মূল্যবোধ ও অনুষ্ঠান

ধর্ম যার যার কিন্তু রাষ্ট্র সবার। আর বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল ধর্মীয় গন্ডির বাইরে এসে। এই রাষ্ট্রে কোন ধর্মই আজ ছোট নয় এমনকি কোন ধর্মকেই অবহেলা করা যাবে না; বরং প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্মকে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে সহবস্থানে বসবাসযোগ্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মদাতারও (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল এই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের। কিন্তু দু:খের বিষয় হলো বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ঐ ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানান জটিলতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে কতিপয় ধর্মের নামে অধার্মিক ব্যক্তিবর্গ। তাদের চিন্তা ও চেতনা ধর্মকে ধ্বংস করে আইয়ামে জাহিলিয়াত কায়েম করা। কিন্তু বাংলার মানুষের চেতনা ধর্মীয় শান্তি ও স্থিতিশীলতায় উন্নয়নের চলমান গতিধারায় বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেয়া। এরই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। বাংলাদেশ জন্মের অন্তরায়ে যারা বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করেছিল সেই তারাই অথবা তাদের দোসররাই আজ ঐ সকল অধার্মিক কর্মকান্ডে লিপ্ত; তবে নতুন কোন শত্রু এর পেছনে রয়েছে কিনা তাও দেখার ও অনুসন্ধান করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং আনাষ্ঠানিক মূল্যবোধে তেমন পার্থক্য নেই তবে খোদায়ী মুল্যবোধের বাইরের সকল কিছুতেই লভ্যাংশের হিসেব-নিকেশ বিধ্যমান। কিন্তু স্ব্ স্ব ধর্মের আলোকে জীবন যাপন করতে রাষ্ট্র সকল সময়ই সহযোগীতা করে যাচ্ছে এবং যাবে। তবে হামলা ও হয়রানি এবং ভাংচুর একটি ঘূর্ণায়মান প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর থেকে বের হওয়া এখন সময়ের দাবি এবং ডিজিটাল যুগের প্রধানতম চাহিদায় পরিণত হয়েছে। সদ্য শেষ হতে যাওয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের পুজামন্ডপে যা ঘটেছে তা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের একজন স্বাধীন অতি ক্ষুদ্র নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। যার পুনরাবৃত্তি আর কামনা করছি না বরং এর ইতি টানতে বিনয়ী প্রার্থনা এবং উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। রাজনীতি হলো নীতি এবং আদর্শের সমন্বয়ে মুল্যবোধের প্রয়োগে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করার একটি উপাদান। কিন্তু ইদানিংকালের রাজনীতি এখন ঐ উপাদানের কপালে কালিমা লেপন করে রাজনীতিবিমূখ হতে হাতছানি দিচ্ছে। তাই ভালদের রাজনীতিতে জড়ানোর ইচ্ছায় আজ ভাটা পড়েছে। তারপরও বলব রাজনীতি চলে গেছে নেতিবাচক মানুষিকতার দখলে। যারা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন এবং ঐ নেতিবাচক চর্চায় লিপ্ত তাদের হাতেই নেতৃত্ব স্থায়ী হচ্ছে এমনকি নতুন নেতৃত্ব বর্তিয়েছে। তবে পুরাতন নের্তৃত্ব এই নেতিবাচকতার জোয়ার সামলাতে ব্যতিব্যস্ত এবং হিমশিমও খাচ্ছে। এই সময়ের দাবি রাজনীতি নেতিবাচকতার কলুষমুক্ত হউক।
