প্রশান্তি স্বাস্থ্য ডেক্স : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বাংলাদেশের সরকার দেশের সকল নাগরিকের জন্য কোভিড ১৯ এর ভ্যাকসিন নিশ্চিত করবে।
তিনি বলেন, “ভ্যাকসিন কিনতে যত টাকাই লাগুক না কেন, সেটা দেওয়া হবে। “ভবিষ্যতে আমরা বাংলাদেশে ভ্যাকসিন তৈরি করব, যাতে বাংলাদেশের মানুষের কোনো অসুবিধা না হয়। সেটাই আমরা করব।”
গত ২৭ জুলাই (মঙ্গলবার) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’ এর উদ্বোধন এবং ২০২০ ও ২০২১ সালের জনপ্রশাসন পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ইতোমধ্যে দেশের ১ কোটি ৮৭ লাখ মানুষের টিকা পাওয়ার তথ্য দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “বাংলাদেশের কোনো মানুষ, টিকা পাওয়ার যাদের বয়স হয়েছে, তারা কেউ বাদ যাবে না। আমাদের ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে সকলের জন্য এই টিকা ক্রয় করতে থাকব, আনতে থাকব এবং দিতে থাকব। সেই ব্যবস্থাটাও আমরা অবশ্যই করব।”
সরকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ভালো কাজ করলে যেমন পুরস্কার পাওয়া যাবে, ঠিক তেমনি খারাপ কাজের জন্যও কঠোর শাস্তি পেতে হবে।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। মাঠ পর্যায়ে কাজ করলে আপনারা অনেক বেশি জানার সুযোগ পান, মানুষের সুবিধা-অসুবিধাগুলো জানতে পারেন। কীভাবে একেকটা এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা যায়, সেটা আপনারা সব থেকে ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারেন।
“এবং আমি আশা করি, সেভাবেই আপনারা ভবিষ্যত পরিকল্পনা কীভাবে নেওয়া যায়, কীভাবে মানুষের সেবা করা যায়, কীভাবে মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়া যায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন যেন আমরা যাতে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি, সেটাই আমরা চাই।”
জনপ্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ৩৫ কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানকে এ অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন পদক দেওয়া হয়।
এর মধ্যে ২০২০ সালের জন্য জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৫টি এবং ২০২১ সালের জন্য ২০টি পদক দেওয়া হয় এ অনুষ্ঠানে।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২০২০ সালে জনপ্রশাসন পদক দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ অনুষ্ঠানে তাই দুই বছরের পদক একসঙ্গে দেওয়া হল।
জাতীয় পর্যায়ে তিন ক্যাটাগরির পুরস্কারপ্রাপ্তরা ১৮ ক্যারেট মানের এক ভরি ওজনের স্বর্ণপদক এবং সনদ পেয়েছেন । এর বাইরে জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তি শ্রেণিতে জনপ্রতি এক লাখ টাকা এবং দলগত ভূমিকার জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এইটুকু বলব, ভালো কাজের আপনি যেমন পুরস্কার পাবেন, আবার কেউ যদি কোনো খারাপ কিছু করে, তাদের কিন্তু ক্ষমা নেই। তাদেরও কঠোর শাস্তি পেতে হবে। এই শৃঙ্খলাটা থাকতে হবে, এই নিয়মটা থাকতে হবে। সেটাও অবশ্যই আমরা করব।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে অনুষ্ঠানে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তিনি বলেছিলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে হবে, তারা জনগনের খাদেম, সেবক, ভাই। তারা জনগণের… ভাই, জনগণের সন্তান। তাদের এই মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে’।
“অর্থাৎ আপনারা তো এই দেশেরই মানুষ। আপনারা তো পাকিস্তান থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। কাজেই এই বাংলাদেশের সব জায়গায় তো আপনার আত্মীয়, স্বজন সবাই জড়িয়ে আছে। কাজেই বাংলাদেশ যত উন্নত হবে আপনার আপনজনরাই তো সুন্দর জীবন পাবেন, ভবিষ্যত পাবেন। সেই কথা চিন্তা করেই দেশের জন্য কাজ করবেন। আপনাদের পেশাদরিত্ব, সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা যাতে বজায় থাকে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি যেন দেশের কাজে লাগে, সেটাই আমরা চাই।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে জাতির পিতা সরকারি কর্মচারীদের অনুশাসন দিয়ে বলেছিলেন, তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে যে তারা ‘শাসক নন, সেবক’।
“জাতির পিতা তার এই চিন্তা ধারার প্রতিফলন ঘটান আমাদের সংবিধানে। সংবিধানের ২১ এর ২ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট কিন্তু লেখা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। কাজেই এটা কিন্তু সংবিধানের নির্দেশ, যেই সংবিধান নিয়ে আমাদের এই দেশটা পরিচালিত হচ্ছে, সেটা আশা করি সকলে মনে রাখবেন।”
মহামারীর এই সময়ে বাজেট দেওয়া কঠিন ছিল জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “সেই বাজেট যেন ভালোভাবে বাস্তবায়ন হয় এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন মান ঠিক রেখে বাস্তবায়ন করা যায়, আর যত্রতত্র যেখানে সেখানে শুধুমাত্র একটা কিছু নির্মাণের জন্য নির্মাণ যেন না হয়, যেটা আদতে প্রয়োজন দেশের জন্য, মানুষের জন্য, সেই রকমই যেন আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পটা হয়, পরিকল্পনাটা হয়।”
ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।