লকডাউন পরবর্তী স্বস্তী

লকডাউন পরবর্তী সময় স্বস্তীর বার্তাই বইছে সর্বত্র এই কথা বলা যাবে না তবে ঢাকা বা সমগ্র দেশ ফিরে পেতে যাচ্ছে নিশ্বাস ফেলার স্বস্তী। ঢাকা ফিরে পেতে যাচ্ছে সেই আগের চিরচেনা সকল কিছু। তবে আরো কিছুদিন সময় লাগবে আগের অবস্থানে যেতে। এই ক্ষেত্রে সকলের সহযোগীতা অব্যাহত থাকলে হয়তো অচিরেই ঢাকা ঢাকাকে চিনাতে সক্ষম হবে। অফিস আদালত, কল কারাখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সকলেই এখন অজানা আশঙ্কায় আতঙ্কিত, চিন্তিত ভবিষ্যৎ নিয়ে; শঙ্কিত মৌলিক চাহিদার যোগান নিয়ে। তারপরও মানুষ সামনে এগিয়ে যাবে এবং যাচ্ছে প্রকৃতির নিয়মে। দমবন্ধ পরিবেশ থেকে বের হয়ে এসে মুক্ত পরিবেশে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে যে সকল প্রতিবন্ধকতা তা থেকে কাটিয়ে উঠতে এখন মানুষ মরিয়া।
আশার কথা হলো বিশ্ব মোড়ল বা ধনীদের চক্রান্ত থেকে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের যে স্বাভাবিক জীবনাচরণ তা কখন যে আবার নতুন আঙ্গিকে সমান্তরাল হবে তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে আশার কথা হলো সরকার টিকার যোগান দিতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং যতটুকু সম্ভব ততটুকু জনসম্মুখে আনয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। প্রচলিত সিমাবদ্ধতার মাঝেও ইতিবাচক সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে সেই বহুল প্রচলিত জন কল্যাণ এবং জনসন্তুষ্টির জন্য। মানুষের চাহিদারর শেষ নেই পাশাপাশি সিমাবদ্ধতারও শেষ নেই। এই দুইয়ের সমন্বয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়ার হিসেব নিকেশ করতে এখন মরিয়া সকলে। বিশ্বব্রাক্ষান্ডের মালিক আল্লাহর হিসেব নিকেশের সঙ্গে যেন কোনই মিল নেই এই বর্তমানের হিসেব ও নিকেশে। তারপরও আমরা থেমে থাকবো না বরং এগিয়ে যাচ্ছি ও যাব তাই এই এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণায় অগ্রজ দাবি হলো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপনের।
আমাদের লকডাউন ও আইন এই দুইকে শ্রদ্ধা দেখাতে গিয়েই মানুষ খিমশীম খাচ্ছে। তবে জনমনে অদৃশ্য করোনার কোন ভয় ছাপ ফেলতে পারেনি। শহুরে বা গ্রামে কোন স্থানেই ঐ ভয় পরিলক্ষিত হয়নি তবে সচেতনতার বৃদ্ধি দৃষ্টিগোচর হয়েছে মাত্র। কোন কোন ক্ষেত্রে জোর করে ঐ সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও প্রতিয়মান হয়েছে। মানুষ নিজের প্রয়োজনে মৃত্যুঝুকি নিয়েও প্রমান রেখেছে অকূতভয় ভীড় হিসেবে। তাই এই লকডাউনেও বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে বাঙ্গালী বিরের জাতি এবং এই বীরেরা অদৃশ্য করোনাকে ভয় করে না। তাই বাধভাঙ্গা জোয়ারে সামিল হয়ে তা প্রকাশ ও দৃশ্যমান রেখেছে। কোনভাবেই ঘরবন্দি করে রাখা যায়নি।