একটি ঘটনা ঘটলে দুষারোপের আড়ালে প্রকৃত অপরাধি পাড় পেয়ে নতুন কোন অঘটন ঘটানোর সুযোগ পায়। তাই সকল রাজনীতিবিদদেরই বলছি ব্যক্তিস্বাথ্য এবং দলীয় স্বার্থ হাসিলের তরে ঐসকল দোষারূপের হীনতম কাজটুকু করবেন না। বরং প্রকৃত ঘটনার অনুসন্ধান করুন এবং প্রকৃত সত্য বের করে এনে ঐ হীনকাজের পরিসমাপ্তি ঘটাতে সহায়তা করুন। অনেক সময় সরকারী সংস্থার তদন্তেও গাফিলতি পরিলক্ষিত হয় এবং কোন কোন সময় ক্ষমতাধারী কারোর সদয় দৃষ্টি পেতে অথবা প্রয়োজনে অথবা চাপে বা অর্থের প্রলোভনে পড়ে সত্যকে মিথ্যায় পরিণত করেন এবং নিরাপরাধ ব্যক্তিকে অপরাধী হিসেবে প্রমানিত করেন। কিন্তু বিবেকের কাঠগড়ায় এমনকি সৃষ্টিকর্তার আদালতে আসলে ঐ নিরপরাধ ব্যক্তি পরিস্কার এবং মুক্ত অবস্থায় থাকেন। কখনো কখনো সত্য প্রকাশিত হয়। সত্যের ধর্ম প্রকাশিত হওয়া। সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায় না এমনকি যাবেও না তবে ঐ সত্য প্রকাশিত হতে সময় ন্য়ে আর ঐ সময়ে কেউ কেউ স্বীকারে পরিণত হয়ে দৃষ্টান্তে পরিণত হয় আবার কেউ কেউ মুক্ত হয়ে দৃষ্টান্তে পরিণত হয়। ঐ সকল প্রকাশিত সত্যগুলো আমাদেরকে আগামীর তরে শিক্ষা দেয় যেন আমরা সচেতন হয়ে ঐ সত্যের আলোকে আগামীর কর্মকান্ড পরিচালিত করে থাকি। এখানে উল্লেখিত প্রতিটি বক্তব্য বাস্তবতার নিরীখে এবং সত্যের আলোকে ঘটনাবহুলতার প্রতিচ্ছবির নিরীখে উপস্থাপন করা হলো মাত্র।
প্রতিটি ধর্মেই রয়েছে যে, অন্যকে শ্রদ্ধা এবং সম্মান প্রদর্শন করে অন্যের কাজে বাধা না হয়ে বরং সহযোগীতা করার আদেশ ও হুকুম দেয়া আছে। যুদ্ধ, দন্ধ, হিংসা, ঘৃণা এমনকি অন্যের ক্ষতি সাধন করা কোন ধর্মেই নেই এমনকি মূল্যবোধেও নেই। তাই কেন এই সময়ে এসে ধর্মীয় হানাহানি এবং বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে? হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং মুললিম এই ধর্মগুলোর কোন্িটতেই এই ধরনের হীন কাজের দৃষ্টান্ত নেই তবে প্রতিটি ধর্ম প্রতিটি ধর্মকে সহযোগীতা করে একে অপরকে জানার সুযোগ রয়েছে যাতে করে প্রকৃত সত্য এবং এর তাৎপর্য বুঝা যায়। মহানবী (স:) যুদ্ধের বদলে সন্ধি স্থাপন করেছেন, খুন ও ঘৃণার বদলে ভালবেসেছেন, সেবা শুশ্রুষা করেছেন, প্রয়োজনীয় যোগান দিয়েছেন, ক্ষমা করেছেন এমনকি অন্যের ধর্মের বাণীও ধৈয্যধরে মনযোগের সহিত শুনেছেন; তারপর নিজধর্ম ও বিশ্বাস এবং সৃষ্টিকর্তার বাণী অন্যদেরকে শুনিয়েছেন এবং বুঝিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে সকল মানুষ মহানবীর কাছে এসেছেন এবং বিশ্বাস করেছেন আর সেই অনুযায়ী চলেছেন এবং আজও অনুসরণ করে যাচ্ছেন। ঠিক একই ভাবে বুদ্ধ ও হিন্দুধর্মের অধিকর্তারা একই কাজ করেছেন। আর সকলের কাজের ইতি টানতে হযরত ঈসা মসিহ এসে পৃথিবীর জীবন যাপন এবং বিধি-বিধান উন্মুক্ত করে বাস্তবে দেখিয়ে ও শিখিয়ে আগামীর কল্যাণের তরে করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই সবই ইতিবাচক তাহলে কেন আজ নোংরা নেতিবাচকতা বার বার ছোবল মারছে?
সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ও অভিপ্রায় কি? আসুন আমরা তা জানতে চেষ্টা করি এবং মোনাজাতের সহিত অগ্রসর হয় যাতে করে জেনে ও বুঝে সকল নেতিবাচকতা এবং হিংসা- বিভেদ; ফ্যাতনা-ফ্যাসাদ অবসানকল্পে একযোগে কাজ করতে পারি। আমি কোন ধর্মের নামোল্লেখ না করে বরং বলতে চাই স্ব স্ব ধর্মের আলোকেই সত্যকে অনুসন্ধান করুন এবং প্রকৃত সত্যকে পাওয়ার আকাঙ্খায় সৃষ্টিকর্তার মুখাপেক্ষি হউন। তিনি আপনাকে সত্য প্রকাশের মাধ্যমে সকল কিছুই বাতলিয়ে দিবেন এবং সত্যের সারথি হয়ে কাজ করতে যাবতীয় যোগানে সমৃদ্ধ করে এগিয়েও নিয়ে যাবেন সেই অভিষ্ট লক্ষের দিকে। যাতে পৃথিবী নিজঞ্জাল হয় এবং মানুষ মুক্ত হয়ে স্বাধীন জীবনের স্বাধ আস্বাধন করে চিরস্থায়ী জীবনের নিশ্চয়তা নিয়ে খোদার বা সৃষ্টিকর্তার সান্নির্ধ্যে থাকতে পারেন।
ধর্মীয় ও পারিবারিক এবং সামাজিক অথবা রাজনৈতিক এমনকি রাষ্ট্রিয় অনুষ্ঠান পরিচালনা অথবা অনুষ্ঠিত হওয়া এক্িট সামষ্টিক দায়বদ্ধতা। যে কোন অনুষ্ঠান সফলভাবে সুসম্পন্ন করা সকলের সার্বজনীন দায়িত্বও বটে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র অথবা অন্য কোন বিষয় এখানে বিভেচ্চ নয় তবে ঐ অনুষ্ঠানের নেতিবাচকতার বিরোধী হতে সকল সচেনত মহলই সচেষ্ট থাকবেন কিন্তু বাধা, ভাংচুর অথবা বিশৃংখলা সৃষ্টি এমনকি বানচাল করার কাজে লিপ্ত হওয়া সৃষ্টিকর্তার বিরোধীতার সামিল। তিনি চাননা এমন কাজ তাঁর ছিফতে সৃষ্টি মানুষ (আশরাফুল মাখলুকাত) করুক। তাই সৃষ্টিকর্তার দেয়া উপহার সৃষ্টির সেরা জীব এবং এর গুনাবলী ব্যবহারে সচেষ্ট হউন। ইতিবাচক, মঙ্গলজনক, মানব সভ্যতার কল্যাণে, সৃষ্টির কল্যাণে এমনকি সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার প্রতিফলনে ব্যবহৃত হউক আমাদের এই অতি মূল্যবান জীবন। কোন ধর্মকেই ছোট করবেন না, কোন কর্মকেই ছোট করবেন না, কোন বংশকেই ছোট করবেন না, কোন সংস্কৃতিকেই ছোট করবেন না বরং সকল কিছুকেই বুঝতে, জানতে ও শিখতে এবং অনুধাবন করতে প্রস্তুত হউন এবং তৎপরবর্তীতে নিজের সংস্কৃতি ও জ্ঞানকে ব্যবহার করুন। যা ভাল যা সত্য যা উপযুক্ত যা সৎ যা খাঁটি যা সুন্দর যা সম্মান পাবার যোগ্য, মোট কথা যা ভাল এবং প্রশংসার যোগ্য সেই দিকে তোমরা মন দাও। এই বিশ্বাসেই আগামীর নবপ্রত্যয়ে নব সুচনার অপেক্ষায়…।

Leave a Reply

Your email address will not be published.