ঈদের নীরবতা আর লকডাউনে কঠোরতা

এই ঈদের শুনশান নিরবতা যেন ঈদের ঐতিহাসিক আনন্দে ভাটা পড়েছে। নেমে এসেছে এক অজানা অন্ধকার এবং শঙ্কা। ঈদ ঘুরে এই উপলব্দি এখন সবাঙ্গে। হাজারো মানুষের মাঝে এই একই প্রশ্ন যে, আগের ঈদের আনন্দ আর নেই। এইবারের ঈদ যেন কেমন তা বলার নয় বা যে অনুভুতি প্রকাশের মতও নয়। করোনা বিশ্বকে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে তোলার ভুমিকায় প্রায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে। তবে এই প্রথম একটি জিনিস উপলব্দি হলো যে, ঈদে সকল মানুষের ঘরে একটি খাবার ভরপুর থাকে তা হলো গরুর/মহিসের/খাসির… মাংস। তবে কোরবানী দেয়া এবং না দেয়া সকল মানুষের ঘরেই এই খাবারটি বিরাজমান। এখানে একটি সাফল্য ধরে নেয়া যায় যাকে সাম্য বলে এবং সৃষ্টিকর্তার ভারসাম্যও বলা যায়। বেশী বা কম নয় বরং একই দিনে সকল মানুষই কমবেশী মাংশ খাবে এই দিনে তা সফলতায় পৌঁছেছে। একেই বলে সৃষ্টিকর্তার মারপ্যাচ যা বুঝা কঠিন। তবে অবস্থাদৃষ্টে এখন মানুষ অনেকটা অকৃপন হয়ে সৃষ্টিকর্তার আদেশ বা নির্দেশ অথবা লোকদেখানো কারসাজি সেরে নিয়েছে। যার মধ্যেদিয়ে ধনি ও গরিবের ব্যবধান অন্তত একদিনের অথবা কয়েক দিনের জন্য ঘুচেছে বলে প্রতিয়মান হয়।
তবে কোরবানীর ঈদের মাংসে ও ব্যবসা হয়েছে বা হচ্ছে। অনেক মানুষই এই মাংস সংগ্রহ করে বিক্রি করে দিচ্ছে আবার কেউ কেউ ক্রয় করে নিচ্ছে ভবিষ্যতের সাশ্রয়ে। আবার অনেকের ঘরের প্রতিটি সদস্য বের হয়ে ঐ মাংস সংগ্রহ করে প্রয়োজনানুযায়ী রেখে বাকিটা বিক্রি করে অন্য প্রয়োজনের যোগানও দিচ্ছে। এতে কিছু মানুষ সস্তায় মাংসের মজুদ সংগ্রহ করছে আবার কিছু ব্যবসায়ী সস্তায় আগামীর হোটেল ও রেষ্টুরেন্ট ব্যবসার যোগান সমৃদ্ধ করেছে। সবই হচ্ছে এই মহান দিন বা দিবসটিকে কেন্দ্র করে। সাম্য; ভারসাম্য, ব্যবসা, মুনাফা, ফুটানি, বাহাদুরি, টাকার বাহার, অহংকার এবং নিরহংকার সবই যেন সাজিয়েছে এই দিবসটিকে কেন্দ্র করে।
তবে একটি বিষয় হলে গরু বা ছাগল এক কথায় কোরবানীর পশুগুলো জীবন বাঁচানোর প্রানান্তকর চেষ্টাই না করে থাকে কিন্তু বাঁচার কোন উপায় থাকেনা। কারণ এই কোরবানী দ্বারা হত্যাকে বৈধ করা হয়েছে এমনকি আদেশ ও নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাই কেউ এর প্রতিকারে এগিয়ে আসতে পারবেনা। তবে এবার আমার দেখা দুটি ছাগল ও একটি গরু জীবন বাঁচাতে পালানোর চেষ্টা করেও সফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত নিয়তির কাছে পরাভুত হয়ে জীবন সংগ্রামে পরাজিত হয়েছে। কোরবানীর দিনে সকাল বেলা একটি ট্রাকে তিনটি ছাগল ও একটি গরু নিয়ে আসেন। যখন মালিকের বাড়িতে প্রবেশ করে ট্রাক থেকে নামানো হচ্ছিল তখন দুইটি ছাগল জীবন বাঁচাতে সকলের চোখকে ফাকি দিয়ে পালিয়েছে। কিন্তু যেই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল সেই বাড়ির মালিক দুটিকে ধরে মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। হন্যে হয়ে খোজকরা লোকজল ঐ আশ্রীত মালিকের কাছ থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে এসে কোরবানী দ্বারা মানুষের প্রাপ্ত ক্ষমতা প্রদর্শন করেন। অপর একটি গরু নিজ চোখে দেখল অনেক দিনের বন্ধুকে ২০/২৫জনে মিলে কোরবানী করলো এবং ঐ বন্ধুর ছটফটানি দেখে আর নিজে ঐ অবস্থানে স্বীকারে পরিণত হতে রাজি হননি। তাই কৌশলে দুটি রশি কেটে গোপনে পালালো। তখন মালিক পক্ষ ঐ পালানো গরুর খোজে বের হয়ে অনেক কষ্টে তাকে ধরে নিয়ে এসে কঠিন বাধনে আবদ্ধ করে রাখে। কারণ একটি গরুর সমস্ত কাজ শেষে খাওয়া-দাওয়া করে এ পালানো গরুটিকে কোরবানী করা হবে। সারাদিন ঐ গরুটি একটি গরুর জীবনের শেষ পরিণতির সম্পূর্ণই দেখে নিজের পরিণতিকে পরখ করল মাত্র।
