবং ফাঁদে ফেলে। তারপর কামনা পরিপূর্ণ হলে পর গুনাহের জন্ম হয়, আর গুনাহ পরিপূর্ণ হলে পর মৃত্যুর জন্ম হয়।” হ্যা আমাদের মৃত্যুঝুকি আমাদেরই অতি লোভ বা গুনাহের প্রাপ্তি। তাই আমরা যেন দুনিয়াবী প্রয়োজনীয় লোভ সামলাতে সচেষ্ট হয়। পশু-পাখি এবং জীবযন্তুও কিন্তু একই ফাঁদে পা দেয় আর তার শেষ পরিণতি হয় মৃত্যু। অনেক শিকারীই বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে মৃত্যুর কাছে সমর্পণ করান। ঠিক তেমনি মানুষও ঐ একই ভুলে জীবনের বারোটা বাজান। তাই সময় থাকতে সচেতন হউন আর নিজেদেরকে সঠিক জায়গায় রাখুন। চারিদিকে এখন মৃত্যুফাঁদ ওত পেতে আছে; সেই ফাদ থেকে বাচার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থায় মনোনিবেশ করুন। আইনের ফাঁদ, রোগ জিবানুর ফাঁদ, শয়তানের শয়তানির ফাঁদ, লোভের ফাঁদ, নিত্য প্রয়োজনের ফাঁদসহ আরো অনেক মিলে সবই এখন এক ভিবিষিকাময় ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা। এই অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান ও বুদ্ধি এবং বিবেচনাবোধ আর সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তার সহযোগীতা। তাই সৃষ্টিকর্তার সহযোগীতা পাওয়ার জন্য অবশ্যই তাঁরই কাছে চাইতে হবে আর তিনি তা দেবেন নিশ্চয়। এই সম্পর্কে তাঁরই কালামে আমাদেরকে বলেন; “তোমাদের মধ্যে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান কে? সে তার সৎ জীবন দিয়ে জ্ঞান থেকে বের হয়ে আসা নম্রতা-ভরা কাজ দেখাক। কিন্তু তোমাদের দিল যদি হিংসায় তেতো হয়ে উঠে এবং স্বার্থপরতায় ভরা থাকে তবে জ্ঞানের গর্ব করো না, সত্যকে মিথ্যা বানায়ো না। এই রকম জ্ঞান বেহেশত থেকে নেমে আসে না, বরং দুনিয়ার, খারাপ ইচ্ছার এবং ভূতদের সঙ্গেই তার সম্বন্ধ; কারণ যেখানে হিংসা ও স্বার্থপরতা থাকে সেখানেই গোলমাল ও সব রকমের অন্যায় থাকে। কিন্তু যে জ্ঞান বেহেশত থেকে আসে তা প্রথমত: খাঁটি, তারপর শান্তিপূর্ণ; তাতে থাকে সহ্যগুণ ও নম্রতা; তা মমতা ও সৎ কাজে পূর্ণ, স্থির ও ভন্ডামীশুন্য। যারা শান্তির চেষ্টা করে তারা শান্তিতে বীজ বোনে এবং তার ফল হল সৎ জীবন।” আসুন আমরা আল্লাহর বাক্যকে নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করে সঠিক অবস্থানে ফিরে যাই। আল্লাহ তাঁর কালামে বলেন, যার জ্ঞানের অভাব আছে, আমার কাছে চাও আমি তোমাকে প্রচুর পরিমানে দিব যা তুমি কল্পনাও করতে পারনা। হ্যা আল্লাহর জ্ঞানে পরিপূর্ণ হই এবং নিজেদেরকে সেই জ্ঞানের অধিনে সাজিয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করি এবং আল্লাহর অভিপ্রায়কে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করি।
