মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ॥ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যম সোনাপাহাড় গ্রামে এক পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। গত বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, জোরারগঞ্জ থানা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মা-বাবা ও ছোট ভাইকে ঘুমন্ত অবস্থায় ছুরিকাঘাতে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন এ ঘটনায় আটক হওয়া পরিবারের বড় ছেলে ছাদেক হোসেন সাদ্দাম। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাদ্দামের স্ত্রীকেও আটক করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন স্থানীয় নতুন বাজারের মুদি ব্যবসায়ী নুরুল মোস্তফা সওদাগর (৭০), তাঁর স্ত্রী জোসনা আক্তার (৫৫) ও তাঁদের মেজো ছেলে আহমদ হোসেন (২৫)। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) মর্গে পাঠায় পুলিশ। স্বামী-স্ত্রীর লাশ এককক্ষে এবং তাঁদের মেজো ছেলের লাশ আরেক কক্ষে পড়ে ছিল। মা-বাবা ও ছোট ভাইকে হত্যায় সাদ্দামের স্বীকারের বিষয়টি গতকাল বিকেল ৪টার দিকে কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেন জোরারগঞ্জ থানার ওসি নূর হোসেন মামুন। তিনি বলেন, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা একটি ছুরি বাড়ির পেছন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে তিন বছর ধরে নরুল মোস্তফার সঙ্গে তাঁর বড় ছেলের বিরোধ চলছিল। মেজো ছেলে, স্ত্রী এবং একমাত্র মেয়ের নামে সম্পত্তি দলিল করে দেন মোস্তফা। এ থেকে বিরোধের সূত্রপাত।
স্থানীয় জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর মধ্যম সোনাপাহাড় ওয়ার্ডের সদস্য মনির আহম্মদ ভাসানী কালের কণ্ঠকে জানান, সম্পত্তি নিয়ে মোস্তফার সঙ্গে বড় ছেলে সাদ্দাম এবং ছোট ছেলে আলতাফ হোসেনের বনিবনা ছিল না। তবে এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে কোনো সালিস-দরবারও হয়নি।
নিহত নুরুল মোস্তফার ছোট ছেলে আলতাফ হোসেন জানান, ঘটনার রাতে তিনি মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় একটি মাছের আড়তে কর্মরত ছিলেন। ভোরবেলায় ফোনে খবর পেয়ে তিনি বাড়িতে আসেন। এ সময় আলতাফ বলেন, ‘মেজো ভাইয়ের আগে আমি বিয়ে করায় বাবা আমাকে তিন বছর আগে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না।’
গত সকালে প্রথমে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ, এরপর পিআইবি ও চট্টগ্রাম সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের ডিএনএ ও হত্যাকান্ডের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) মোহাম্মদ লাবিব আব্দুল্লাহ উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাড়ির ভেতর ডাকাতির কোনো আলামত পাইনি। ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র গোছানো ছিল। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি পারিবারিক বিরোধ বিশেষ করে সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে নির্মম এ খুনের ঘটনা ঘটেছে।’ হত্যাকান্ডের পর ছাদেক হোসেন সাদ্দাম ও তাঁর স্ত্রী আইনুন নাহারকে আটক করা প্রসঙ্গে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘরের ভেতরে সাদ্দামকে স্ত্রীসহ অক্ষত পাওয়া গেছে। তাই আমরা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছি। থানায় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
পুলিশ আরো জানায়, নিহত নরুল মোস্তফা ও জোসনা আক্তারের গলায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো ছুরির আঘাত পাওয়া গেছে। তাঁরা দুজন একই কক্ষে মেঝেতে পড়ে ছিলেন। নিহত আহমদ হোসেনের গলা কাটা অবস্থায় নিজের শয়নকক্ষের মেঝেতে পড়ে ছিল।