৯৬তম জন্মদিনে গভীর ভালবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি

প্রশান্তি ডেক্স…। ৯৬ তম জন্ম-বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রয়াত মহান নেতা “অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেব” (১৯২৫-২০০২)… | ১৯২৫ সালের ১লা আগষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার পানিয়ারোপ গ্রামে জন্মেছিলো সোনার বাংলার এক অন্যতম আদর্শ, জন্মেছিলো কসবা-আখাউড়ার এক অমলিন নক্ষত্র। যিনি ২০০২ সালের ২৮শে অক্টোবর আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে। রেখে গিয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশে উনার আদর্শিক জীবনযাত্রার অনন্য দৃষ্টান্ত ও অমর কীর্তি।
যিনি বাংলাদেশ আওয়ামী মুসলিমলীগ প্রতিষ্ঠায় দিয়েছেন শ্রম, প্রজ্ঞা ও মেধা। সাংগঠনিক দক্ষতা বলে তিনি ছিলেন আওয়ামী মুসলিম-লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ছাত্রজীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি বাঙ্গালী জাতির চির মুক্তির লড়াইয়ে নিরলস শ্রম ও মেধা দিয়ে পাশে ছিলেন ঘনিষ্ঠ সহচর ও সহপাঠী হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই হলে থেকে! কখনো একই খাবার ভাগাভাগি করে খেয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্ররাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ ও জাতির কল্যাণে অবরুদ্ধ সংগ্রাম করেছেন ছাত্রজীবন থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতিতে অন্যতম সংগঠক হিসেবে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন মাতৃভাষার দাবীতে এবং বাঙ্গালির চির-মুক্তির লড়াইয়ে।
তিনি ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রাষ্ট্র ভাষার আন্দোলনকে শক্তিশালী ও সফলকাম করতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সমন্বয়ক হিসেবে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন রাজপথে। মাতৃভাষা বাংলার দাবীতে “ভাষা আন্দোলনে” অন্যতম ছাত্রনেতৃত্ব। মাতৃভাষা বাংলার জন্য হয়েছেন নির্যাতিত, করেছেন কারাবরণ।
পাকিস্তানি সৈর-শাসকেরা অন্যায়ভাবে সামরিক আইন জারি করে সহজ-সরল বাঙ্গালির উপর চালিয়েছে পাশবিক ও অমানুষিক নির্যাতন। বাঙ্গালি জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি হরনকারী সৈরশাসকের জোর, জুলুম, অত্যাচার মেনে নিতে পারেনি সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেব।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তিলে তিলে গর্জে ওঠা বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের মেধা ও দক্ষতায় পাশে ছিলেন সর্বত্র সিরাজুল হক। জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কামনায় ৬৯’এ গণঅভ্যুত্থানেও তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে। পাকিস্তানি সৈরশাসকের হাতে গ্রেফতার হয় বঙ্গবন্ধু ও তার সকল সহচর, রেহাই পাননি আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উজ্জ্বল নক্ষত্র সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেব।
অমানুষিক নির্যাতন, জেল-জুলুম কিছুই দাবিয়ে রাখতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম, রুখতে সক্ষম হয়নি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব। ৭০ এর জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কসবা-আখাউড়া গণমানুষের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় অধিবেশনের সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত মহান নেতা সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেব। পাকিস্তানি সৈরাচারী হায়নাদের নির্বাচনে পরাজিত করেও বসতে পারেননি জাতীয় অধিবেশন, পারেনি জাতিকে সুবিচার দিতে! আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে।
বাঙ্গালি জাতিকে পরাধীনতার শিকল থেকে চিরমুক্তি দিতে মহান স্বাধীনতার স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী জনতাকে দিয়েছেন তিনি সুসংগঠিত নেতৃত্ব, দেখিয়েছেন সোনালী ভোরের হাতছানি। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতেও অন্যতম সংগঠক হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধে রেখেছেন অমর কৃতিত্ব।
অত্যন্ত মেধাবী সিরাজুল হক বাচ্চু সাহেব স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রনেতা। মেধা এবং উন্নত চিন্তাচেতনায় কেবল দেশবরেণ্য আইনজীবীর সুখ্যাতিই নন! তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের দুই বারের সভাপতি। উনার ন্যায়পরায়ণতা ও আদর্শিক সাংগঠনিক দক্ষতায় তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদকে অলংকৃত করে আসিন হন।
৭৫’এ ভয়াল ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবার এবং জাতীয় চারনেতাকে নির্মমভাবে হত্যাকরে বাংলার ইতিহাসে কলঙ্ক রচনা করে বাঙ্গালী জাতিকে কলঙ্কিত করে সরকার গঠন করে বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক। জাতীয় অধিবেশনে মোশতাক সরকারের দেয়া মন্ত্রীত্বকে থুথু দিয়ে, মোশতাককে অবৈধ সরকার আখ্যায়িত করে বঙ্গবন্ধু সহ জাতীয় চারনেতা হত্যার তীব্র নিন্দা ও বিচারের দাবি জানিয়ে দুঃসাহসিক ভূমিকা রেখেছিলেন আমাদের অমলিন আদর্শ সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেব। পক্ষান্তরে অনেকেই কুলাঙ্গার মোশতাকের অবৈধ সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসিন হন স্বার্থপরের ন্যায়।
পরবর্তীতে তিনি বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার জেল হত্যা মামলা সংগঠিত করায় এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে তিনি করেছেন সুবিচারের অপ্রতিরোধ্য সংগ্রাম। পাশাপাশি রাষ্ট্র পক্ষের প্রধান আইনজীবী হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন যুদ্ধাপরাধী মামলায়। অত্যন্ত দুঃখ এবং পরিতাপের বিষয় উনার জীবদ্দশায় সে বিচার দেখতে পারেননি। তিনি ইহকালের মায়া ত্যাগ করে আমাদের কাদিয়ে ২০০২ সালের ২৮শে অক্টোবর পারি জমায় না ফেরার দেশে।
উনার সুযোগ্য উত্তরসূরী, কসবা-আখাউড়ার আকাশে আজ উদীয়মান সূর্য আমাদের অভিভাবক মাননীয় আইনমন্ত্রী জননেতা জনাব আনিসুল হক সাহেব পিতার অসমাপ্ত দায়িত্বভার নিয়ে মর্মে মর্মে কার্যকর করেছেন বঙ্গবন্ধু, জেলহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য। উনারই নীতি, আদর্শ, নিষ্ঠা ও দক্ষতায় আজ বাঙ্গালি জাতি কলঙ্কমুক্ত।
মহান এ নেতার রেখে যাওয়া সুযোগ্য উত্তরসূরী আমরা কসবা-আখাউড়া বাসির জন্য এক অনন্য উপহার অ্যাডভোকেট আনিসুল হক-কে। যে সূর্যের আলোক-রশ্মিতে আমরা কসবা-আখাউড়া বাসি আজ আলোকিত এবং সমৃদ্ধ।
আপনার নীতি, আদর্শ, সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম স্বাধীন বাংলার ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেব। আপনার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি!!

Leave a Reply

Your email address will not be published.