সমাজের সর্বস্তরে এখন একটা জিনিসের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে আর তা হলো সুচবন। সুবচনের অভাবকে ভাবিয়ে তুলছে আগামী প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য এমনকি সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের প্রাসঙ্গিক অংগ হিসেবেও। এই সুবচন নিয়ে ভাবার সময় এখন কারো নেই বলেই মনে হচ্ছে তবে ভাবার জন্য বিনয়ী অনুরোধ রাখছি। দেশীয় আদলে, বৈশ্বিক আদলে এমনকি আন্তর্জাতিক মানদন্ডেও সুবচনের বড়ই অভাব। তাই এই অভাব গুচিয়ে বা কাটিয়ে উঠার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে এগুনো এখন করোনা পরবর্তী পৃথিবীর দাবী। আগামী দিনের সুবচনই হউক সাম্যের এবং ভারসাম্য রক্ষার রক্ষাকবচ। শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বিরাজমান রাখার অবলম্বন। শু তে শুভ এবং শুভ যোনো আর শুভঙ্করের ফাকিতে পরিণত না হয় সেই দিকে লক্ষ্য দেয়া অতিব জরুরী। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তেই এই সুবচন ব্যবহৃত হয় মনুষ্য দৃষ্টিভঙ্গিকে আড়াল করার জন্য বা ফাঁকি দেয়ার জন্য। কিন্তু এই সুবচনকে ব্যবহার করে যেন আর ঐসকল নেতিবাচক কর্মকান্ড পরিচালিত না করা হয় সেইদিকে দৃষ্টিদেয়া আশু প্রয়োজন।
বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা বা দেশীয় প্রধান বিভিন্ন সময় বলে থাকেন বা আশংকা করেন যে, অমুক দেশে; তমুক দেশে নাশকতা এমনকি কারো জীবন নাশের চক্রান্ত হচ্ছে। প্রশ্ন হলো ঐ সুবচনের দ্বারা প্রকাশিত আশংকা তারা কিভাবে করে? তারা কিভাবে জানে? তারা কি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ভবিষ্যত দেখার অধিকারী? অথবা তারা কি ঐ চক্রান্তের অংশীদ্বার বা তাদের ইন্দনেই কি ঐ চক্রান্ত? যদি না হয় তাহলে তারা কেন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বা ঐ চক্রান্ত নস্যাৎ করতে ব্যর্থ হন বা প্রকাশ্যে কোন চেষ্টায় করেননি? এমনকি ঘটনার পূর্বে ঐ সুবচন উচ্চারনের কিই—বা প্রয়োজন। অপরদিকে ঘটনা ঘটার পরও ঐ ধারাবাহিকতায় তাদের তেমন কোন জোড়ালো প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ এমনকি কার্যকরী পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। বরং বাহাবা কোড়ানোর জন্য বলে থাকেন আমরা সতর্ক করেছিলাম বা বলেছিলাম এই শব্দগুলো ব্যবহারে বাতাস ভাড়ি করে বাহাবা কুড়োনোর চেষ্টা করেন। ভেবে দেখবেন কি? ঐ চক্রান্তের স্বীকার কিন্তু নিড়িহ এবং সাধারণ মানুষ আর নিষ্পেসিত প্রতিহিংসার অন্ধকারের রাষ্ট্র, সমাজ ও সংস্কৃতি এবং তাদের কষ্টার্জিত সম্পদ। কেন ঐ মানুষগুলি সুবচনের উচ্চারণে ঐরকম করে যাচ্ছে ভেবে দেখবেন কি অথবা দেখেছেন কি? এই বিষয়ে আমিবা কোন রাষ্ট্র বা গোষ্ঠি এমনকি স্বীকারে পরিণত হওয়াদের নামোচ্চারণ নাই করলাম কিন্তু আপনারাতো মিডিয়ার কল্যাণে এখন সবই দেখছেন। ভাবুনতো আগামীর কল্যাণের তরে আপনার ও আমার কি করা উচিত? আর সেই উচিতের সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের যোগসূত্র কতটুকু। মানুষ মানুষের জন্য আর জীবন জীবনের জন্য এই কথাটি কি এখন বাস্তবে দৃশ্যমান নাকি অস্তিত্বশুন্য কথার কথায় পরিণত হয়েছে।
