সচেতনতার বার্তা নিয়ে বাড়ি বাড়ি ব্র্যাককর্মীরা

প্রশান্তি ডেক্স ॥ জয়পুরহাট সদর উপজেলার শাহাপুর কবিরাজপাড়া গ্রামের রহিমা বেগমের (৪৮) এক সপ্তাহ ধরে জ্বর-সর্দি। চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করছিলেন। রহিমার বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন ব্র্যাকের স্বাস্থ্যসেবিকা মোছা. খুশি। তিনি জানান ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মী তহুরা খানমকে। ৫ আগস্ট সকালে রহিমার বাড়িতে গিয়ে তাপমাত্রা, অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করেন তহুরা। এরপর মুঠোফোনে ব্র্যাকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে রহিমার কথা বলান। চিকিৎসক সব জেনে তাঁকে ওষুধ ও পরামর্শ দেন।

করোনাকালে বাড়িতে বসে এমন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ায় খুশি রহিমা খাতুন। তাঁর মতো জয়পুরহাট জেলার অনেকেই বাড়িতে বসে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এই টেলিমেডিসিন সেবা পাচ্ছেন। এর বাইরে ব্র্যাকের কর্মীরা হাটবাজার, মসজিদ, মন্দির ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাস্ক ও করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করছেন। মানুষকে টিকা নিতেও উদ্বুদ্ধ করছেন তাঁরা।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির অধীনে করোনা প্রতিরোধে তিন মাসব্যাপী নেওয়া কর্মসূচির আওতায় এই কার্যক্রম চলছে। জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলায় ‘করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দুর্গ’ নামে জুন থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

কর্মসূচির জয়পুরহাট সদর কার্যালয়ের এলাকা ব্যবস্থাপক দেবাশীষ ব্যানার্জি জানান, এ পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখ মাস্ক বিতরণ করেছেন। টিকা নেওয়ার জন্য ৪৬৮ ব্যক্তির নিবন্ধন করেছেন। ৩২৮ জনকে টেলিমেডিসিনের সহায়তায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিনা মূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। ব্র্যাকের ৪৪১ জন সেবিকা ও ৪১ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া ১১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রুপের (সিজি) প্রতিটিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১৭ জন সদস্য রয়েছেন। জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এসব কমিটিতে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

গত ৫ আগস্ট জয়পুরহাটের মাছুয়াবাজারে দেখা যায়, এক ব্যক্তি হ্যান্ড মাইক নিয়ে বাজারে আসা লোকজন ও দোকানিদের সচেতন করছেন। মাস্ক ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করছেন। আবু বক্কর সিদিক নামের ওই ব্যক্তি নিজেকে ব্র্যাকের করোনা হটস্পট মোবিলাইজার পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘মাছুয়াবাজারটি করোনা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত। জেলায় এমন ২২৫টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে অনেকেই মাস্ক ছাড়া এসেছেন, কেউ মাস্ক পকেটে আবার থুতনির নিচে রেখেছেন। যাঁদের মাস্ক নেই, তাঁদের মাস্ক দিচ্ছি।’

বাজার থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের শাহাপুর গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, শাহাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রুপের সদস্য সভা করছেন। কমিটির ১৭ সদস্যের পাশাপাশি ব্র্যাকের কর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে এতে অংশ নেন।

সিভিল সার্জন ওয়াজেদ আলী বলেন, করোনা মোকাবিলায় ব্র্যাকের সামাজিক দুর্গ প্রকল্পের আওতায় মাস্ক বিতরণ, টেলিমেডিসিন সেবাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জেনেছেন তিনি। জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, করোনা মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি ব্র্যাকও কাজ করছে। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী বলেন, চারটি স্তম্ভের মধ্যে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রথমটি হচ্ছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধমূলক সচেতনতা তৈরি করা। এরপরে রয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ মাস্ক বিনা মূল্যে বিতরণ এবং মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা তৈরি। তৃতীয়টি হচ্ছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগ শনাক্তকরণ এবং ব্যবস্থাপনা। সর্বশেষ স্তম্ভটি হচ্ছে টিকা নিয়ে মানুষের ভীতি ও ভুল ধারণা দূর করা এবং টিকা গ্রহণে মানুষকে উৎসাহিত করা। তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এতে ৪১টি এনজিও অংশ নিচ্ছে। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, এসকেএস ফাউন্ডেশন, দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ এবং ব্র্যাক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.