সাইফুল ইসলাম ॥ সেই ভয়াল ২১ আগস্ট, সেদিন ঘড়ির কাঁটা তখনো সাড়ে পাঁচটা বাজেনি। নেত্রীর (শেখ হাসিনার) বক্তব্য শেষ, মঞ্চ থেকে নেমে যাবেন, ঠিক সেই সময় মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন ‘আওয়ামী লীগের শান্তির সমাবেশ’। মুহূর্তেই চেনা কালো পিচঢালা সড়ক হয়ে উঠে রক্তে রঞ্জিত, চারদিকের মানুষের আহাজারি, চিৎকার, বাঁচাও বাঁচাও, যেন এক মরণক্ষেত্র- মৃত্যুর মিছিল থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফেরা সেদিনের প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে আসে এমন ভয়াল-বিভীষিকাময় চিত্র।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, তৎকালীন সময়ে দেশে বিরাজ করছিল এক বিশৃঙ্খল অবস্থা। বেশ কিছুদিন যাবতই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণঘাতী হামলার শিকার হচ্ছিলেন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এরই প্রতিবাদে ২০০৪ সালের ওই দিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও গণমিছিলের ডাক দেয়া হয়।
কিন্তু তখন কি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এই দলটির নেতা-কর্মীরা ঘুণাক্ষরেও জানতে পেরেছিলেন- এই দিনকে টার্গেট করে সারা দেশে আগের সেই হামলাগুলো ছিল ঘাতকদের ড্রেস রিহার্সাল? সেদিন বিকালেই নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার অসমাপ্ত কাজের গুরুভার কাঁধে নেয়া সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাকে?
একই সঙ্গে শেষ করে দেয়া হবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করা সম্মুখযোদ্ধাদের? সেদিন আল্লাহ অশেষ রহমত আর নেতারা মানববলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সহ্য করে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সেদিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে শুরু হওয়া সভাটির মঞ্চ বানানো হয়েছিল একটি ট্রাকের ওপর। বিকাল ৫টায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা এসে সভাস্থলে পৌঁছে সেই ট্রাকে ওঠেন। এ সময় ট্রাকে তার সঙ্গে জিলুর রহমান, আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল জলিল, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, মোহাম্মদ হানিফ ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ আরো কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতা-নেত্রী ছিলেন।
ট্রাকের পাশেই নিচে ছিলেন ওবায়দুল কাদের, সাবের হোসেন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতা-কর্মীরা। সময় তখন বিকাল ৫টা ২২ মিনিট। সবে ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু বলে ২২ মিনিটের বক্তব্য শেষ করেছেন শেখ হাসিনা। হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করে মাইক থেকে সরে যাওয়ার মুহূর্তেই দক্ষিণ দিক থেকে ছুটে আসে একটি গ্রেনেড। সেটি ট্রাকের বাম পাশে পড়ে বিস্ফোরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেখ হাসিনা ট্রাকের ওপর বসে পড়েন। সঙ্গে থাকা অন্য নেতারা এ সময় মানববলয় করে চারদিক থেকে তাকে ঘিরে ফেলেন। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ট্রাক লক্ষ্য করে একই দিক থেকে আরো দুটি গ্রেনেড ছোড়া হয়। এ সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকা দেহরক্ষী পুলিশরা কয়েক রাউন্ড ফাকা গুলি ছোড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল ৫টা ২২ মিনিট থেকে এক-দেড় মিনিটের ব্যবধানে ১৩টি বিস্ফোরণ ঘটে। সভার মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত ট্রাকের ওপর, এর পাশে, সমাবেশস্থলে এসব বিস্ফোরণ ঘটে। পরে সাংবাদিকরা সেখানে অবিস্ফোরিত অবস্থায় দুটি গ্রেনেড দেখতে পান। বিস্ফোরণের পরপর ধোঁয়ার কুন্ডলী, মানুষের চিৎকার, ছোটাছুটিতে প্রাণবন্ত সমাবেশটির চেহারা পাল্টে যায়।
বিস্ফোরণের আওয়াজ থামতেই দেখা যায়, আওয়ামী লীগ কার্যালয় আর রমনা ভবনের সড়কে জায়গায় জায়গায় রক্তের স্রোত। ছেঁড়া স্যান্ডেল, রক্ত, পড়ে থাকা ব্যানার, পতাকার সঙ্গে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। নারী-পুরুষের দেহ। কেউ নিথর-স্তব্ধ, কেউবা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।