রোগী ও মৃত্যুর সংখা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং হাসপাতালে শয্যার অভাও প্রকট হয়েছে তাতেও এই বীরের জাতির কোন চিন্তা বা ভাবনার পরিবর্তন হয়নি। বরং পরিবর্তন হয়েছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও টিকে থাকার লড়াইয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার দৃশ্যমান কর্মকান্ডের। সরকার বিচলিত ও চিন্তিত এই ভেবে যে, সকলে একযোগে অসুস্থ্য হয়ে গেলে কিভাবে মোকাবেলা করবে এবং কিভাবে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখবে এই ভেবে কিন্তু জনগণ এই যুক্তি বা বুদ্ধি অথবা চিন্তার সঙ্গে এখনও যুক্ত হতে পারেনি। তাই এই একই চিন্তায় মনোনিবেশ করানোর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুবা একতরফা চিন্তা বা কর্ম কোন কাজে আসবে না। সরকার + প্রশাসন+ জনগণ এবং সেবার কাজে নিয়োজিতরা একযোগে একচিন্তায় ও পরিকল্পনায় কাজ করতে পারলেই সফলতা শতভাগ সুনিশ্চিত হবে।
লকডাউনেও অভিযান অব্যাহত ছিল এবং দোষত্রুটি খোজার কাজে গতিময়তা ছিল; ঠিক পাশাপাশি অনৈতিক ও অন্যায় এবং অবৈধ কাজের গতিময়তাও কিন্তু বাড়ন্তই ছিল। তাই ঐ অজানা আশঙ্কা বা ভয় ঐ দুইয়ে কোন ছাপ ফেলতে পারেনি। সংবিধান দ্বারা প্রাপ্ত অধিকারের খর্বতেও কাজ চলছে এমনকি দোষি সাব্যস্ত হওয়ার আগেই বিভিন্ন উপাধি দিয়ে ভূপাতিত করার নজিরও পরিলক্ষিত হয়েছে। কোন কিছুরই যেন কমতি নেই। তবে মানুষের মনে কোনরকম ভয়ের সংকা ছিলনা এটা স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়েছে এবং এই মানুষকে কোন অন্ধকারই আর ভয় দেখাতে পারবে না তবে যারা ঐ অন্ধকারের সঙ্গেই বসবাস করছে সেই তারার ক্ষেত্রেই এই লিখা বা কথাগুলো শতভাগ প্রযোয্য। সাধারন এবং আল্লাহ ভক্তরা ঐ কথা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। কারণ তারা আল্লাহর অভীপ্রায়ে সদাজাগ্রত থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ভয় এবং নির্ভয় এই দুটোই তাদের জানা এবং প্রতিনিয়ত চেতনায় কাজ করে যাচ্ছে। তবে তাদের বিচরণ প্রচারিত ও প্রকাশিত নহে বরং নিরবেই বিরাজমান থাকছে।
যারা ভাবার, যারা ব্যবস্থা নেয়ার, যারা সুরক্ষা দেয়ার, যারা পরিকল্পনা নেয়ার এবং যারা ঐ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার কাজে সম্পৃক্ত তাদের এমনকি যারা ঐ কাজগুলিকে তদারকি করছেন তাদের শুভদৃষ্টি এবং শুভবুদ্ধীর উদয়ের জন্য সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য এখন অতিব জরুরী হয়ে পড়েছে। তাই মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট মোনাজাত করি যেন তিনি তাদেরকে জ্ঞান বুদ্ধি এবং বিভেক দিয়ে ফলপ্রসুতায় পৌঁছতে সাহায্য করেন। মহান খোদা তায়ালার পরিচালনায় সকল কিছুকে পরিবর্তন করে দেন এবং ইতিবাচক শান্তি বিকাশে রূপলাভে শতভাগ সফল বলতে ও দেখতে এবং উপভোগ করতে সুযোগ করে দেন। একটি কথা বলতে চাই— মানুষ দোষ খুঁজে এবং প্রশাসন দোষ খোঁজে অথবা আইন দোষ খোঁজে প্রমানসহ অথবা প্রমানহীনভাবে শাস্তি দেবার জন্য আর আল্লাহ দোষ খোঁজেন বা দেখেন শুধু শতভাগ নি:শর্তভাবে