শোকাতুর স্মৃতিরোমন্থন

প্রশান্তি ডেক্স্। এই লিখাটি সম্পূর্ণ মরহুম আব্দুল খালেক ভুইয়া কাকার স্মরণে। আমি আমার মৌলিক চাহিদার প্রয়োজনে কর্ম করে যাচ্ছি আর এই কর্মই আমাকে সময়ের সংকীর্ণতাই বেধে ফেলেছে। যার ফলশ্রুতিতে প্রীয়জনদের, শ্রদ্ধাভাজনদের এবং পরিচিত ও শুভাকাক্ষিদের অথবা আমার কাছে প্রত্যাশিতদের সেইভাবে খোজখবর নিতে পারছি না এমনকি মনের ইচ্ছাকেও বহি:প্রকাশে রূপান্তরিত করতে পারি নাই। এটাই আমার ব্যর্থতা এবং এই ব্যর্থতার জন্য সকলের নিকট ক্ষমা প্রার্থী। তবে মনের একটি ইচ্ছাকে পূরণ করতে সচেষ্ট থেকেছি আর সেটা হলো সকলের খোজ খবর নেয়া। এতে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহৃত হয়েছে তবে এই ক্ষেত্রে আমার মা আমাকে সহায়তা করেছে কাছের আত্মার আত্মীয়দের সম্পর্কে জানতে। তবে সবাইকে নিয়ে গর্ব করেছি এবং করে যাবার এই প্রত্যাশা আজীবন লালন করে যাব। এই করোনা কালে হারিয়েছি অনেক কাছের আত্মীয় যাদের মুখ সর্বক্ষণ আমার মানসপটে ভেসে উঠে। এইতো কিছুদিন আগে হারালাম ছুবুর কাকাকেসহ আরো অনেককে…। আর আজকে যার সম্পর্কে লিখছি তিনি আর কেউ নন আমার কাকা (আমার বাবার ফুফাত ভাই) জনাব আব্দুল খালেক ভুইয়া। বাড়ি কান্দঘর।
আমি আমার দাদুর খুবই প্রীয় ছিলাম আর দাদুও আমার প্রীয় ছিল তাই দুইজনের বন্ধন খুবই মজবুত এখন আছে এবং থাকবে। আর দাদুর সুবাদেই সবার সঙ্গে আমার বন্ধন এখনও অটুট আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কাকাকে আমি সম্ভবত জীবন তিনবার স্বচক্ষে দেখেছি। একবার আমাদের বাড়িতে আর দুইবার দাদুর বাড়িতে। তবে কাকাকে ভয় এবং শ্রদ্ধা দুটোই করতাম তাই বেশী কথা হয়নি। কাকা এলাকার স্বনামধন্য শিক্ষক (যাকে এক ডাকে সবাই চিনে)। এটা আমার গর্ব ছিল। দাদু সব কাকাদের এবং ফুফুদের ও ভাইবোনদের নিয়ে আমার কাছে গল্প করতেন; যা শুনে আমি পুলকিত হতাম আর গর্ববোধ করতাম। কাকাদের মধ্যে খালেক কাকা, মান্নান কাকা, রুহুলআমিন কাকা এবং হান্নান কাকা আর ফুফুদের মধ্যে জরিনা ফুফু ও ফাতেমা ফুফুর কথা মনে পড়ে। তবে রুহুল আমীন কাকা ও হান্নান কাকার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই গভীরে ছিল। হান্নান কাকা আমাকে পড়াতেন আর রুহুল আমীন কাকা আমার বেতার যন্ত্রটি মাঝে মাঝে মেরামত করে দিতেন; এতেই আমি খুব খুশি থাকতাম। তবে ফুফুদের মধ্যে ফাতেমা ফুফুকে কয়েকবার দেখিছি আর জরিনা ফুফুতো আমার খুবই প্রীয় ছিল কারন আমি ঐ ফুফুর বাসায় অনেকবার গিয়েছি আর মনের মত করো সময় কাটিয়েছি। বিশেষ করে ভৈরবের বাসায়, তখন ফেরি ছিল কিই-না মজা পেতাম ফুফুর সঙ্গে সময় কাটিয়ে। ফুফুও আমাকে নিজের সন্তানের চেয়ে বেশীই ভালবাসতো। ফুফাও ঠিক একই রকম ছিল। দুইজনই আমার স্মৃতিস্পটে দৃশ্যমান। ফুফাকে ওখানে সবাই ছোট বাবু বলে ডাকত আর আমি খুবই গর্ব করতাম। সেই ছোট ভাই বোনদের সঙ্গেও ঐ সময় খুবই মজা করতাম। কিন্তু বর্তমানে যোগাযোগ নেই বিধায় আমি আপমান ও লজ্জা বোধ করছি। তবে হান্নান কাকার কাছ থেকে সবারই খবর নিয়ে মনোতৃপ্তিতে তৃপ্ত থাকি। তবে বলতে পারি যদি কারো কোন প্রয়োজনে আসি তাহলে আমার মনের শান্তিটুকু আরো বৃদ্ধি পাবে।