তবে ঐ পশুদের মাধ্যমে বোঝা যায় আমরাও মৃত্যুর কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াই কিন্তু কোন লাভ হয় না। মৃত্যু আমাদেরকে বধ করবেই করবে। কারণ মৃত্যু নির্ধারিত আর ঐ সময় যখন আসে তখন পশুদের মত পালিয়ে পার পাওয়া যায় না। তবে যদি নির্ধারিত সময় না আসে তাহলে হয়ত পালিয়ে পার পাওয়া যায় এবং তা প্রমানিত। ঈদ আমাদেরকে অনেক শিক্ষাই দিয়ে থাকে যা প্রকাশ করার সময় ও সুযোগে প্রকাশ হবে। তবে নিজে নিজে একটু চিন্তা করে অনুধাবন করুন ঈদ কি শিক্ষা দেয় এবং আমরা কিভাবে এই শিক্ষাকে নিজেদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি। করোনা এবং ঈদ এই দুইয়ের শিক্ষার আলোকে আগামীর পৃথিবী এবং নিজের জিবনকে সাজান তাহলেই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার বহি:প্রকাশ ঘটবে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে এই নিঘূঢ় সত্যকে জানার জন্য সুযোগ দিন এবং সকলকেই আশির্বাদ করুন যাতে আপনার কাছে ফিরে আসতে কোন বাধা না থাকে।
লকডাউনের কঠোরতায় এখন বাংলাদেশ। স্বাধীনতা পূর্ব এবং পর এই দুইয়ে মিলে এমন পরিস্থিতি কেউ দেখেছেন বলে মনে হয়নি। তবে এবার সর্বাত্মক লকডাউন পালনে দেশবাসী শতভাগ স্বতস্ফুর্ত। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে এই সর্বত্মক লকডাউন পালনে অনিহা বা অপারগতার প্রকাশই বেশী। কিন্তু শহরের বাসিন্দারা শতভাগ পালনে বদ্ধপরিকর। বিনা প্রয়োজনে এমনকি প্রয়োজনেও ঘরের বাইরে এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান; শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলার কোন চিন্তা বা সম্ভাবনার যুক্তিও নেই। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শতভাগ আন্তরিকতারও কমতি নেই। সব মিলিয়ে একটি সভ্য জাতি হতে যে সব যোগ্যাতার বা গুনাবলীর প্রয়োজন তার সবকটিই এখন পরিপূর্ণ। তাই বাঙ্গালী পারে না এমন কিছু নেই। সবই পেরেছে এবং করে দেখিয়েছে। তবে এইক্ষেত্রে একটু দেরিতে বোধদয় হয়েছে মাত্র।
যারা আপনজন হারিয়েছেন এবং যারা এই অদৃশ্য করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তাদের সবার প্রতিই আমার বিনম্র শ্রদ্ধা, সহভাগিতা এবং কষ্টের অংশীদার হওয়ার অভিপ্রায় রইল। আমি সকলের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে শান্তি ও আনন্দের দিন ফিরিয়ে দেন এবং সাম্য ও ভারসাম্য রক্ষায় মানুষের সকল ষড়যন্ত্র যা সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সকল বিপদ ও আপদ তার থেকে রক্ষা করেন। সকলেই সৃষ্টিকর্তার স্মরণাপন্ন হই এবং তাঁর পবিত্রতা দিয়ে নিজেদেরকে সাজাই। যেন সকল অপবিত্র ক্ষতিকর অবস্থান থেকে নিজেকে, পরিবারকে, সমাজকে, দেশকে; সর্বময় বিশ্বকে রক্ষা করতে পারি। আল্লাহ তুমি আমাদের এই তৌফিক দান কর যাতে তোমার প্রতিটি ওয়াদা ও দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে বিরাজমান থাকে। তোমার দেয়া বিনামূল্যের দান গ্রহন করে আমরা যেন নিষকলুষ হই তুমি সেই ব্যবস্থা কর। আমিন॥

Leave a Reply

Your email address will not be published.