আমাদের কথা বার্তায় লাগাম টানা দরকার। অতিরিক্ত হাস্যকর বা বিদ্রুপাত্মক এমনকি দোষারূপের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসাও জরুরী। ডিজিটাল বাংলাদেশ কিন্তু এই বার্তা দিয়েই শুরু হয়েছিল। কারণ এর মাধ্যমে সবই স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ্য করা যায়: যা সত্য এবং যা মিথ্যা উভয়ই এখন দৃশ্যমান এবং এই দৃশ্যমানতা এখন মানুষকে স্বচ্ছভাবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে যাচ্ছে। তবে অতিরঞ্জিত কথা বলা এমনকি অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকেও বিরত থাকতে এবং রাখতে সহায়তা করে যাচ্ছে। মিটিং, সভা—সমাবেশ, ওয়াজ ও মাহফিল, পরিবার, সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রেই সুবচন বিরাজমান রাখতে হবে এবং কথা কম কাজ বেশী এই কথার কথাকে বাস্তবায়ীত করে যেতে হবে। কে কি করেছে; কে কি করবে; কে কি ভেবেছে; আর কে কি ভাববে এই বিষয়গুলো নিয়ে না ভেবে বরং নিজে কি করেছি আর করব তা নিয়ে ভাবার সময় এখন। পৃথিবী এখন নতুন ছকে নতুন আলোকে নতুন গতিময়তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আর এতে শরীক হতে আমাদেরকে মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে এবং হবে আর আশে পাশের দেশগুলিকে অচিরেই অতিক্রম করে একটা অবস্থানে দন্ডায়মান হবে। কিন্তু এই আত্মবিশ্বাসকে কাজে পরিণত করতে নিজেদেরকে বদলাতে হবে এবং যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে প্রমান করতে হবে। তবে দ্রুত নয় স্বাভাবিক গতিতে হওয়াই বাঞ্চনীয়। কারণ লোভাতুর মানুষগুলোর চোখ শুকুনের চোখকে অতিক্রম করে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে তাই ঐ শুকুনগুলোকে প্রতিরোধে কার্যকরী ভুমিকা রাখার প্রত্যয়ে সকলে একযোগে কাজ করে যেতে হবে। নতুবা উন্নয়ন’র গতিময়তা থেকে ছিটকে পরার আশংকাকে উড়িয়ে দিতে পারি না। এই ক্ষেত্রে সুবচন সুতিকাগার হিসেবে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
গিবদ গাওয়া স্বভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। নিজেকে স্বচ্চ রাখার প্রয়োজনে চিরস্থায়ী বসবাসের প্রয়োজনে এখনই প্রস্তুত হয়ে সামনে এগুতে হবে। এই গিবদ এবং পরনিন্দা আমাদের ইহ এবং পরলৌকিক জীবনে কোন কাজে আসে না বরং সমস্যার সৃষ্টি করে তাই উপকারবিহীন বাহাবা এবং বোকামীর জন্য বড় ধরনের সুযোগ বঞ্চিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে প্রস্তুতি নিয়ে এগুতে হবে। জাগতিকতাকে বিসর্জন দিতে হবে, মাংসিক চাহিদাকে বিসর্জন দিতে হবে, চাকচিক্যের লোভকে বিসর্জন দিতে হবে, অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলের সকল নেতিবাচক মনোভাবকে বিসর্জন দিতে হবে। ইতিবাচক সকল কর্মকান্ডের অগ্রগতিকে উৎসাহ দিয়ে