কসবায় বিয়ে বাড়িতে দই খাওয়া নিয়ে কনের বাবাকে পিটিয়ে হত্যার পরও বিগত ১০দিনেও মামলা হয়নি থানায়

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা ( ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা কসবা উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের গনক মুড়া গ্রামে বিয়ে বাড়িতে দই না পাওয়ায় কনের বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করার দশদিনেও কসবা থানায় পেশকৃত অভিযোগ রেকর্ড হয়নি। নিহত ইকবাল হোসেনের স্ত্রী ও গ্রামবাসীর দাবী কসবা থানা পুলিশ আসামীদের দ¦ারা প্রভাবিত হয়ে মামলা রুজু করেননি। ফলে গ্রামবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ অক্টোবর নিহত ইকবাল হোসেনের তৃতীয় কন্য কারিমা আক্তার (২০) এর সংগে পাশ্ববর্তী বিষ্ণাউড়ী গ্রামের দুলাল মিয়ার দ্বিতীয় পুত্র পারভেজ মিয়ার বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। বিবাহের দিন দই খাওয়া নিয়ে বর পক্ষের সংগে আসা লোকদের সাথে কনেপক্ষের কথা কাটাকাটি হয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরদিন ( ৬ অক্টোবর) রাতে গনকমুড়া হারুনের চায়ের দোকানে কনের বাবা ইকবাল হোসেনকে বিষ্ণাউড়ী গ্রামের মান্নাফ ও হান্নান সর্দারসহ তার লোকজন দুই দফা হামলা করে। কনের বাবা ইকবালকে এনামুল, নাজমুল, আবদুল্লাহ, হারেছ, হাবিবুল্লাহসহ প্রায় ১৪/১৫ জন লোক কিল ঘুষি ও লাথি মেরে দেহের অভ্যন্তরে গুরুতর জখম করে। তাকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে পথে ব্যারিকেডও সৃষ্টি করে। বিষ্ণাউড়ী গ্রামে সদ্য বিবাহীত ইকবাল হোসেনের মেয়ে কারিমার স্বামীর বাড়িতেও এসকল দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। কারিমার স্বামী পারভেজ জানায়; হামলাকারীরা গ্রামের প্রভাবশালী।
পরে হরমুজ মেম্বারের সহযোগিতায় সদ্য বিবাহীত কনে কারিমার বাবা ইকবাল হোসেনকে কসবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহত ইকবালের স্ত্রী জোৎ¯œা বেগম ১৭ জনকে আসামী করে কসবা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করেনি। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয় মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। ফলে এলাকায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার হরমুজ আলী জানান, অপরাধীরা সমাজের উছৃঙ্খল ও নানা অপরাধের সংগে জড়িত। অপরদিকে নিহত ইকবাল হোসেন অত্যন্ত নিরীহ। দীর্ঘদিন ইকবাল হোসেন মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। সংসারে তার ৫টি কন্যা সন্তান ছাড়া কোনো পুত্র সন্তান নেই। থানায় এ হত্যা মামলাটি রেকর্ড না করায় আমরা হতবাক হয়েছি। একই ওয়ার্ডের প্রাক্তন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো.মোরশেদ জানান; এরকম বর্বরোচিত ঘটনা আমার জীবনে দেখি নাই। এমন ঘটনার মামলা না নেয়া মানুষের অধিকার হরণ করার নামান্তর।
নিহত ইকবাল হোসেনের স্ত্রী জোৎ¯œা বেগম জানান; পুলিশ প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তার দায়েরকৃত হত্যা মামলা রেকর্ড না করে আসামীদের সহযোগিতা করছেন। তিনি আরো বলেন,তিনি ধারনাই করতে পারেননি যে তার স্বামী হত্যার মামলাটি আমলে নেবেন না। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক আসামীদের সংগে যোগসাজস রয়েছে বলে জোৎ¯œা বেগম দাবী করেন। ফলে তিনি নিরুপায় হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আলমগীর ভ’ইয়ার সংগে যোগাযোগ করলে তিনি জানান; ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার অপেক্ষায় তিনি পুলিশ সুপারের সংগে কথা বলে মামলা রুজু করেননি। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট এলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
এদিকে বিগত ১০ দিনেও হত্যা মামলা রুজু না হওয়ায় পুরো এলাকায় হতাশা নেমে এসেছে। নিহত ইকবাল হোসেনের বাড়ীতে চলছে শোকের মাতম। ইকবাল হোসেনের পাঁচ কন্যা, স্ত্রী ও গ্রামবাসী এ হত্যাকান্ডের বিচারের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.