ক্ষমা এবং অপরাধ এখন অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। এই দুইয়ের মধ্যে তফাৎ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। তবে ক্ষমা অপরাধকে পরিপূর্ণতা দান করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধর্মে ক্ষমা সম্পর্কে বলা আছে তবে গুরুত্ব দিয়ে এই ক্ষমাকে ব্যবহার করে যাচ্ছে শুধু খোদায়ী মানুষগুলো। কোন কোন ধর্মে ক্ষমা পাওয়ার পূর্বশর্ত হলো পাপ বা অপরাধ স্বিকার করা; আর কোন কোন ধর্মে তৌবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা; আবার কোন কোন ধর্মে অনুশোচনা ও অনুতাপ করে সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাওয়াসহ বিভিন্ন উপায়ে ক্ষমা পাওয়া যায়। কিন্তু এই ক্ষমা পাওয়ার পরও-কি এই একই অপরাধে পূণরায় জড়ানো যাবে বা কতবার ক্ষমা পাওয়া যাবে। এই ক্ষেত্রে আল্লাহর কালাম ষাট গুন সত্তর বার এর কথা বলা রয়েছে। এই ক্ষমা হলো মানুষের কাছে কিন্তু আল্লাহর কাছে বা সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার বা চাওয়ার কোন পরিমান/ পরিমাপ নেই। কিন্তু একই অপরাধে জড়িয়ে এর জন্য বার বার ক্ষমা চাওয়া অনুচিত। তবে মানুষ মাত্রই ভুই হবে এবং শয়তানের প্ররোচনায় প্রলোভিত হয়ে পাপে বা অন্যায়ে জড়াবে কিন্তু সেই অন্যায়ের জন্য ক্ষমাও পাবে। যার কাছে অন্যায় করবে তার কাছ থেকে ক্ষমা নিবে আর আল্লাহর বা সৃষ্টিকর্তার কাছেও ক্ষমা চেয়ে ক্ষমা নেওয়া যাবে। সৃষ্টিকর্তা অপরাধিকে বা পাপীকে ছেড়ে যায় না এবং যাবেও না তবে অপরাধি সৃষ্টিকর্তাকে ছেড়ে যাবে এবং যাচ্ছে। এটাই এখন এক জটিল সমিকরণে পরিণত হয়েছে। কিভাবে অপরাধি সৃষ্টিকর্তাকে ছেড়ে যায় তার প্রমান হলো: তিনি চান পাপী পাপ / অপরাধী অপরাধ স্বীকার করে পবিত্র হউক আর আপরাধি চায় তার অপরাধ গোপন করে/ অস্বীকার করে/ মিথ্যা বলে সৃষ্টিকর্তার ক্ষমা এবং আশির্বাদ থেকে দুরে সরে যায় ও যাচ্ছে। এই দুরে সরে যাওয়া কিন্তু অপরাধী বা পাপীকে আরো ভয়ঙ্কর পাপে বা অপরাধে জড়িয়ে পরিপূর্ণ শয়তানের অধিনস্ত হতে সাহায্য করছে।
পৃথিবীতে আজ দুই ধরণের ক্ষমা প্রকাশিত হচ্ছে: এক খোদায়ী আর দুই মানুষের। তবে মানুষের ক্ষেত্রে এই ক্ষমা কিন্তু বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত হচ্ছে । যেমন আইন ও আদালতে, সামাজিক বিচারে, পারিবারিক বিচারে, রাষ্ট্রিয় বিচারে, অফিসের বিচারে, বিবেকের বিচারে আর সর্বোপরি ধর্মীয় আইন-কানুন বা বিধি বিধানের আলোকে। তবে প্রথমত বা এক নম্বরের খোদায়ী ক্ষমা সার্বজনীন এবং সর্বময়। এই ক্ষমাবঞ্জিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাহলে নিশ্চিত ক্ষমা পাবেন এটা নিশ্চিত। খোদায়ী ক্ষমা সকল সৃষ্টির জন্য অবধারিত আর তা বিনামূল্যের। কোন কিছুর জন্য নয় বরং কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইলেই ক্ষমা মিলবে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে মানুষের ক্ষমার স্তরভেদে ক্ষমা পাওয়া খুবই কষ্টকর। অনেকে ক্ষমা চেয়েও ক্ষমা পাইনি এবং পাবেও না আবার কেউ কেউ ক্ষমা চেয়ে ক্ষমা পাবে। এটা নির্ভর করে মানুষের চিন্তা শক্তি, মানষিকতা এবং পরিস্থিতি ও পারিপাশ্বিক অবস্থার উপর। খোদায়ী মানুষগুলো ক্ষমা চাইলেই ক্ষমা করবে এটা নিশ্চিত তবে কোন কোন সময় এই ক্ষমায় ক্ষমা প্রত্যাশি আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কারণ ঐ ক্ষমায় তার শিক্ষা থাকে না। কারণ ক্ষমা পেতে অপরাধ অনুভব এবং পাপবোধ এর তারণা অনুধাবন করেই ক্ষমা চাইতে হবে তবেই ক্ষমায় লাভবান হওয়া যাবে। নতুবা হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।
