মানুষের প্রয়োজনীয়তার কোন কমতি নেই তবে নিত্যদিনের মৌলিক প্রয়োজনীয়তাগুলোই মানুষকে আইন অমান্য করতে সহায়তা করে থাকে। তবে প্রয়োজনীয়তারও আবার রকমফের আছে যা ইদানিংকালে বিশেষ মুহুত্ত্বে প্রকাশিত ও প্রমানিত হয়েছে। আমাদের দেশে এমনকি সারা বিশ্বের একমাত্র চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা হলো লকডাউন বা শাটডাউন। আর এই মুহুত্ত্বে মানুষেরও হরেকরকম প্রয়োজনীয়তা উকি দিচ্ছে আর তা আইন অমান্যের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যদিও শাটডাউন বা লকডাউন মানুষেরই প্রয়োজনে কিন্তু সেই প্রয়োজনীয়তা উপলব্দিতে আনয়নের চর্চা এখনও আমাদের দেশে শুরুই হয়নি বলে ধরে নেয়া যায় বা তার চেয়েও বেশী প্রয়োজন হলো হরেক রকম বা বাহারি প্রয়োজনে লকডাউন প্রয়োজনীয়তাকে তুচ্ছ হিসেবে প্রতিয়মান করা।
সরকার কঠিন ও কঠোরভাবে লকডাউন বা শাটডাউন পালনে যা যা করণীয় তাই করে যাচ্ছে কিন্তু এতে মানুষ ও তাঁদের ক্ষুদ্র বা বৃহৎ অথবা অতি নগন্য; তুচ্ছ প্রয়োজনীয়তাগুলো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। যা অহরহ প্রকাশিত হচ্ছে। যেমন, সকল প্রশাসনিক আইন অমান্য করে দেশের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে রাতের অধারে যাত্রী পৌঁছে যাচ্ছে সিএনজি বাহনে, বিভিন্ন প্রয়োজনে নিজের অপ্রয়োজনকে প্রধান্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ। কারো শখ বাজার করা অথবা বাইরের মুক্ত আবহাওয়াকে উপভোগ করা; কারোর আবার কি হচ্ছে তা দেখার; কারো আবার মৌলিক চাহিদার যোগানে দিশেহারা হয়ে গন্তর্বে ছুটে চলা; কারো আবার সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। এই সবই যেন এখন হরহামেশা ঘটছে। তবে সরকার আন্তরিক এবং এই আন্তরিকতায় কোন খোঁত নেই। তবে এতে অসাধু মানুষেরও কমতি নেই। একটি উদাহরণ দেয়া যায়- ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা যাতায়তের এখনও ব্যবস্থা রয়েছে; কিভাবে রাতের বেলায় সিএনজি চলছে যাত্রী নিয়ে। আর প্রতিটি চেকপোষ্টেই মাসোহারা দিয়ে পার হচ্ছে। আমার বাসার বোয়া এইভাবে চলে গেল, কোনভাবেই তাকে আটকানো গেলো না। সমস্ত যুক্তি এবং বাস্তবতাকে বিসর্জন দিয়ে পার হচ্ছে মানুষ তাদের নিজস্ব ইচ্ছার ভুবনে। আরেকটি ঘটনা হলো এক তারিখ বাসা-বাড়ি পাল্টাবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু শাটডাউন বা লকডাউন এইক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না। তারপরও দেখেছি যেখানে বাসা বাড়ির পাল্টানো মালসমেত ট্রাক সেইখানেই প্রতিবন্ধকতা এবং মাসোহারা আদায়ের ব্যবস্থা। এইগুলো বন্ধে আশু পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। আরেকটি বিষয়ক হলো মানুষ যখন দেখে একজন প্রয়োজনে/ অপ্রয়োজনে ঘোরাফিরা করছে তখন অন্যজনও উৎসাহিত হয় এবং তার সাথে সাথে আরো অনেককে উৎসাহিত করে একটি মিছিলে পরিণত করে মাত্র।
