ফরিদপুর প্রতিনিধি ॥ ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে বকুল বেগম (৫৫) নামে এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) দুপুরে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ফরিদপুর জেলা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন মৃতের স্বজনরা।
মৃত বকুল বেগম গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের হাবুল মোল্লার স্ত্রী। তাদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বকুল বেগমকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে। স্বজনরা বকুলকে হাসপাতালের ‘করোনা সাসপেক্ট ওয়ার্ডে’ নিয়ে গেলে সেখানে কর্মর চিকিৎসক বা নার্স কেউ তাকে ভর্তি করেনি। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পরেও বকুল বেগমকে ভর্তি করা হয়নি করোনা সাসপেক্ট ওয়ার্ডে। এমনকি তীব্র শ্বাসকষ্ট থাকার পরেও তার জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থাও করা হয়নি বলে ডাক্তার ও নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রোগীর স্বজনদের। বকুল বেগমের মৃত্যুর পর বিষয়টি পুলিশকে জানান তারা।
এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা পুলিশ জানায়, এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তাই আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না। হাসপাতালটিতে করোনা কিংবা অন্য চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা আগেও এমন অনেক অভিযোগ দিয়েছেন। তবুও কর্তৃপক্ষ না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা গৃহবধূ হালিমা খাতুন বলেন, ‘এ হাসপাতালের অধিকাংশ ডাক্তার ও নার্সদের আচরণ বেশ রুক্ষ। কোনো একটা বিষয় নিয়ে অভিযোগ তুললেই তারা রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।’
হালিমার মতো একাধিক ব্যক্তি ডাক্তার ও নার্সদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ তুলে বলেন, ‘কার কাছে দেবো বিচার? কে করবে এদের বিচার।’ হাসপাতালটির অপরিচ্ছন্নতা, অব্যবস্থাপনা নিয়েও নানা অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ‘সেখানকার আইসিইউ ছাড়াও অন্যান্য ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের ব্যবহারের শৌচাগারগুলোরও নাজুক অবস্থা।’ অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি বারবার এড়িয়ে যান তিনি।
ডা. সাইফুল বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ হাসপাতালে সবসময় ডাক্তার ও নার্স নিষ্ঠার সাথে কাজ করেন। এরকম চিকিৎসা অবহেলার ঘটনা যদি ঘটেই থাকে তবে রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করলে বিষয়টি দেখব।’ আইসিইউ ও অন্যান্য ওয়ার্ডের অপরিচ্ছন্নতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সেটিও অস্বীকার করে বলেন, আমাদের হাসপাতালের শৌচাগারগুলোর কোনো সমস্যা নেই। যদি সমস্যা থাকতো তবে রোগীর স্বজনরা নিশ্চয়ই অভিযোগ করতো।