সাধুবাদ জানিয়ে কঠিন সময়কে অতিক্রম করতে হবে। মানসিক পরিবর্তন এবং আত্মিক পরিবর্তন সাধনে ইতিবাচক ভুমিকা রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সুবচনের মাধ্যমে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র তথা বিশ্বকে পরিবর্তনের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকতে হবে। সকল ধর্মেই গিবদ এবং নেতিবাচকতাকে নিরুৎসাহিত করেছে এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে হুশিয়ার করে যাচ্ছে কিন্তু আমরা সেই ধর্মের বাণীগুলিকে প্রাধান্য না দিয়ে বরং বোকামীর খোরাকে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছি। তাই বোকামি থেকে বের হয়ে এসে প্রকৃত এবং চিরস্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিধানের আলোকে নিশ্চয়তার এবং নিরাপত্তার ছায়াতলে আবদ্ধ হতে অঙ্গিকারাবদ্ধ হয়ে জিবনের প্রতিটি কর্ম সম্পাদনে সচেষ্ট থাকি।
সর্বশেষে বলতে চাই আমাদের প্রীয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে সুবচন ফিরে আসুক এবং এই সুবচনের আলোকে সমাজ ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আসুক। সবাই সবাইকে সুবচনে অলিঙ্গন করি এবং ইতিবাচক এক সম্প্রীতির বন্ধনের শুভ সুচনা করে আগামীর দৃষ্টান্ত হিসেবে নতুন যুগের যাত্রারম্ভ করি। পারস্পরিক সম্পর্ককে সন্দেহাতীতভাবে সমৃদ্ধ করি। আবেগ এবং সম্পর্কের যোগসূত্রে সুবচনকে যুক্ত করে দৃঢ়লয়ে সর্বকর্মে কার্য সম্পাদন করি। পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্মকান্ডে এমনকি জীবনাচরণে সুবচনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করি যাতে আগামীর শান্তি, শৃঙ্খলা, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা এবং সার্বজনীন আনন্দ উপভোগে সকলের সহাবস্থান শুনিশ্চিত হয়। সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের ক্ষেত্রে সুবচন গুরুত্ব পায়। ফিরে আসুক কোলাকুলি, হ্যান্ডস্যাফ, আতিথীয়তা, পর্দাবিহীন বা মাক্সবীহিন জীবনের নির্মল আনন্দ। ডর ও ভয়ের উর্ধে উঠে নতুন করে শুরু করি সকল কর্মকান্ড। আর ঐ কর্মকান্ডে শরীক হউক সকল মানুষ; ভেদাভেদ ও রোগভীতি ভুলে গিয়ে ফিরে পাক সকল কর্মচাঞ্চল্য এবং কোলাহল ও কলরব। বিশ্ব ফিরে পাক স্বস্তি ও আগামীর পথ চলার দিশা। বাঙ্গালীর সঙ্গে বাংলার যোগসূত্র সুবচনে প্রস্ফুটিত হউক আমাদের আগামীর সকল কর্মকান্ডে। এই আগষ্টের বিদায় লগ্নে চেতনায় ফিরে আসুক সুবচন এবং শুদ্ধচার এবং আত্মসুদ্ধি। আমরা পেরেছি এবং পারব এই বিশ্বাসেও সুবচন আমাদেরকে চেতনা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাক আগামীর নির্মল নতুন এক অনুভুতির যাত্রারম্ভে। আজ ও আগামীর চেতনায় আসুন সুবচনকে নিয়ে কাজ করি এবং সৃষ্টিকর্তার অভীপ্রায়কে সুবচনে বচনায়ীত করে পৃথিবীকে নতুন করে সাজিয়ে তুলি। জয় আমাদের হয়েছে এবং হবেই এই সুবচনের হাত ধরেই। এই প্রত্যাশায় আগামীর আগমনের প্রতীক্ষায়… নতুন কোন বিষয়ের আবতারনা হবেই হবে।