এবার আসি খালেক কাকার কথায়: তিনি যখন আমাদের বাড়িতে গেলেন আমার মনে এখনও সেই স্মৃতি ভাসমান। মনে হলো একজন সম্মানীত মানুষ এলেন এবং আমার মা ও দাদি মিলে সেবাশুশ্রুতা করে কাকাকে আরো ধন্য করে তুললেন। কাকা নৌকা থেকে নেমে সামান্য খেটে আমাদের মুল ঘরে গেলেন। আর যখন আমি দাদুর সঙ্গে কান্দুঘর বেড়াতে যাই। তখন দাদু বলে তুই দুষ্টমি করবি না কারণ তোর বড় চাচা এবং চাচি দুষ্টুমি পছন্দ করে না আর বড় আপা (পারুল আপা) খুব ভাল ছাত্রী তাই তাদের লেখা পড়ায়ও বাধা দিবি না। আমি বললাম ঠিক আছে দাদু। ঠিক সেই অনুযায়ী জীবনে দুইবার যাওয়ার দুটোই পর্বেই আমি কাকা-চাচী এবং আপাসহ বাকিদের একবার বা দুবার সাক্ষাত করে কুশলাদী বিনিময় করেছি মাত্র তার বেশী কিছু নয়। তবে মনে পড়ে পচ্ছিমের ঘরে কাকারা থাকতেন আর পূর্বের ঘরে দাদু এবং আমি থাকতাম। তবে একটি ডালিম গাছ ছিল আমার যতদুর মনে পড়ে। সেই থেকেই কাকাকে ও আপা এবং ছোট ভাই বোনদের প্রতি শ্রদ্ধাসহ ভালবাসা ছিল অফুরন্ত। তবে তাদেরকে নিয়ে গর্ব করতাম। পারুল আপু ডাক্তার হয়েছে শুনেও গর্ব করি এবং চম্পা আর ছোট ভাইটির জন্যও গর্ব করি। তবে অক্ষমতা শুধু যোগাযোগের। তোমাদেরকে বলছি নিজ বাড়ি এবং ভাই ভেবে সব সময়ই তোমাদের জন্য আমাদের আবাস উন্মুক্ত। ভালবাসার সমস্তটুকু উজার করেই তোমাদের সেবাযত্ন ও আপ্যায়ন হবে এবং হৃদয়ের গভীর থেকেই ভালবাসা উৎসর্গ করা হবে এই বিশ্বাস রেখো; নিজ আবাস ভেবেই আসার আহবান রইলো।
কাকার সম্মানে এমনকি তোমাদের সম্মানে আমরাও সম্মানীত এবং গর্বিত; ঠিক তেমনি তোমরাও। সকল কাকা এবং ভাই বোনদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রইল। দাদুর সঙ্গে আমার সব জায়গায়ই যাওয়া হয়েছে তবে এখন স্মৃতিতে সেইগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে। দাদু নেই কিন্তু আজও আছে হৃদয়ে এবং তোমরাও। সবাই ভাল থেকো এবং যোগাযেগা সম্বন্ধটা আর একটু শক্তিশালী করো। আমি ওয়াদা দিচ্ছি তোমাদের পাশে থাকবো। সব দাদু ও কাকাদের এবং ফুফুদেও প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধ এবং মোনাজাত করি যেন আল্লাহ তোমাদের সবাইকে বেহেস্তের সু উচ্ছ স্থানে সম্মানের সহিত আসিন করান। আমরাও আসছি আবার দেখা হবে এই বিশ্বাস ও নির্ভরতা আল্লাহর উপর আমার রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.