পৃথিবীর ক্ষমা পাওয়া মানুষগুলোর বেশীরভাগই আজ বেপরোয়া গতির জীবনে জড়িয়ে খোদা বিরোধী কাজে-কর্মে লিপ্ত রয়েছে। ক্ষমার পর খুব কম মানুষই সংশোধন হয়েছে বা সংশোধিত জীবন যাপনে অভ্যস্থ্য রয়েছে। বেশীরভাগ মানুষই প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকান্ডে লিপ্ত থেকে সৃষ্টির ক্ষতি এমনকি সৃষ্টিকর্তার অভীপ্রায়ের বিরোধীতা করে যাচ্ছে। তাই এই ক্ষমা প্রত্যাশীদের কিভাবে সঠিক জীবন এবং পথে ও রাস্তায় রাখা যায় সেইদিকে ভাবা এখন জরুরী। ক্ষমা পাওয়াদের সম্পর্কে যে ধারনা জন্ম হয়েছিল বা সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিলক্ষিত হয়েছিল তা এখন সম্পূর্ণ উল্টোপথে প্রবাহিত হয়েছে। তাই সময় এসেছে ভাবার এবং সৃষ্টিকর্তার বাক্যকে বা খোদার বানীকে অথবা আল্লাহর কালামকে যুগোপযোগী করে ব্যবহারোপযোগী করে তোলার। আসুন আমরা পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং মানুষের গতি প্রকৃতি ও বিভিন্ন কালচারের (সংস্কৃতির) সংমিশ্রনে গড়ে তুলি এক নতুন সমাজ এমনকি নতুন ব্যবস্থা। করোনা পরবর্তী বিশ্ব এখন নতুন রূপে সাজতে যাচ্ছে তাই আমাদেরও সৃষ্টিকর্তার অভীপ্রায়কে ঐ নতুন সাজের সঙ্গে যুগোপযোগী করে ব্যবহার করে পৃথিবীকে খোদার নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সৃষ্টিকর্তার বাক্য এবং অতীতের শিক্ষা ও স্বপ্নাদৃষ্ট চেতনা এবং আত্মার উপলব্দির সামগ্রীক প্রয়োগই পারে বিচক্ষণতা দিয়ে পৃথিবীর গতিবিধি মুল্যায়ন করে নতুন সমাধান শিক্ষায় শিক্ষীত করে তুলতে। আসুন আমরা মোনাজাতে/ প্রার্থনাতে এমনকি খোদায়ী ধ্যানে লিপ্ত থেকে আগামীর দীক্ষা নিয়ে আগুন্তুকদের কল্যাণ সাধিত করি।
অফিস আদলতে যে সকল অবাধ্যতা, পঙ্কিলতা, নেতিবাচকতা এবং পাপের স্খলন দৃশ্যমান বা গোপনীয় পর্যায়ে রয়েছে তার পরিচ্ছন্নকরণ আবশ্যকীয়। কোনভাবেই আর এই অবস্থার অব্যাহত বিরাজমানতা চলতে দেয়া যায় না। তবে ক্ষমা করা যায় কিন্তু ক্ষমাপরবর্তী সময় কঠোর সচেতনতা এবং শর্তযুক্ত জীবন যাপনে অভ্যস্ত করানো এখন সময়ের দাবী। নেতিবাচকতার এমনকি শয়তানের শয়তানির শিকর উপরে ফেলার প্রয়োজনে যা যা করণীয় তাই করতে প্রস্তুত হয়ে কাজে নেমে পড়ুন। নতুবা পুরোনো ধাচে নতুনের নবযাত্রা আরো ভয়ঙ্কর রূপ লাভ করবে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে কর্মচুত্য পর্যন্ত করে পুর্ণবাসন করে দিতে হবে যেমন: কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর আওতাভুক্তরণ। কোনভাবেই স্বাধীন জীবন যাপন বা অর্জিত সম্পদের ভোগদখলকারী হিসেবে বিরাজমান রাখা যাবে না। বরং অর্জিত সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগার অথবা প্রাতিষ্ঠানিক কোষাগারে জমা করে অতি সাধারণের কাতারে নামিয়ে দিয়ে কর্মক্ষম করে তুলতে হবে। যাতে করে নতুন প্রজন্ম নতুন শিক্ষায় দিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরনা এবং চেতনা উভয়ই পায়। দেশ বিদেশে দেশের ভাবমূর্তীর সমুজ্জ্বলতা আরো বৃদ্ধিকল্পে এখনই কাজে নেমে পড়তে হবে। তবে এইক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার দেখানো ও শেখানো পথই হবে সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা। মানুষের দ্বারা তৈরী কোন আইন বা নিতি অথবা বিধি বিধান এই অব্যাহত নতুনের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে না।
