ভজন শংকর আচার্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার কসবা উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের মইনপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্যের বাম হাত পিটিয়ে ভেংগে দিয়েছে দৃর্বৃত্তরা। সাবেক ওই মেম্বারের নাম রেনু মেম্বার ওরফে রেনু ভান্ডারী (৭৫) । তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আইনমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গ্রামের মানুষকে নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
আহত রেনু ভান্ডারী বলেন; আমি থানায় মামলা করবোনা, মামলা দিতে টাকা লাগবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নিকট বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি বলেছেন মাথা ঠান্ডা রাখতে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কসবা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দুরে গত শুক্রবার (৬ আগষ্ট) দুপুরে রেনু ভান্ডারীর বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় সকলের চোখে মুখে আতংক। মইনপুর পূর্ব পাড়া বিজিবি ক্যাম্পের পুকুরের পশ্চিম পাড়ে তার একটি টিনসেড ঘর। অতি সাধারন জীবন যাপন করেন। স্ত্রী ও একপুত্র মারা গেছে। অপর পুত্র কাতার প্রবাসী। এক প্রতিবন্ধি মহিলাকে বিয়ে করেছেন। আবারো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
ঘরে ঢুকতেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন রেনু ভান্ডারী। তার বাম হাত প্লাস্টার করা। এক্সরেতে দেখা গেলো বাম হাতের কনূইর নিচে হাড় দু’টুকরো হয়ে আছে। কিভাবে এমটি হলো প্রশ্নের জবাবে বলেন গত ৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে মইনপুর বিজিবি ক্যাম্পের পাশে পানিয়ারুপ গ্রামের দেলোয়ার মাষ্টারের সংগে একটি মামলা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। তার ষড়যন্ত্রে ৫ বছর যাবত বিনাদোষে একটি মামলার আসামী হয়ে আছি। আমি বলেছি, মন্ত্রীর গ্রামের মানুষ বলে শক্তি দেখাও। একথা বলতেই সে ক্ষিপ্ত হয়ে কায়েমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ও সম্ভাব্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী ইখতিয়ার আলম রনিকে ও তার গ্রামের লোকজনদের ফোন দেয়। রনি আসার পর পর ১৫/১৬ টি মোটরসাইকেল নিয়ে প্রায় ২৫/৩০ জন উঠতি বয়সের তরুন আমাকে ঘিরে ফেলে।
অজ্ঞাতনামা এসকল তরুনরা আমাকে কাঠ, চেলি ও রড দিয়ে এলোপাথারী পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার বাম হাত ভেংগে গেলে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। মুর্মূর্ষ অবস্থায় আমি কাতরাতে থাকলে রনি আমাকে হাসপাতালে নিতে চায়। আমি তার সাথে হাসপাতালে যাইনি। মইনপুর গ্রামের পূর্ব পাড়ার মামুন, ফরিদ মিয়ারা আমাকে হাসপাতালে কসবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করে। চিকিৎসকের পরামর্শে এক্সরে করে দেখি আমার হাতের হাড় দু’ টুকরো হয়ে গেছে।
থানায় মামলা করলেন না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিষয়টি আইনমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন মাথা ঠান্ডা রেখে চিকিৎসা করতে। মামলা করলে টাকা-পয়সা লাগবে। আমি গরীব মানুষ। ওরা আবার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানী করবে।
প্রত্যক্ষদর্শী মাহবুবুল আলম সুমন বলেন; দেলোয়ার মাষ্টারই এসকল সন্ত্রাসীদের ফোন করে এনে রেনু ভান্ডারীকে হামলা করিয়েছে। মৌমাছির মতো রেনু ভান্ডারীকে তারা ঘিরে ফেলে। ছোট ছোট ছেলেরা এমন একজন মুরব্বীকে ধরে মারধোর করে হাত ভেংগে দিয়েছে এটা মেনে নেয়া যায়না।
বিজিবি ক্যাম্পের পাশে চা বিক্রেতা রুহুল আমিন বলেন, রেনু চাচা চা চাইলে আমি তাকে চা দেই। এসময় রনি, দেলোয়ার মাষ্টার ও আলীম মেম্বারের উপস্থিতিতে ২৫/৩০ জন পোলাপান এসে রেনু চাচাকে মারধোর করে এবং তার হাত ভেংগে দেয়।
এ বিষয়ে ইখতিয়ার আলম রনি জানান; পানিয়ারুপ গ্রামের উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক দেলোয়ার মাষ্টার ফোন করে আমাকে বলেন; রেনু ভান্ডারীর সংগে ঝামেলা হয়েছে। রেনু ভান্ডারী আইনমন্ত্রী, দেলোয়ার মাষ্টার ও পানিয়ারুপ গ্রাম নিয়ে গালমন্দ করেছে। আমি কসবা থেকে মোটরসাইকেলে এসে রেনু ভাইকে জিজ্ঞাসা করবো এমন সময়ই অজ্ঞাতনামা কিছু পোলাপান কাঠের চেলি ও লাঠিসোটা দিয়ে রেনু ভাইকে পেটাতে থাকে। রেনু ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে আমার হাতেও অসংখ্য আঘাত লেগেছে। রনি আরো বলেন, আমি ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবো আমি কেন উনাকে মারতে যাবো ? আমি বলেছি সঠিক বিচার করবো কিন্তু তিনি বিচারে বসবেন না।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, রেনু ভান্ডারী নিয়মিত গাঁজা সেবনকারী। সে আইনমন্ত্রী এবং আমাকে ও আমাদের গ্রাম নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছে। এক পর্যায়ে সে বলেছে মন্ত্রী না থাকলে মন্ত্রীর গ্রামের লোকদের এবং আমাকে দেখে নেবে। তাই আমি রনিকে আসতে বলেছি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। কারা হামলা করেছে এসকল ছেলেদের আমি চিনি না।
এ বিষয়ে কায়েমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী ভূইয়া বলেন; যারাই সাবেক ইউপি সদস্য রেনু ভান্ডারীকে মারধোর করে হাত ভেংগেছে তারা গুরুতর অপরাধ করেছে। মন্ত্রী এবং মন্ত্রীর গ্রামকে নিয়ে রেনু ভান্ডারী কেন কথা বলবে এটা আমার বোধগম্য নয়। তবে শালিসে বসলে ন্যায়-অন্যায় জানা যেতো। একটা গ্রামে সকল শ্রেনীর মানুষই বাস করে। আমি নিজে গিয়ে তাকে দেখে এসেছি। শালিসের কথা বলেছি। রেনু ভান্ডারী বলেছেন; এই ভাংগা হাত দিয়ে আল্লাহর কাছে বিচার চাইবো। মানুষের কাছে বিচার চাইবো না। তার এমন কথায় আমরা বিব্রত। লোকটা মাইজভান্ডার দরবার শরীফের মুরিদ। আর দশটা মানুষের মতো না। এ বিষয়ে কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আলমগীর ভ’ইয়া বলেন, তিনি এ ব্যাপারে এখনো কোনো অভিযোগ পাননি। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
তারিখঃ ০৭-০৮-২০২১ ইং।