সার্বিক দিক বিবেচনা করে এই কঠিন সময়ে মানুষ এবং সরকার একাকার হওয়ার কথা কিন্তু এখনও পরিলক্ষিত হচ্ছে সরকার এবং মানুষের মধ্যে দূরত্ব। যেখানে সরকার মানুষের প্রয়োজনে আর মানুষ সরকারের প্রয়োজনে একাকার হওয়ার কথা সেইক্ষেত্রে এই ফারাক তৈরীর ক্ষেত্রে কি কি লক্ষণগুলো বাধাস্বরূপ কাজ করছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে আমি মনে করি প্রয়োজন বা প্রয়োজনীয়তা। আর এই প্রয়োজন বা প্রয়োজনীয়তা দূর করতে দরকার গুরুত্ব দিয়ে ছোট হউক বা বড় হউক যে কোন প্রয়োজনীয়তাই খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেয়া। তবে কঠোরতার পাশাপাশি ছোট বড় প্রয়োজনীয়তাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সহযোগীতা এবং ক্ষমা ও ভালবাসার আবরণে সংকট উত্তরণের পথ আবিস্কার করা।
আমরা দেখেছি বিদেশী শ্রমিকদের সহযোগীতায় সরকার আন্তরিক, পাশাপাশি দেশী শ্রমিকদের প্রতিও আন্তরিকতা প্রকাশ করুন এবং সে যে পেশারই হউক না কেন তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে মোকাবিলা করুন। আমরা কেউ রক্ত বিক্রি করে খাই আর কেউ বুদ্ধি বিক্রি করে খাই; পার্থক্য এইখানে শুন্য। কর্ম এবং শ্রমের মধ্যে বা ভাষার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই বরং পার্থক্য শুধু আমাদের মানুষিকতার মধ্যে। আর যারা সেবকের ভুমিকায় রয়েছেন তাদের বলছি ভাষা এবং আচরণ সংযত করুন নতুবা আপনাকেও ঐ ভাষা এবং আচরণের স্বীকারে পরিণত হতে হবে। আল্লাহর কালামে বলা আছে “তুমি যেরকম ব্যবহার আশা কর ঠিক সেইরকম ব্যবহার তুমি আগে করে দেখাও। তাহলে তুমি সেই ব্যবহার পাবে।” হ্যা আগে সেবা করে দেখান এবং তারপর সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা পাবেন। তবে আল্লাহর কালামে এও বলা আছে যে, “কোনকিছু পাওয়ার আশায় কিছু করো না বরং আল্লাহর জন্য করছ বলে মনপ্রাণ দিয়ে করো।” হ্যা আমরা আল্লাহর জন্য করছি বলে মন, প্রাণ দিয়ে করবো। যার যার সামথ্য অনুযায়ী এই লকডাউন এবং প্রয়োজনীয়তা মোকাবেলায় নিয়োজিত থাকব।
সতর্কতার বিষয় হলো এই দুই প্রয়োজনীয়তাকে একীভূত করা এবং এই প্রয়োজনীয়তায় নিজেকে সেবকের ভুমিকায় রেখে অগ্রসর হওয়া। আমরা যাই-ই করছিনা কেন সবই যেন আল্লাহর জন্য করছি বলে মন-প্রাণ দিয়ে করছি বলে প্রতিয়মান হয় সেইদিকে লক্ষ্য রাখা। এখন ক্ষমতা ও সম্পদের বা জাগতিকতা প্রদর্শনের সময় নয় বরং এইসকল বিসর্জনের সময়। তাই সময় থাকতে নিজেদেরকে শুধরিয়ে দুই প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন। আল্লাহ আপনাকে এবং আমাকে সাহায্য করবেন এবং সফলতায় পৌঁছাবেন এটা নিশ্চিত। এই প্রসঙ্গে হযরত দাউদ (আ:) মাধ্যমে আমাদের উদ্দেশ্যে বলা কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করে শেষ করছি। “আমি সেই পাহাড়ের সারির দিকে চোখ তুলে তাকাব; কোথা থেকে আমার সাহায্য আসবে? আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা মাবুদের কাছ থেকেই আমার সাহায্য আসবে। তিনি তোমার পা পিছলে যেতে দেবেন না; যিনি তোমাকে পাহাড়া দেন তিনি ঘুমে ঢুলে পড়েন না। যিনি বণি ইসরাইলদের পাহারা দেন তিনি তো ঘুমে ঢুলে পড়েন না, ঘুমানও না। মাবুদই তোমার রক্ষাকারী; মাবুদই তোমার ছায়া, তিনি তোমার ডান পাশে রয়েছেন। দিনের বেলা সুর্য আর রাতের বেলায় চাঁদ তোমার ক্ষতি করবে না। সমস্ত বিপদ থেকে মাবুদই তোমাকে রক্ষা করবেন; তিনি তোমার প্রাণ রক্ষা করবেন। তোমার প্রতিদিনের জীবনে মাবুদই তোমাকে পাহাড়া দেবেন, এখন থেকে চিরকাল দেবেন।” আমীন তাহাই যেন হয়।