ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মানে নীতিমালা না মানার অভিযোগ উঠেছে। ঘর নির্মানে ক্রুটি রয়েছে। সংরক্ষন করা হয়নি গুনগত মান। ফলে সচেতন মহলের মাঝে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
কসবা উপজেলায় মোট এক হাজার ৯ শত ৭১ জন ভ’মিহীন মানুষের তালিকা সম্পন্ন করে ঘর নির্মান অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন গত ২৩ জানুয়ারি বায়েক সীমান্তবর্তী মাদলা গ্রামে ১০৪টি গৃহহীন পরিবারকে জায়গার দলিলসহ ঘর হস্তান্তর করেছেন।
দ্বিতীয় পর্যায়ে গত ২০ জুন ২০০ ঘরের দলিলসহ মালিকানা উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকী ঘরগুলো বায়েক, খাড়েরা, গোপিনাথপুর, কুটি, বিনাউটি ও কসবা পৌরসভার বিভিন্ন খাস খতিয়ানের ভ’মিতে গৃহনির্মাণ করার প্রক্রিয়া চলছে। একসাথে ৫০০ ঘরের ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করা হচ্ছে উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের মনকাশাইর নামক স্থানে। মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর এই আশ্রয়ন প্রকল্পের অনুদান হিসেবে যারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গৃহ পাচ্ছেন তারা হলেন; ভ’মি ও গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধা, বিধবা,প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যক্তা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠি ইত্যাদি।
প্রতিটি ঘরে ১ লক্ষ ৯১ হাজার টাকা নির্মান ব্যয় ধরা হয়েছে। সেই সংগে কবুলিয়াত দলিল ২৫৮ টাকা এবং নামজারী ১১৫০ টাকা করে নির্ধারন করা আছে। এছাড়া গৃহে পানি ও বিদ্যুৎ ইত্যাদি সংযোগও রয়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পের সংগে সংযোগ সড়ক স্থাপন, সাইনবোর্ড তৈরিসহ অনেক টুকিটাকি খরচ রয়েছে বলে জানালেন কসবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ’মি) হাছিবা খান।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়; সীমান্তবর্তী বায়েক ইউনিয়নের মাদলা এলাকার হর্টিকালচার প্রজেক্টের পাশে ২৮টি, পুরনো গুচ্ছগ্রামের পাশে ১৮টি ও মাদলা পাহাড়ের আরো ভেতরে ৫৬টি ঘর নির্মান কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। স্থানীয় জনসাধারনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হর্টিকালচার প্রজেক্টের পাশে নির্মানাধীন ২৮টি ঘরে প্লাষ্টারের কাজ চলছে। যে সমস্ত ইট দেয়ালে লাগানো হয়েছে নি¤œমানের ইট। এছাড়া দেয়াল ও প্লাষ্টারে ব্যবহার করা হয়েছে ভিটিবালু।
এ প্রসংগে কর্তব্যরত মিস্ত্রি ও শ্রমিকদের বক্তব্য হলো প্রশাসন থেকে যে ধরনের মালামাল দেয়া হচ্ছে আমরা তাই ব্যবহার করছি। মাদলা পুরনো গুচ্ছগ্রাম সড়কের পাশে গিয়ে দেখা যায় একই অবস্থা। মিস্ত্রী ও শ্রমিকদের জিজ্ঞাসা করলে তার বলেন; এখানে ঠিকাদার নুরুল ইসলাম। নুরুল ইসলাম ৪০/৫০ জন শ্রমিক দিয়ে এখানে ১৮টি ঘর ও এর অদুরে আরো ৫৬টি ঘর নির্মান করছেন। দুই জায়গায়ই ২/৩ নম্বর ইট দিয়ে কাজ করাচ্ছেন নুরুল ইসলাম। ঘরের দেয়ালে ব্যবহার করা হচ্ছে ভিটি বালু। নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন; আমি কোনো ঠিকাদার নই। আমাদেরকে সিরাজগঞ্জ থেকে আনা হয়েছে। আমি নিজেও প্রতিদিন ৭শত টাকা বেতন নেই। ইউএনও স্যারই আমাদের কাজের তদারকী করেন এবং মালামাল সরবরাহ করেন। নুরুল ইসলাম আরো বলেন; মালামাল ভালো খারাপ নির্ধারনের দায়িত্ব আমাদের নয়। তা দেখেন ইউএনও স্যার, ইঞ্জিনিয়ার ও স্থানীয় চেয়ারম্যান। আমাদের দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেছেন আমরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।
বায়েক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক নুরুন্নবী আজমল বলেন; নি¤œমানের ইট ও ভিটি বালু দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আপনারা সাংবাদিকরা না দেখলে এসব কে দেখবে ? আমরাতো সরকারী দলের লোক।
বায়েক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন ভ’ইয়া বলেন; উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলেছি কাজ খারাপ হচ্ছে। এসব ইট,বালি ব্যবহার করা ঠিক নয়। যেখানে যেখানে সমস্যা রয়েছে এগুলো ঠিক করা প্রক্রিয়াধীন। আর নি¤œমানের কাজ হবেনা। ভিটি বালু বাদ দিয়ে লাল বালি আনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম বলেন, নি¤œমানের ইট ও ভিটি বালি দ্রুত সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। পুনরায় এসকল মালামাল ব্যবহার করা হলে মালামাল সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।