৩ বছর পর মা-মেয়ের দেখা, চোখ আটকে গেল বর্বরতার চিহ্নে

নাটোর প্রতিনিধি ॥ নাটোরে শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে ঢাকায় সিআইডি পুলিশে কর্মরত উপপরিদর্শক খন্দকার আতিকুর রহমানের স্ত্রী সুমি বেগম আটক করেছে পুলিশ। গ্রামবাসী তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় গত বুধবার রাতে নাটোর থানায় সুমি বেগমের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী গৃহকর্মী শ্যামলীর মা নার্গিস বেগম। শ্যামলী (১২) সদর উপজেলার পাইকোরদল গ্রামের মঞ্জিল হোসেনের মেয়ে।
জানা যায়, গত বুধবার বিকেলে সুমি বেগম শ্যামলীকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করাতে গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসেন। সেখানেই শ্যামলীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় তার মা।
এরপর জিজ্ঞাসা করলে শ্যামলী তিন বছর ধরে চলা নির্যাতনের ঘটনা খুলে বলে। এ সময় স্থানীয়রা পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী সুমি বেগম এবং শাশুড়ি দিলারা বেগমকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। নির্যাতনের শিকার শিশু ও তার পরিবার জানায়, শ্যামলী (১২) তিন বছর আগে ঢাকায় সিআইডি পুলিশে কর্মরত উপপরিদর্শক খন্দকার আতিকুর রহমানের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নেয়। এরপর থেকে তাকে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে আর দেখা করতে দেননি তারা। শুরুতে আট মাস নিয়মিত বেতন পাঠিয়ে দিলেও পরে আর বেতন দেননি বলে অভিযোগ পরিবাআরের। তিন বছর ধরে গৃহকর্ত্রী সোমা শ্যামলীর শরীরে গরম ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা এবং প্লাস দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়া তুলে ফেলে। তার মাথা ও হাত-পায়ের আঙুলসহ পুরো শরীর ক্ষক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে।
শ্যমলীর মা নার্গিস বেগম অভিযোগ করেন, গত তিন বছরে শ্যামলীকে বাড়িতে আসতে দেওয়া হয়নি। এমনকি মোবাইল করলে শ্যামলীর সঙ্গে কথাও বলতে দেওয়া হয়নি। শিশু শ্যামলী জানায়, কাজে একটু ভুল করলেই তাকে প্রচুর মারধর করা হতো। জোরে কান্না করলে আরো বেশি মারা হতো। তবে গৃহকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক তাকে মা বলে ডাকতো। নিজের মেয়ের মতো আদর করতেন। নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনসুর রহমান জানান, মামলা দায়েরের পর সুমি বেগমকে বৃহস্পতিবার আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. তারেক জুবায়ের জানান, পুলিশের একটি টিম মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত সুমা বেগম আটক করেছে। এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে যা সামনে আসবে সেভাবেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন সবার জন্য সমান। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.