আগামীর করনীয়

করোনা মহামারীর মাঝে সবই সচল রয়েছে। সরকারী অফিসের কাজ এমনকি বেসরকারী অফিসের কাজসহ যাবতীয় কিছুই সচল রহিয়াছে। কিন্তু সচল নেই কতিপয় সামনে এগুনোর ব্যবস্থা। যেমন প্রথমত শিক্ষা ব্যবস্থা, সড়ক, নৌ, জল ও স্থল পথের বহুল প্রচলিত মাধ্যমগুলো। কিন্তু এর জন্য থেমে নেই গতিময়তা। যার যার প্রয়োজন যার যার মত করে সেরে নিচ্ছেন। তবে সরকারের আন্তরিকতার কমতি নেই; সেইদিকে জনগণেরও আন্তরিকতার কমতি নেই তাদের নিজ নিজ কাজ সম্পাদনের জন্য। যেহেতু সবই সচল সেহেতু অহেতুক লকডাউন প্রয়োজনীয়তা বিলুপ্তির পথে এগুচ্ছে। বাংলাদেশ এবং দেশের জনগণকে নিয়ে যারা আজ সরব তাদেরকে নিয়ে জনগণের কোন ভাবনা নেই এমনকি তাদের পদক্ষেপ বা পরামর্শে জনগণের ভোগান্তী বা অপূরনীয় ক্ষতিই হচ্চে বৈকি। শুধু কি তাই দেশের অগ্রসরমান অর্থনীতির সুদুরপ্রসারী ক্ষতি সাধিত হচ্ছে; জ্ঞান অর্জনের সুদুর প্রসারী ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। গরীর তার জায়গায় স্থির রয়েছে এবং ধনী আরো ধনী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে কিন্তু সমস্যা বিরাজমান রয়েছে নিম্নমধ্যবিত্তের মধ্যে। তাদের জন্য কেউ নেই বরং রয়েছে প্রতিবন্ধকতা আর আইনের এমনকি নিয়মের ও প্রজ্ঞাপনের বেড়াজাল। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা নিম্নমধ্যবিত্তরা আজ ও আগামীতে দরিদ্র শ্রেণীতে পরিণত হচ্ছে এবং হবে এতে দরিদ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
ধর্মীয় প্রয়োজনে কখনো কখনো মহামারীও প্রসমিত হয় এবং অতীতেও হয়েছে। তবে মানুষের প্রয়োজনের কাছে মরন ছোবলও তুচ্ছ বিষয় এই কথা প্রমানিত সত্য হিসেবে বাস্তবে দৃশ্যমান এবং প্রতীয়মান রয়েছে। তাই মানুষের জীবন রক্ষার দায়িত্ব মানুষকেই দেয়া উচিত। রক্ষাতো দূরের কথা, আমি অন্য কারো জীবন দিতেও পারি না এমনকি নিতেও পারি না। বরং জীবনের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারি। জীবন লেনে এবং দেনেওয়ালা ও রক্ষাকর্তা একজনই আছেন আর তিনি আল্লাহ তায়ালা। সুতরাং জীবন জীবিকা নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলা নয় বরং গঠনমুলক ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নই কাম্য। আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে ৭দিনের জন্য করোনার সঙ্গে যে শান্তি চুক্তি সাধিত হয়েছে তা দীর্ঘায়ীত করা হউক। ঈদ পরবর্তী লকডাউন বা শাটডাউন কর্মসূচীর কোন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে হয় না বরং ঐ লক ডাউন হবে মরন ডাউনের সমতুল্য। যেহেতু জনআকাঙ্খা এবং ব্যবসায়ী আকাঙ্খা এখন লকডাউন বিরোধী সেহেতু সরকার ও প্রসাশন ঐ জনগুরুত্বপূর্ণ আকাঙ্খাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ায়ই শ্রেয়। আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও নির্ভরতা নিয়ে দেশের জনগণকে করোনা মহামারীর প্রতিবন্ধকতা থেকে স্বাধীন করে দেওয়া হউক; যেমনি করে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে এই দেশ ও জনতাকে স্বাধীন করে দিয়েছিলেন। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং সকল নিষেধাজ্ঞার আওতাঅধিভুক্ত সকল কিছু উন্মুক্ত এবং পুরোদমে চালিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হউক। তাহলে মানুষ শিখবে কিভাবে নিজেকে রক্ষা এবং সামনে এগিয়ে নেয়া যায়। এই দেশের মানুষ সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এই পর্যন্ত এসেছে তাই আগামীতেও এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা উন্মুক্ত করা হউক।