সভাপতি শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন নেতা-নেত্রী সেদিন অল্পের জন্য এই ভয়াবহ হামলা থেকে বেঁচে গেলেও আওয়ামী মহিলা লীগের তৎকালীন সভাপতি বেগম আইভি রহমান এবং অপর ২৪ জন এতে নিহত হন। এ ছাড়া এই হামলায় আরো ৪০০ জন আহত হন। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।
এর আগে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ দেহরক্ষীরা শেখ হাসিনাকে ধরে ট্রাক থেকে দ্রুত নামিয়ে তার মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতে তুলে দেন। স্টেডিয়ামের দিক হয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে সরিয়ে নেয়া হয়। শেখ হাসিনা যখন ঘটনাস্থল ত্যাগ করছিলেন তখনো একই দিক থেকে কয়েক সেকেন্ড বিরতি দিয়ে গ্রেনেড এসে ঘটনাস্থলে বিস্ফোরিত হতে থাকে। একই সঙ্গে চলছিল গুলির শব্দ। এসব গুলি-গ্রেনেড ঠিক কোথা থেকে ছোড়া হচ্ছিল তা বোঝা না গেলেও বেশ পরিকল্পিতভাবে যে হামলা হয়েছে তা পরে বোঝা যায়। পরে শেখ হাসিনার বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে গিয়ে তাকে বহনকারী মার্সিডিজ বেঞ্জ
গাড়ির সামনে-পেছনে গ্রেনেড ও গুলির আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, একুশে আগস্টের শান্তি সমাবেশে শেখ হাসিনার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে আকস্মিক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা, ভয়াবহ মৃত্যু ও দিনের আলো মুছে গিয়ে এক ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ঢাকার তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী তাৎক্ষণিকভাবে এক মানববলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সহ্য করে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন।
মেয়র হানিফের মস্তিষ্কে রক্তক্ষক্ষরণজনিত অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও গ্রেনেডের স্প্রিন্টার শরীরে থাকার কারণে তার অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি ব্যাংকক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এদিকে, শেখ হাসিনা গ্রেনেডের আঘাত থেকে বেঁচে গেলেও তার এক কানের শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে থামিয়ে দেয়া হয়েছিল। এর প্রায় তিন দশক বছর পর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার মধ্য দিয়ে তা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী চক্রটি।
এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন- আইভি রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুন্দুস পাটোয়ারী, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া।
গুরুতর আহত হন- শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ হানিফ, স¤প্রতি প্রয়াত অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, মাহবুবা পারভীন, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দীপ্তি, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক প্রমুখ। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মামলা দিতে গেলে পুলিশ সে মামলা নেয়নি। তার আগেই পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে।
অভিযোগ আছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের এই হত্যাকান্ডের প্রতিকারের ব্যাপারে তৎকালীন বিএনপি সরকার নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেছিল। শুধু তা-ই নয়, এ হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষা করতে সরকারের কর্মকর্তারা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত পাঁচটি গ্রেনেড ধ্বংস করে দিয়ে প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টাও করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হলে বিএনপি সরকারের প্রভাবশালী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ঘটনার সঙ্গে তারেক রহমান জড়িত আছেন বলে স্বীকার করেন।
