প্রশান্তি ডেক্স: দীর্ঘ প্রচেষ্টায় পর অবশেষে নিজের তৈরি সাইকেল চালিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিলেন সাইফুল। দীর্ঘ ছয় মাস চেষ্টা চালিয়ে সৌরবিদ্যুৎ চালিত এ সাইকেলটি তৈরি করেন সাইফুল ইসলাম। এটি জল-স্থলে চলতে পারে। বলা যায়, উভচরে চলে সাইফুলের সৌরবিদ্যুৎ চালিত সাইকেল। এছাড়া সৌর চালিত প্লেনও বানাতে পারেন সাইফুল। সাইফুলের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে। সে ওই গ্রামের আ: রাজ্জাক মোল্যার ছেলে। সাইফুল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সৌর শক্তি আলোর ফরিদপুরের সালথা উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। পরে তিনি জিএম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ওষুধ কোম্পানিতে সিনিয়র মেডিকেল প্রমোশন অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। এখন তিনি ওই কোম্পানির কুমিল্লায় কর্মরত। থাকেন কুমিল্লা শহরের শাসনগাছা নামক এলাকার একটি ভাড়া বাসায়।
সাইফুল বলেন, ‘আমার তৈরি করা সাইকেলের হ্যান্ডেল ও ক্যারিয়ারে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল রয়েছে। দুই চাকার দুই পাঁশে চারটি গোলাকার টিউব। টিউবের সাহায্যে সাইকেলটি পানিতে ভেসে থাকে। সাইকেল চালাতে প্যাডেল ব্যবহার করতে হয় না। কারণ, এটি সৌরবিদ্যুতে চলে।’ সাইফুল জানান, শুধু পানিতে নয়, স্থলপথেও সাইকেলটি চালানো যায়। তখন টিউব চারটি চাকার দুই পাঁশে আটকে রাখা হয়। সাইকেলটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো। সময় লেগেছে ছয় মাস। বর্তমানে সৌরবিদ্যুৎ চালিত ধান কাটার যন্ত্র ও রিকশা চালানোর যন্ত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন সাইফুল।
পাঁশাপাশি ১৫ জন ধারণক্ষমতার সৌরচালিত স্পিডবোট বানানোর চেষ্টা করছেন তিনি। যা জলের পাঁশাপাশি ডাঙায়ও চলবে। সাইফুল ইসলাম আরো বলেন, ‘যখন সে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো তখন সে সৌর বিদ্যুতে চালিত বাস তৈরি করেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করা সময় রকেট ও ড্রোন নির্মাণ করেন। এছাড়া তিনি সৌর চালিত ধান কাটার মেশিন, স্পিডবোর্ড, সৌর চলিত মটর সাইকেলসহ অসংখ্য সৌর চালিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি করে এলাকায় আলোচনার সৃষ্টি করে। তার স্বপ্ন এখন একই সাথে আকাশ এবং জলে চালানোর জন্য একটি প্লেন তৈরি করার।’ তবে সাইফুল আক্ষেপ করে বলেন, ‘অর্থের অভাবে আমার সবকিছু থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
যদি আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতা পাওয়া যেত তবে দেশের নবায়নযোগ্য সৌর শক্তিকে ব্যবহার করে নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবন করতে পারতাম।’ সাইফুলের বাবা আ: রাজ্জাক মোল্যা বলেন, ‘আমার ছেলেটা সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে অনেক কিছুই তৈরি করতে পারেন। সে সৌর চালিত বাস,সাইকেল ও রকেটসহ অসংখ্য সৌর চালিত ডিভাইস তৈরি করেছিল। এখন সে অর্থের অভাবে জিএম ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ওষুধ কোম্পানিতে কুমিল্লায় চাকুরী করেন।’ একই গ্রামের মো: আকরামুল করিম নামের এক ব্যাক্তি বলেন, ‘সাইফুলের প্রতিভা দেখে আমরা সত্যিই আশ্চর্য হয়ে যাই। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে অনেক কিছুই দেশের জন্য উপহার দিতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।’
মধুখালীর বাগাট ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার মো: মুন্নু মোল্যা বলেন, ‘সাইফুল সৌর বিদ্যুত চালিত ড্রোন তৈরি করে আকাশে উড়িয়ে ছিল। এছাড়া সে সৌর চালিত সাইকেল চালিয়ে ফরিদপুরের পদ্মা নদী পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু ছেলেটার যে মেধা তা খাটানোর জায়গা নেই এবং কেউ সহযোগিতাও করেনি। তবে সহযোগিতা পেলে ছেলেটা অনেক ভালো কিছু করতে পারবে।’ মধুখালীর ২ নং বাগাট ইউপি চেয়ারম্যান মো: মতিয়ার রহমান খাঁন বলেন, ‘সাইফুল নামের ছেলেটা পানির উপর দিয়ে সাইকেল চালাতে পারে। সে সৌর চালিত সাইকেল চালিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ছেলেটার যে মেধা তা কাজে লাগাতে টাকার দরকার, গবেষণার দরকার। একবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিং ওর বিষয়টা তুলে ধরেছিলাম তবে তেমন কোনো সাড়া না পাওয়াতে বেশি দূর আগাতে পারিনি।’ মধুখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এমন প্রতিভাবান ছেলে আমাদের উপজেলার গর্ব। তাঁর জন্য অবশ্যই ভালো কিছু কামনা করি। সাইফুল যোগাযোগ করলে আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মোস্তফা মনোয়ার বলেন, ‘আমি আপনার মাধ্যমে সাইফুলের বিষয়টি জানতে পারলাম। এরকম প্রতিভাবান ছেলে এই উপজেলায় আছে তা কেউ কখনো বলেনি। তিনি বলেন, সাইফুলের ব্যাপারটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এছাড়া এব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যা করণীয় তা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে।’