রাষ্ট্রের মূলনীতির সঙ্গে যে, মৌলিক চাহিদা যোগানের নীতি যুক্ত রয়েছে সেইগুলোর দিকে দৃষ্টি দেয়া হউক। সেইগুলোতে যেখানে যেখানে দুর্বলতা প্রতিয়মান হয়েছে সেখানে কাজ করুন। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে মৌলিক চাহিদার মূলনীতিকে বাস্তবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে দৃশ্যমান রাখুন তাহলে কোন মহামারীই এই জাতির অগ্রযাত্রাকের বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। সূদুর বা অদূর ভবিষ্যতে আর কোনদিন কোন প্রকার শাট বা লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হবে না। করোনা আতঙ্কের আগে বাংলাদেশ যেমন এগুচ্ছিল ঠিক তেমনি করে এখনও আবার ফিরে আসুন। করোনা আক্তান্ত এবং মৃত্যুর হার অন্য যে সকল রোগ-বালাই রয়েছে ঠিক তাদের চেয়ে অনেক কম। তাই আতংকিত না হয়ে বরং করোনা প্রতিবন্ধকতা তৈরীতে মনোনিবেশ করুন। বিশ্ব মোড়ল বা ধনীক শ্রেণীকে আর সহযোগীতা নয় বরং সাম্যের কল্যাণে মানবতার ডাকে সাড়া দিন। আবেগ-অনুভূতি ও পারিবারিক সম্প্রতি বজায় রাখতে কাজ করুন। সামাজিক দুরুত্বের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসুন। একজনের করোনা হলে আরেক জনের হবে এই বিশ্বাস থেকে বের হয়ে আসুন। করোনা কোন ছোয়াছে রোগ নয় বরং এক অজানা শঙ্কাগ্রস্ত রোগ। তবে খোদার উপর বিশ্বাস এবং নির্ভরতা নিয়ে পথ চললে কারো কোন বিপদ নেই এবং থাকবেও না। জন্মিলে মরিতে হইবে এই বিশ্বাস সকলেরই রয়েছে এবং এও বিশ্বাস করি যে, মৃত্যুর নির্ধারিত সময়ের এক সেকেন্ড আগে বা পড়ে মৃত্যু হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই তাই নির্ধারিত বিষয় নিয়ে এত চিন্তিত হওয়ার বা উতলা হওয়ার কোন কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। তাই করোনাতঙ্ক থেকে বের হয়ে সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য সকলকে আহবান জানাচ্ছি।
যে সকল বৈষম্য এখনও দৃশ্যমান এবং যেসকল অনৈতিকতা এখনও দৃশ্যমান রয়েছে সেইসকল বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় এনে সঠিক অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়া অথবা সঠিক ব্যবহারের মানদন্ড স্থির করা এখন জরুরী। আর এই সকল করার ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার সহযোগীতা ঐকান্তিক কাম্য। আসুন আমরা সকলেই সকলের অবস্থান থেকে সৃষ্টিকর্তার সহায়তা কামনা করি এবং সেই আলোকে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সকল কর্মকান্ড সম্পাদন করি। যদি এই ইচ্ছায় অগ্রসর হয় তাহলে শান্তি, স্থিতিশীলতা, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা এবং আনন্দের হিল্লোল ভাসমান থেকে ক্রমান্বয়ে বিশ্বভ্রমান্ডকে বেহেস্তি আবেসে রূপদান করবে। আল্লাহ বলেছেন “তোমরা যারা ভারাক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, বোঝা বয়ে বেড়াতে পারছ না তারা সকল আমার কাছে এসো; আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব। আমার জোয়ালী তোমাদেরকে দিব, আমার স্বভাব নরম ও নম্র এবং জোয়ালী হালকা; যা বয়ে নেয়া তোমাদের পক্ষে খুবই সহজ।” হ্যাঁ আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাই এবং সহজ, হালকা এবং নরম ও নম্র স্বভাবে উদ্ভাসিত হই।
দেশ চালানোর দায়িত্ব আল্লাহর কাছ থেকে আসে আর আল্লাহর রহমত, বরকত, আশির্বাদ স্বরূপ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেন। হ্যা আপনারা আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাই অহংকার, হিংসা-বিদ্ধেস, ঘৃণা এবং শাস্তি দেয়ার মানুষিকতার আত্ম অহমিকা থেকে বের হয়ে এসে সেবা এবং ক্ষমা ও ভালবাসার দৃষ্টান্তের প্রতিমূর্তিতে প্রতিয়মান হউন। আপনাদের কাজে ও কর্মে এব্ং চিন্তায় ও আচরণে এবং প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে আল্লাহকে প্রকাশ করুন। আল্লাহই আপনাদেরকে দীর্ঘায়ূ এবং সুরক্ষা দিবেন। আল্লাহই আপনাদেরকে নিশ্চিত গন্তব্যের অভয়ারণ্যে বিচরণ করাবেন। এই নিশ্চয়তাটুকু আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি আপনাদের স্মরণে আনয়ন করলাম। জয় হউক আমাদের সকলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published.