কসবা আড়াইবাড়ি কামিল মাদরাসার গভর্নিং কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ অধ্যক্ষ নিয়োগে প্রথম স্থান অধিকারিকে মিথ্যা অভিযোগে নিয়োগ দিচ্ছে না গভার্নিং কমিটি।

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ একটি বিতর্কিত রাজনৈতিক দলের সদৃস্য এমন মিথ্যা অজুহাতে নির্বাচনী পরীক্ষায় প্রথম হওয়া সত্ত্বেও চাকুরী প্রার্থীকে নিয়োগ না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে আড়াইবাড়ি কামিল মাদরাসার গভর্নিং কমিটির বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠেছে মাদরাসার একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এমন ঘটনা সাজিয়েছেন বলে জানান মাদসার ছাত্র ও অভিভাবকবৃন্দ। ফলে ঐতিহ্যবাহী শতবছরের এই মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে এসেছে।
জানা যায় গত বছর করোনা আক্রান্ত হয়ে কসবা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আড়াইবাড়ি ইসলামিয়া সাঈদীয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা গোলাম সারোয়ার সাঈদীর মৃত্যু হলে গত ২২ মার্চ দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এতে ১০ জন প্রার্থী গত ১১ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষা ও সাক্ষাতকারে অংশ নেয়। এতে প্রথম হয়েছে মুফতি আমিনুল ইসলাম নামে একজন প্রার্থী। চুড়ান্তভাবে প্রথম স্থান অধিকারী মুফতি আমিনুল ইসলামকে নিয়োগ দেয়ার জন্য নির্বাচনী কমিটি সিদ্ধান্ত নিলেও গভর্নিং বডির সভাপতি ও একজন সদস্য। তবে এর নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে জামাতি ইসলামের একটি গ্রুপ।
অভিযোগ উঠেছে বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারেনি একই মাদরাসায় ভাইস প্রিন্সিপাল ড. সাঈদ ফারুক ও একই প্রতিষ্ঠানের আরো কয়জন শিক্ষক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি বিতর্কিত রাজনৈতিক দলের রোকন এমন কথা বলে মুফতি আমিনুল ইসলামকে নিয়োগ প্রদান থেকে বিরত রেখে পুলিশী তদন্ত চাওয়া হয়। অথচ মাদরাসার উপাধাক্ষ ড. সাঈদ ফারুক সহ বেশ কিছু শিক্ষকই জামাতে ইসলামি রাজনীতির সংগে জড়িত বলে জানা যায়।
গভর্নিং কমিটির সভাপতি প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুল হক ভুইয়া ও অপর সদস্য মোশারফ হোসেন ইকবাল এ প্রতিবেদককে জানান তারা কসবা থানার মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন আমিনুল ইসলাম জামাতের রোকন। তবে এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো প্রমাণ আছে কিনা জানতে চাইলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে মুফতি আমিনুল ইসলাম এ প্রতিবেদকের সংগে সাক্ষাতকারে বলেন; আমি কোনো সময় জামাত শিবীর রাজনীতির সংগে জড়িত ছিলাম না। এটা একেবারেই মিথ্যা কথা। আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নিয়োগ থেকে বিরত রাখা হচ্ছে হয়তো অন্য কোনো উদ্দেশ্যে। আমি কসবার চন্দ্রপুর ঈদগাহ মাঠে গত ১৯ বছর যাবত ঈদের নামাজ পড়াই। কোনো দিন এমন প্রশ্ন উঠেনি। এছাড়া আমার বাড়ি কসবা উপজেলার পাশ্ববর্তি দেবিদ্বার উপজেলার ভবানিপুর গ্রামে। আমার বাবা মোঃ তাজুল ইসলামও এক জন মাওলানা।
কসবা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন; গভর্নিং কমিটি ও প্রশাসনের অনুরোধে আমরা মুফতি আমিনুল ইসলাম সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছি। তাঁর কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলার ১ নং বড়শালঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জারুর সংগে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান মুফতি আমিনুল ইসলাম ও তার পরিবার কোনো রাজনীতির সংগে জড়িত নয়। তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। সে বর্তমানে বুড়িচং উপজেলার খাড়াতাইয়া মাদরাসার উপাধাক্ষ হিসাবে সুনামের সংগে কাজ করছেন।
গভর্নিং কমিটির অন্যতম দাতা সদস্য ও বিজিএমইএ নির্বাহী কমিটির পরিচালক সিআইপি বদিউল আলম (জামাল) বলেন; আসলে এটা কিছুই না। এখানে বর্তমানে যারা মাদরাসার একাডেমিক দায়িত্বে আছেন তাদেরই দুরভিসন্ধি। প্রতিষ্ঠানে যথেষ্ঠ অনিয়ম ও অর্থ তসরূপের ঘটনা রয়েছে। আমরা বরাবরই চাচ্ছি প্রয়াত অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার সাঈদী যেমন মেধাবী ছিলেন তাঁর মতো একজন মেধাবী প্রার্থী। নির্বাচনী বোর্ড পরীক্ষা ও স্বাক্ষাতকারের পরপর আমাদের জানিয়েছেন মুফতি আমিনুল ইসলাম মেধাবী এবং অধিকতর যোগতাসম্পন্ন প্রার্থী। তিনি বর্তমানে পিএসডি করছেন। তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকারী থেকে ১৫ নম্বর বেশী পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে তার যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এমতাবস্থায় কতিপয় শিক্ষক ও সুবিধাবাদী লোকজন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আমরা চাই ঐতিহ্যবাহি এই প্র্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ যেন একজন ভালো শিক্ষাবিদ ও একজন ভালো দেশপ্রেমিক মানুষ।
মাদরাসার সহকারি অধ্যাপক শেখ কামাল উদ্দিনের সংগে যোগাযোগ করলে তিনি জানান আমাদের মাদরাসার শিক্ষকগণ মুফতি আমিনুল ইসলাম সম্পর্কে এমন কোনো অভিযোগ করেনি। নিয়োগের বিষয়টি সম্পন্ন করবেন নির্বাচনী কমিটি ও গভার্নিং কমিটি। তবে আমরা এটা জেনেছি নির্বাচনী পরীক্ষায় মুফতি আমিনুর ইসলাম প্রথম হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.