৬০ হাজার টাকা দিয়েও আশ্রয়ণের ঘর পাননি আলিয়ারা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ॥ “মোর গরুলাও গেল, বাড়িও গেল, এলা স্যারের হুমকির তানে এলাকায় থাকিবাউ পারু না। মোর আর থাকার কোনো জায়গা নাই।” এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে এসে বিলাপ করছিলেন আলিয়ারা খাতুন (২৫)।
সাংবাদিক খুঁজতে শহরের কলেজপাড়ায় ঠাকুরগাঁও রিপোটার্স ইউনিটি কার্যালয় এসে সাংবাদিকের কাছে ইউএনও ও তার শ্যালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সেই নারী। এলাকাবাসীর তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার স্বামী পরিত্যক্তা আলিয়ারার সম্বল বলতে ছিল ২টি গরু। তিনি চাচ্ছিলেন মাথা গোঁজার একটি নিশ্চিত ঠিকানা। সেই আশাতেই নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করেন। গরু বিক্রির ৬০ হাজার টাকা হরিপুর ইউএনওর শ্যালককে দিয়ে তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে উঠেন। তবে উঠার ৪ মাস পর তাকে বের করে দেওয়া হয়।
আলিয়ারা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, ২ বছর পূর্বে ১ সন্তান নিয়ে স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে দুলাভাইয়ের সরকারি খাস জমিতে নির্মিত বসতবাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করে। ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়া হবে জানার পর আলিয়ারা তদবির শুরু করেন। প্রকল্পের ঘর নির্মাণের তদারককারী তরিকুল ও উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী মানিক এর কথামতো তিনি নিজের গাভী বিক্রি করে ইউএনওর শ্যালক তানভীন হাসানকে সরাসরি ৬০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
পরে তারা আলিয়ারাকে তারবাগান এলাকায় অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২ নং ঘরটির দখল বুঝিয়ে দেয়। সেই ঘরে তিনি প্রায় চার মাস যাবৎ সন্তানসহ বসবাস করছিলেন। পরবর্তীতে তরিকুল ও মানিক আলিয়ারার কাছে পুনরায় ২০ হাজার টাকা দাবি করে এবং টাকা না দিলে ঘর থেকে বের করে দিবে বলে হুমকি দেয়। টাকা দিতে না পারায় তারা আলিয়ারাকে ১ সেপ্টেম্বর ঘর থেকে বের করে দেয়।
এসব বিষয়ে আলিয়ারা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক বরাবরে গত ৫ তারিখে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। আলিয়ারা বলেন, বিষয়টি জানার পর ১৩ তারিখ দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল করিম তাকে কৌশলে কার্যালয়ে ডাকেন। সেখানে ইউএনও আলিয়ারাকে পুলিশ ও তার কার্যালয়ের কর্মচারী দ্বারা মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন এবং হুমকি দেন, তাদের মতো করে জবানবন্দি না দিলে বড় ধরনের ক্ষক্ষতি করবে। সে সময় জোরপূর্বক আলিয়ারার কাছে তাদের মতো করে স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করে এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। তাই নিরাপত্তাহীনতার কারণে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তার জন্য সাংবাদিকদের কাছে সাহায্য চান আলিয়ারা। ইউএনওর শ্যালক তানভিন হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান। হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল করিম বলেন, সেই মহিলা অনেক খারাপ ও মিথ্যে কথা বলে। তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। আর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে টাকা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। তার কোনো ভিডিও রেকর্ড করা হয় নাই।
উল্লেখ্য, এর আগেও হরিপুর উপজেলায় টাকার বিনিময়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্ধের অনেক অনিয়মের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও হরিপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিম্নমানের তৈরি হওয়ায় ঘরে ফাটল দেখা দেয়। ঘর বরাদ্ধে ইউএনওর শ্যালকের টাকা লেনদেনের বিষয়টিও খবরে প্রকাশিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.