পাপ পঙ্খিলতার স্তরবিন্যাস আজ আমাদেরকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তবে তার মুলোৎপাটনে যে পদক্ষেপে পৃথিবী এগুচ্ছে তা কিন্তু ঐ পাপ-পঙ্খিলতারই সৃষ্টি। তাই এই অধুনা পদক্ষেপে আর কোন ফায়দা হাসিল করা যাবে না বরং সময় ক্ষেপন এবং ক্ষতিরই কারণ হবে বৈকি। নৈতিকতা এবং ধর্মীয় শিক্ষা ও পারিবারিক এবং সামাজিক শিক্ষার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় শিক্ষা এবং আইন কানুনের শিক্ষা একীভ’তকরন জরুরী হয়ে পড়েছে। যদি আমরা ঐসকল শিক্ষাগুলোকে একত্রিকরণ করে আগামীর কল্যাণে ব্যবহার করতে পারি তাহলে নতুন বিশ্বে পদার্পন করা সহজ হবে। পৃথিবী থেকে দুরীভুত হবে করোনা নামক অদৃশ্য মহামারীর সুকৌশলী থাবা। ধনীক শ্রেণীর কৌশলী আচরণ এবং শয়তানের সুপরিকল্পিত কৌশল পরাজিত হয়ে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ের প্রাধান্য ও জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমরা আশাবাদি ও বিশ্বাসী এবং নির্ভরশীল ঐ সৃষ্টিকর্তার অভীপ্রায়ের উপর। সৃষ্টিকর্তার সমন্বয় এবং ধরীত্রির রক্ষকের যে অব্যাহত জয়যাত্রা তা উপভোগ করতে প্রস্তুত। তবে আমাদের স্ব স্ব ভুমিকা পালনে আমরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ এবং বদ্ধপরিকর। এখনো অনেক বাকি তবে সবেমাত্র শুরু হয়েছে পৃথিবীর বিদায়ঘন্টা বাজার। তবে সময় যতই এগুচ্ছে ততই কিয়ামত আসন্ন হয়ে পড়েছে। কিয়ামতের পুর্বালামত এখন প্রত্যক্ষ হচ্ছে আর ইসরাফিলের শেষ বাশি বা সিংগার ফুৎকারের আওয়াজের অপেক্ষার প্রহর শেষাংশে এসে পৌঁছেছে। জাতিতে জাতিতে বিভেদ, ভুমিকম্প, বন্যা, খড়া, অগ্নুৎপাত, সাইক্লোন, বজ্রপাত, প্রকৃতির অসৌজন্যমূলক আচরন, নিয়তির বিমাতাসূলক দৃষ্টান্ত, আপথ পথ হচ্ছে, আঘাট ঘাট হচ্ছে, অমানুষ মানুষ হচ্ছে, আর মানুষ অমানুষে পরিণত হচ্ছে, বাপে-মায়ে দন্ধ, ভাইয়ে ভাইয়ে দন্ধ, বাপে-ছেলে দন্ধ, ক্ষমা ও ভালবাসা উদাও, আবেগ ও বিবেগ বিসর্জিত হচ্ছে, স্বার্থপর মানুষ স্বার্থের পিছনে দৌঁড়াচ্ছে, নীতি ও নৈতিকতা বিলুপ্ত হচ্ছে, দেশে দেশে শক্তির মহড়া প্রত্যক্ষ হচ্ছে এই সবই কিসের আলামত আর কিসের প্রয়োজনে এইসব ঘটছে? সবই কিতাবের বা সৃষ্টিকর্তার কালামের মাধ্যমে প্রকাশীত যে, এই সবই হচ্ছে যুগের শেষের বা শেষ সময়ের চিহ্ন। হ্যা এই চিহ্নের আলোকে আমরা পৌঁছে যাচ্ছি সৃষ্টিকর্তার সামনে হাজির হওয়ার প্রান্তরে। তাই ক্ষমা ও ভালবাসা এবং ঈমান ও আমলকে প্রাধান্য দিয়ে আগামীর তরে স্ব স্ব জীবন রক্ষায় প্রস্তুতি অব্যাহত রাখতে চলমান কর্মকান্ড ঠিক করে চর্চায় আনয়ন করি। আসুন আমরা ক্ষমা ও অপরাধ এই দুই শব্দকে দুটি পৃথক শব্দে পরিণত করি। নিজেদেরকে ক্ষমা করার এবং পাওয়ার উপযুক্ত করি। আগামীর বিশ্বকে বেহেস্তে পরিণত করে পৃথিবী থেকেই বেহেস্তের যাত্রা শুরু করি। এই হউক আমাদের আগামীর দৃপ্ত শপথ এবং করনীয় কর্মের দৃষ্টান্ত।