পুনরায় তদন্তে পুলিশ এই হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ২১ জনকে চিহ্নিত করে। এর আগে বেশ কয়েকটি বিদেশি মিশন যেমন ব্রিটিশ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড, ইউএস ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবং ইন্টারপোল বাংলাদেশি তদন্তকারীদের সঙ্গে যোগ দিলেও বিএনপি সরকার তাদের সহযোগিতা করেনি বলে এসব প্রতিষ্ঠান অভিযোগ করেছিল। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিচারিক আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, এ মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে । সাক্ষ্য তথ্য-প্রমাণে দেখেছি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার জঙ্গি গোষ্ঠীর সহায়তা নিয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি সংঘবদ্ধ হয়ে। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যাই ছিল ভয়াবহ ওই গ্রেনেড হামলার লক্ষ্য। যুদ্ধে ব্যবহৃত সমরাস্ত্র দিয়ে নিরস্ত্র মানুষ এবং কোনো রাজনৈতিক দলের সমাবেশে হামলার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেও জানান তিনি।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, দলটির নেতা হারিছ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়ে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় দেন আদালত। এই রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে আপিল মামলা শুনানির অপেক্ষায় আছে। বর্তমানে শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরির কাজ চলছে।
সেদিনের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ: প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের শব্দ, আহতদের চিৎকার, রক্তাক্ত নেতা-কর্মীদের ছোটাছুটিতে পুরো এলাকার চেহারা বদলে যায়। শেখ হাসিনাকে সরিয়ে নেয়ার পর ট্রাক থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় নামতে থাকেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। যারা অচেতন হয়ে পড়েছিলেন, তাদের ধরে নামানো হয়। কী ঘটছে কিছুই বুঝতে না পেরে অনেক নেতা-কর্মী এ সময় ছুটে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে যান। আহতদের মধ্যেও অনেককে ধরে ভেতরে নেয়া হয়।
অনেককে দেখা যায় পথে রক্তাক্ত অবস্থায় ছোটাছুটি করতে। গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আহতদের হাসপাতালে পাঠাতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় দলীয় নেতা-কর্মীদের। এ অবস্থায়ই রিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার, বেবিট্যাক্সি, এমনকি রিকশাভ্যানে করেও আহতদের প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় অনেককে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থেকে সাহায্যের জন্য আকুতি জানাতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে বেশ কজন নারীও ছিলেন।
আবার গ্রেনেড বিস্ফোরণ: প্রথম গ্রেনেড হামলা ঘটে ৫টা ২২ মিনিটে। উদ্ধার অভিযান চলাকালে সন্ধ্যা ৬টা ২৬ মিনিটে প্রচন্ড শব্দে আরেকটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয় পুলিশের উপস্থিতিতেই সিটি ভবনের পাশের গলিতে এর পাশেই একটি গাড়ি জ্বলছিল। পুলিশ জানায়, আগুনের উত্তাপে এখানে পড়ে থাকা গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হয়েছে।
তবে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন দলীয় কর্মী জানান, সিটি ভবন থেকে আবারো এটি নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় দফার এই বিস্ফোরণে আর কেউ হতাহত হয়েছে কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। কারণ যে সময় এটি বিস্ফোরিত হয় সে সময়ও আগের ঘটনায় আহতদের অনেককে উদ্ধার করা হচ্ছিল। ফলে কে আগের ঘটনায় বা কে পরে, তা নিশ্চিত করে বলা কারো পক্ষেই সম্ভব ছিল না।
শেখ হাসিনা-হত্যার সব চেষ্টাই ছিল: গ্রেনেড হামলা থেকে কোনোভাবে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যেন। প্রাণ নিয়ে ফিরতে না পারেন তার সব চেষ্টায়ই করেছি হামলাকারীরা। তার গাড়ির কাছে কমপক্ষে সাতটি বুলেটের আঘাতের দাগ, গ্রেনেড ছুড়ে মারা চিহ্ন এবং বুলেটের আঘাতে পাংচার হয়ে যাওয়া গাড়ির দুটি চাকা সে কথাই প্রমাণ করে। নেত্রীর গাড়িতে হামলার ধরন দেখেই বোঝা যায় যে, এটি একটি ঠান্ডা মাথায় হত্যার পরিকল্পনা।
কর্মসূচি: কাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল সাড়ে ১০টায় ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে উপরোক্ত কর্মসূচিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সারাদেশে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদবিরোধী বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি বিনীত অনুরোধ করা হয়েছে।