আবদুল বারী, নীলফামারী…নীলফামারীর সিংদই বিল এবারই প্রথম হাজারো পদ্মফুলে ভরে উঠেছে। আগাছা আর লতা ভরা বিলের পানিতে ফুটেছে হাজার হাজার গোলাপি পদ্ম। পদ্ম পাতার ফাঁকে সূর্যের সোনালি আভা পানিতে প্রতিফলিত হয়ে সৌন্দর্য বাড়িয়েছে কয়েকগুণ।
দেখলেই মন ভরে যায়। এর অবস্থান নীলফামারী শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ইটাখোলা ইউনিয়নের সিংদই গ্রামে। দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির স্নিগ্ধতা দর্শনার্থীদের মনে আনন্দের দোলা দিয়ে যায়। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা লাল ও সাদা পদ্মফুল বিলের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ বিলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। ডিঙ্গি নৌকায় ভেসে জলের ছন্দতালে পদ্মফুল স্পর্শ করার টানে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
ডিঙ্গি নৌকায় বিলে ঢুকলে মনে হবে যেন অভ্যর্থনা জানাচ্ছে পদ্মরা। নৌকায় করে পদ্মবিল ঘুরতে সময় লাগবে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। যাতায়াত ব্যবস্থাও ভাল। মন ভোলানো দৃশ্য দেখলে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। আবার অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে পদ্মফুল দেখা আর একটু নির্মল বাতাস নিতে ছুটে আসছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিংদই বিলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা সেচ ক্যানেল। বিলের স্বচ্ছ পানিতে হাত ভিজিয়ে সুখের অনুভূতি নিচ্ছেন হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী। পরিবারের ছোট সদস্যদের জলজ উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন। কেউবা ছবি তোলায় ব্যস্ত।
নীলফামারী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সারাবান তহুরা বলেন, ‘পদ্মদীঘি’, ‘পদ্মবিল’, ‘পদ্মপুকুর’ শব্দগুলো আমরা পাঠ্য বইয়ে পড়েছি, বাস্তবে দেখিনি। আজ আমরা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি পদ্মবিল। যা আমাদের কাছে একটি আকর্ষণীয় জায়গায় পরিণত হয়েছে।
সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে মৌসুমী পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান সংশ্লিষ্টদের। পাশাপাশি পদ্ম বিলটিকে সংরক্ষণ ও আরও চিত্তাকর্ষক করতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর।
কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি অনার্সের শিক্ষার্থী অন্তরা আক্তার বলেন, গিয়েছিলাম পদ্ম বিলের পদ্ম দেখতে। মন জুড়িয়ে দুই চোখ মেলে দেখেছি। তিনি মনে করেন সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে এটি।
নীলফামারী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. নুরুল করিম বলেন, মানুষের জীবন এখন এমনিতেই ইটের পাঁজরে বন্দী। দূরন্ত শৈশব এখন স্বপ্নের অতীত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস উদ্বেগ। সব মিলিয়ে ভাল নেই মানুষ। এই অবস্থায় এই বিলের পদ্মফুলের ভুবন ভোলানো হাসি কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেয় মনের মলিনতা, শরীরকে করে তোলে প্রফুল্ল।
স্থানীয়রা জানায়, ১২.৯ একর বিলের মধ্যে কয়েকটি মাছের ঘেরে এই পদ্মফুল ফুটত। ঘের পরিষ্কার করে ফুলগুলো পানিতে ফেলে দেয় তারা। ঘের থেকে অবমুক্ত হয়ে এ বছরই এত পদ্মফুল ফুটেছে। তারপর চলতি বছর আগাম বৃষ্টি হওয়ায় সিংদই বিল জুড়ে পদ্মের এই বিপুল সমাহার হয়েছে। জানা যায়, গত পাঁচ সপ্তাহ ধরে নীলফামারী সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের সিংদই গ্রামের সিংদই বিল পদ্ম বিলে পরিণত হয়।
পদ্ম বিলের সার্বিক দায়িত্বে থাকা তানজিম ওয়াসতি টিটু বলেন, পদ্ম ফুল রক্ষার জন্য আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছি।
ইটাখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রশিদ মঞ্জু বলেন, বিলের সৌন্দর্য সংরক্ষণের বিষয়ে আমরা মনোযোগ দেব। আমরা চাইব এই পদ্মবিল যেন নষ্ট না হয় সেই ব্যবস্থা করতে।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, সিংদই পদ্মবিলটি সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।