কথায় আছে লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু। এই কথাটি যথার্থই বাস্তবে দৃশ্যমান। আর এই কথাটিও কিন্তু আল্লাহর কালামের আলোকেই বলা হয়েছিল। তাই লোভের উদ্ধে উঠে এখন জীবন সায়ান্নে এসে ফুলচেরাতের পুল পার হওয়ার সময়। পৃথিবীকে কোনঠাসা করেছে অদৃশ্য এক রোগ। কিন্তু এই রোগের কোনই ক্ষমতা নেই আল্লাহর সান্নিধ্যের ক্ষতি করার। তবে এই রোগ চেতনা দিয়ে আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নিতে সহায়তাই করে যাচ্ছে কিন্তু আমরা সেই চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হতে চাচ্ছি না। তবে এই প্রসঙ্গে একটু জ্ঞান বাস্তবতার কাছ থেকে নিলে হয়তো আমাদের আগামীর কল্যাণের জন্য কাজে লাগবে। যেমন দুনিয়াবী সম্পদ এখন কোন কাজেই আসছে না বরং সম্পদহীনদের জন্য আল্লাহর আশির্বাদ এবং পাহাড়াই যথেষ্ট হিসেবে কাজে আসছে। কোটিপতি, সম্পদশালী, ক্ষমতাশালী এবং পদের অধিকারীরা আজ কোথায় একটু খোজ খবর নিয়ে দেখুন তারপর নিজেকে নিয়ে ভাবুন। তৌবা করুন এবং ফিরে আসুন খোদার সান্নিধ্যে। নেতা-কর্মী, আল্লাহভক্ত এবং সাধারণ মানুষসহ প্রত্যেকেরই জীবন দেখুন এবং ভাবুন কোথায় কোথায় গলদ এবং কোথায় কোথায় সততা ও শান্তি এবং নিশ্চিত নিশ্চয়তা; তারপর অগ্রসর হউন নিজের জীবন নিয়ে এবং সঠিকতা যাচায়ের গতিময়তা দিয়ে সংকট মোচনে কাজে নেমে পড়ুন। যেভাবে পৃথিবী এগুচ্ছে সেভাবে এগুতে দিলে খোদার ইচ্ছার বহি:প্রকাশ ঘটবে না বরং শয়তানের ইচ্ছার প্রতিফলই দৃশ্যমান থাকবে। তাই খোদার ইচ্ছায় ফিরে এসে পৃথিবীকে নুতন করে সাজিয়ে তুলুন বেহেশতি আবেশে। যেন পৃথিবী থেকেই বেহেশতের যাত্রারম্ভ হয়।
অফিস-আদালত, সেবার খাত, ব্যবসা এবং শিক্ষা সর্বক্ষেত্রেই খোদার অভিপ্রায় বিরাজমান রাখা দরকার। ঘরকোনো বা একঘরে করে রাখার সময় এখন নয়। ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার সময় এখন নয়; লোভের বসবতী হয়ে সম্পদের পাহার রচনার সময়ও এখন নয়, এখন সময় ঐক্যের, সাম্যের, ন্যায়পরায়নতার, মঙ্গলের, ইতিবাচকতার, ভালবাসার, ক্ষমার, সেবার, একে অপরের পরিপূরক হয়ে খোদার ইচ্ছার বহি:প্রকাশ ঘটানোর। কিন্তু বাস্তবে এইসকল কিছুই যেন অনুপস্থিত। তাই এই মহা প্রলয়ে দ্বিগুন শক্তি নিয়ে ফিরে আসুন খোদার সান্নিধ্যে এবং মহাপ্রলয়কে স্তদ্ধ করে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নতুন এক খোদায়ী অভয়ারণ্য উপহার দিন আগামীর প্রজন্মকে। সকল প্রয়োজনই মৃত্যুঝুকিতে ফেলে তা পরখ করে দেখুন এবং প্রয়োজনের প্রয়োজনীয়তায় গুরুত্ব দিয়ে সঠিক প্রয়োজনকে আলিঙ্গন করুন এবং সেই আলিঙ্গনে পৃথিবীকে সাজিয়ে তুলুন। যেখানে থাকবেনা ভয়, হিংসা, লোভ, নৈরাজ্য এবং সকল নেতিবাচকতা। থাকবে শুধু মঙ্গল এবং সুখ, শান্তি, আনন্দ ও নিশ্চিত নিশ্চয়তা। এই মহাদুর্যোগে আল্লাহ আমাদের সকলকে তৌফিক দান করুন এবং আপনার কাছে ফিরে গিয়ে আপনার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে সহায়তা করুন। পৃথিবীর সকল মানুবকুলকে সঠিক চেতনা দিন, সঠিক রাস্তা দেখান এবং আপনার কালামের ক্ষমতায় পৃথিবীর অমঙ্গল দূর করুন। পৃথিবী এবং জাগতিকতা এমনকি লোক দেখানো ভয় থেকে বের হয়ে আসতে সহায়তা করুন। রোগ জীবানুকে আর ভয় নয় বরং আল্লাহ এবং তাঁর হুকুম আহকামকে ভয় করুন এবং ফিরে আসুন সুখী ও সমৃদ্ধ আগামীর কল্যাণের তরে। আল্লাহ আপনাকে, আমাকে ও সকলকে সহায়তা করুন এবং করবে নিশ্চিত যদি আমরা চাই। হ্যা আল্লাহর কাছেই আপনি এবং আমি সকলে মিলে পরিত্রাণ চাই। আর তার কাছ থেকে পরিত্রান আসবে নিশ্চিত…আমিন॥