বাগান জুড়ে মৌমাছির গুঞ্জন

মহিউদ্দিন মোল্লা ॥ শেম্বুপুর। কুমিল্লার তিতাস উপজেলার একটি গ্রাম। গ্রামের বিলে শাপলা, ধইঞ্চা ও কলমিসহ নানা জাতের ফুল। পাশে আম বাগান। এই আম বাগানে আশ্রয় নিয়েছেন একজন মৌ চাষী। সেখানে তিনশ’ বাক্স ফেলা হয়েছে। আম বাগানজুড়ে মৌমাছির গুঞ্জন। মৌ-চাষী হাফিজুর রহমান এখানে বাক্স ফেলেছেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার মহিষমারা গ্রামে। তার মৌমাছিগুলোকে বাঁচাতে তিনি কুমিল্লায় এসেছেন। গত কয়েক বছর নিয়ম করে তিনি বাক্সভর্তি মৌমাছি নিয়ে কুমিল্লা আসেন। বছরের পাঁচ মাস তিনি বিভিন্ন জেলায় মৌ-মাছির খাবারের জন্য যাযাবার জীবন যাপন করেন।
হাফিজুর রহমান জানান, বছরের অগ্রহায়ণ থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত মৌ-মাছিরা মধু সংগ্রহ করে। বছরের জৈষ্ঠ্যমাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত মৌমাছিগুলো কৃত্রিম খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। এখন ভাদ্র মাস। এ সময়টাতে তেমন ফুল ফোটে না। এমন অবস্থা চলবে কার্তিক মাস পর্যন্ত। এ সময়টাতে মৌমাছিগুলোকে কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়। কারণ টাঙ্গাইলে এসময় তেমন পরিবেশ নেই। কুমিল্লায় বিলের পাশে রাখা হয় মৌমাছিগুলোকে। এ সময় মৌমাছিগুলো শাপলা, ধইঞ্চাসহ বিভিন্ন ফুলের পরাগ খেয়ে জীবন ধারণ করে। পাশাপাশি চিনি ও পানির মিশ্রণ দিয়ে তৈরি সিরকা দেয়া হয় মৌমাছিগুলোর খাবার হিসেবে।
হাফিজুর রহমান জানান, দশ বছর আগে টাঙ্গাইলের বিসিকে মৌমাছি পালনে প্রশিক্ষণ নেন। তারপর থেকে মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহ তার পেশা। প্রথমে ৪০হাজার টাকার পুঁজি দিয়ে ১০টি বাক্স দিয়ে শুরু করেন। তিনি জানান, তার তিনশ’ বাক্স মৌমাছি সিজনে ৬ থেকে ৭ টন মধু সংগ্রহ করতে পারেন। এ মধু বিক্রি করেন ১২ লাখ টাকায়। ৪ লাখ টাকা খরচ বাদ দিলে তার মুনাফা হয় ৮ লাখ টাকা। তবে মধুচাষীদের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা হলে মধুচাষীরা আরো স্বাবলম্বী হতো। মধু চাষ থেকে আয়ে দেশীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হতো। বিসিক মৌ-মাছি পালন কর্মসূচি কুমিল্লার বাগমারা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মোনায়েম ওয়ায়েছ বলেন, নিজ জেলায় মৌ-মাছিরা খাবার না পেলে চাষিরা অন্য জেলায় যান। বর্ষা মৌসুমে কুমিল্লায় কিছু ফুল হয়। যা মৌমাছির খাবারের যোগান দেয়। কুমিল্লা জেলার চাষিরাও এসময় মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.