অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি ॥ শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা চালিয়ে প্রতিদিন ছুটে যায় প্রাণের বিদ্যাপিঠ যশোরের অভয়নগরে ডুমুরতলা সংকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ওদের বেড়ে ওঠা উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের ডুমুরতলা নামের ছোট্ট গ্রামে। বিদ্যালয়সহ গ্রামটি ভবদহ এলাকার অর্ন্তগত হওয়ায় বর্ষা মৌসুমের ভারি বর্ষণে গ্রামজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট ও ক্ষেতের ফসল। ভেসে গেছে শতশত মৎস্য ঘের।
সরেজমিনে ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে পানি আর পানি। সেই পানির মধ্যে ডুমুরতলা সরকারি বিদ্যালয়ের ভবনগুলো দাঁড়িয়ে আছে। স্কুলের পুরাতন ভবনের শ্রেণিকক্ষের ভেতরে পানি। যে কারণে সেখানে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে পাশের নতুন ভবনে পাঠদান চলছে। এ সময় স্কুলের খেলার মাঠে জমে থাকা পানির বুক চিরে একটি নৌকা আসতে দেখা যায়। নৌকা চালাচ্ছে কয়েক শিশু। তাদের পরণে সাদা রঙের টিশার্ট ও নীল রঙের প্যান্ট। ওদের নৌকা স্কুলের নতুন ভবনের বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। নৌকা থেকে নেমে ওরা প্রবেশ করে শ্রেণিকক্ষে। শুধু এ তিন শিক্ষার্থী নয়, ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদেরও যাতায়াত করতে হয় নৌকায়। পঞ্চম শ্রেণি ছাত্র দেব কুমারের সঙ্গে কথা হলে সে বলে, প্রথম শ্রেণি থেকে সে এ স্কুলে পড়ালেখা করছে। বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় কোমর পানি। আগে বাইসাইকেলে করে স্কুলে আসলেও এখন নৌকায় করে আসতে হয়। বাড়িতে দুইটি নৌকা থাকায় একটি নৌকা নিয়ে সে নিজে কয়েক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। নৌকা ডুবে গেলে কি হবে এমন প্রশ্নে দেব কুমার সহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা হাসতে শুরু করে। সবাই জানায়, তারা সাঁতার জানে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পলাশ মল্লিক জানান, স্কুলের পুরাতন ভবনের সব শ্রেণিকক্ষের মধ্যে হাঁটু পানি জমে আছে। নতুন ভবন না থাকলে স্কুল বন্ধ রেখে অন্যত্র ক্লাস করাতে হত। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে ভবদহ এলাকায় পানি বাড়তে শুরু করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে স্কুল সংলগ্ন পাকা সড়কে প্রায় তিন ফুট পানি। স্কুল মাঠে ছয় থেকে সাত ফুট পানি জমে আছে। গত ৩ মাস ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি আরো জানান, স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০জন, শিক্ষক পাঁচজন। হাঁটু পানিতে ডুবে থাকা পাকা রাস্তা থেকে স্কুলে পর্যন্ত যাতায়াতে নৌকার প্রয়োজন হয়। যে কারণে গ্রামবাসী ও ম্যানেজিং কমিটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য স্থায়ীভাবে দুটি নৌকা দিয়েছে। যা স্কুলের সকলে ব্যবহার করেন। তবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ ফরিদ জাহাঙ্গীর সরেজমিনে আমাদের স্কুলে এসেছিলেন জলাবদ্ধতা দেখে তিনি একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সাঁকো হলে স্কুলে যাতায়াতের জন্য নৌকার প্রয়োজন হবে না।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ ফরিদ জাহাঙ্গীর জানান, ভবদহ এলাকার কয়েকটি স্কুল পরিদর্শন করেছি। সব থেকে ঝুঁকি ও জলাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে ডুমুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নৌকায় করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব ওই স্কুলে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দেওয়া হবে।