মাফ করার জন্য। তাই আল্লাহর দৃষ্টিতে আমরা তাঁর প্রতিমূর্তীতে সৃষ্টি; তাই তার গুনাবলীতে গুনান্বিতও বটে; সেই বিবেচনায় যেন আমরা ক্ষমাশীল হয়ে অন্যকে ক্ষমা করা বা মাফ করার মানুষিকতাই পরিপূর্ণ হই। এই বিষয়গুলো যেন প্রতিদিনের চর্চায় আনয়ন করি কারণ আল্লাহ বলেছেন ক্ষমাশিলকে তিনিও ক্ষমা করবেন। যারা অন্যকে মাফ করে তাদেরকে আল্লাহও মাফ করে দিবেন এটা তাঁর (আল্লাহর) ওয়াদা।
আসুন আমরা অন্যদের দোষ না খুজি এবং নি:শর্তভাবে ক্ষমা করি ও নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিই। তবে বলতে পারেন কিভাবে বুঝব আমারও সময় হয়েছে ফিরে যাবার। হ্যা এই ক্ষেত্রে হাদিছ এবং আল্লাহভক্তদের অভিজ্ঞতার আলোকেই বলা যায় যে, মাবুদ আমাদেরকে সতর্ক করেন এবং সময় শেষ হওয়ার লক্ষণগুলো একবার নয় বারবার দৃষ্টিসীমায় আনয়ন করেন শুধু উপলব্দি এবং জ্ঞানের আলোকে বুঝে নেয়ার বিষয়টি আমাদের নিজেদের কাধেঁ স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেন। যেমন ১। আমাদের বয়স এবং শরীরের শক্তি ও গতি-প্রকৃতির পরিবর্তন। ২। বিভিন্ন বয়সের রোগে আক্রান্ত হওয়ার উদাহরণ। ৩। দাত পড়ে যাওয়া। ৪। চোখে কম দেখা। ৫। চুল ও দাড়ি পেকে যাওয়া। ৬। কানে কম শুনা। ৭। হাটতে অপারগতা এমনকি দাড়াতেও শক্তি না পাওয়া। এই ধরণের অনেক সতর্কতা আমাদেরকে চেতনা দেয় যে, সময় শেষ হচ্ছে প্রস্তুত হও ফিরে যাবার জন্য । কিন্তু আমরা উপলব্দি করি না এমনকি বুঝতে অপারগ হই বরং চেষ্টা করি আরো কয়টা দিন বেঁচে থাকার প্রতাশায়। মুত্যৃর দুয়ারে দাড়িয়ে আজরাঈল যান কবজের সময়ও শক্তিহীন অবস্থায় চেষ্টা করি বেঁচে থাকার জন্য। হায়রে জীবন। সময় থাকতে সময়ের মূল্যদিতে প্রস্তুত হও এবং যা সত্য যা উপযুক্ত যা সৎ যা খাঁটি যা সুন্দর যা সম্মান পাবার যোগ্য, মোট কথা যা ভাল এবং প্রশংসার যোগ্য সেইদিকে তোমরা মন দাও।
একজন মানুষের জীবনে শেষ ইচ্ছা ও স্বস্তি কি বলতে পারেন? যদি পারেন সেই স্বস্তিদায়ক শেষ ইচ্ছায় মনোনিবেশ করুন। নতুবা আল্লাহর সান্নিধ্যে এসে মোনাজাতে কামনা করুন যেন আপনি শেষ ইচ্ছা বুঝতে পারেন আর সেই ইচ্ছার বাস্তবায়নে জীবন শুরু এবং শেষ পর্যন্ত সময়টুকু ব্যবহার করতে পারেন। আমরা আমাদের ইচ্ছা এবং শয়তানের ইচ্ছায় যেন এক না হয় বরং আল্লাহর ইচ্ছায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করি। আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টির পূর্বেই আমাদের জন্য তাঁর ইচ্ছামাফিক পরিকল্পনা করে রেখেছেন। আর সেই ইচ্ছা ও পরিকল্পনা আমাদের মঙ্গলের জন্য। শেষাংষে এই আল্লাহর ইচ্ছা যা তাঁর কালামে উল্লেখিত তা প্রকাশ করে আজকের মত বিদায়। “তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনার কথা আমিই জানি। সেই পরিকল্পনা তোমাদের মঙ্গলের জন্য; ক্ষতির জন্য নয়। আর সেই পরিকল্পনার মধ্যদিয়েই তোমাদের ভবিষ্যতের আশাগুলো পূর্ণ হবে।” আমীন॥

Leave a Reply

Your email address will not be published.