মানব জীবনের সীমানা নির্ধারণে এখন টনিক হিসেবে কাজ করছে উদ্ধগতি। এই উদ্ধগতির চাপে দিশেহারা মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি ও দেশ এবং সর্বোপরি জাতি। আর দেশের গন্ডি পার হয়ে এখন বিশ্ব জীবন-যাপনেও নাভিশ্বাস উঠেছে সেই উদ্ধগতির পরাক্রমায়। প্রকৃতির প্রতিশোধপরায়ন উদ্ধগতিতে বিশ্ব নাকাল আর সেই সাথে পাল্লাদিয়ে বেড়েই যাচ্ছে রোগ-জীবানুর ছোবল। একটি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেকটির করালঘ্রাসে বন্ধি এখন জীবন ব্যবস্থা। শুধু কি তাই এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক হীনমন্যতার নেতিবাচক সকল কর্মকান্ড। ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এবং দলীয় স্বার্থের দ্বন্ধে সাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে। উৎপেতে বসেথাকাদের ছোবলে আক্রান্ত সংকৃতি ও মূল্যবোধ এবং সর্বোপরি খোদার বাক্য। যে যেভাবেই বিশ্লেষণ করুন না কেন এই বিশ্লেষণ এবং লোক দেখানো ঘোঙ্গানীতে এর যবনীকাপাত ঘটবে বলে মনে হয় না। কারণ অতিত বিশ্লেষণ করে এই চলমানকে আমলে নিলে এটাই প্রতিয়মান হয়। তবে আশার কথা কোনকিছুই থেমে নেই বরং নতুন করে গতিময়তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতলয়ে। সবকিছ্রুই একটা সময় আছে এবং এর শেষও আছে আর সেই দিকে দৃষ্টিদিলে মনে হয় চলমান অরাজকতা এবং নৈরাজ্য এমনকি কুসংস্কার ও মিথ্যার বেসাতি থেকে বের হওয়া যায়।
বর্তমানে শান্তি এবং অশান্তি সহবস্থানে আছে তবে অশান্তির পাল্লা ভারী বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত আইন এবং এর অধিনস্ত বাহিনীগুলোও আছে কিন্তু স্থিতিশীলতা ও নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা এমনকি এর শুভ লক্ষণের স্থায়ীত্বটুকুই নড়বড়ে। কিভাবে এর বাস্তবসম্মত স্থায়ী ব্যবস্থা বিরাজমান রাখা যায় তার যুগোপযোগী চিন্তা ও কাজের সমন্বয়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা যুগের এবং সময়ের সঙ্গে জীবনের একট্টা হওয়া যৌক্তিক দাবী। এই দাবীকে বাস্তবায়নাধীন রাখার প্রচেষ্টায় সরকার মরিয়া; তবে সরকার প্রধানের চিন্তা ও কাজ এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার সমন্বয় বুঝে অগ্রসর হওয়ার যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই জ্ঞানী ও গুণীজন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আরো সচেতন হয়ে সামনের দিকে এগুনোর পদক্ষেপ নিতে কার্যকর ভুমিকা রাখতে হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আগামীর কল্যাণ সাধনে আরো মনযোগী হতে হবে। সেই সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পন্য উৎপাদনে মনযোগী হতে হবে। পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর ভুমিকা রাখতে হবে। শিক্ষা, গভেষণা, খাদ্য, স্বাস্থ্য এবং ভোগ্যপন্য, প্রসাধনী, খাবার, ঔষধ, কাপর এমনকি নিত্যপন্য উৎপাদনের যুগোপযোগী চিন্তার ও কর্মের প্রসার ঘটাতে হবে। ব্যাংক বীমার ক্ষেত্রে আরো ইতিবাচক দৃষ্টিনিবন্ধ রাখতে হবে। বাজার মূল্যে উদ্ধগতির কুঠারাঘাত এর লাগাম টেনে ধরে স্বস্তি ও নিশ্চয়তার বিধান দৃশ্যমান রাখতে হবে। ব্যবসায়ীদের সাথে পাল্লা দিয়ে সরকারও তার আওতাধিন পন্যতে মুল্যবৃদ্ধির উদ্ধগতির বেসামাল অবস্থার জাগরণে স্তব্ধ করে দিতে চাচ্ছে অতি সাধারণদের। সবই এখন মিডিয়ার কল্যাণে প্রকাশিত ও দৃশ্যমান। তবে কয়েকটি অসামঞ্জস্য বিষয় নিয়ে ভাসমান দৃষ্টিতে আনয়ন করতে চাই। ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির উদ্ধগতির লাগাম কি কখনো টানা যাবে না? যখনই এর বৃদ্ধি হয় তখনই দেখি সরকার ঐসকল পণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার অথবা কমিয়ে দিয়ে থাকে। কিন্ত কেন শুল্ক কমানো হবে বরং কঠিন হস্তে ঐ সকল পন্যের দাম বৃদ্ধি রহিতকরণে পদক্ষেপ নিয়ে কার্যকর ভুমিকা রাখতে হবে। ১৫৩টাকা লিটারের তেল এখন ১৬০টাকায় কিনতে হবে; ৫লিটারের বোতলজাত তেল ৭২৮ থেকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে ৭৬০এসে পৌঁছেছে। ১১৫টাকার বোতলজাত তেল এখন ১৬০টাকায় যা ভোক্তভোগীরা জানেন। শুধুকি তাই প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস যা ব্যবহারের অধিকার সবারই আছে কিন্তু আইন এর প্রয়োগে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে সাধারন মানুষ। একই দেশে দুই ধরণের আইন এখন বিদ্যমান। কেউ খাবে কেউ খাবেনা এই শ্লোগান এখন মৃত প্রায়। কেউ পাবে আর কেউ পাবেনা তা হবেনা তা হবেনা বাস্তবায়নের সময় এখনই। তবে সরকারের আইনকে শ্রদ্ধায় নিয়ে মানুষ প্রাকৃতিক গ্যাস বঞ্চিত হয়ে এলপিজির উপর নির্ভর করতে শুরু করেছে কিন্তু সেখানেও উদ্ধগতির বিপত্তি। গত তিন মাসে এই এলপিজির দাম বাড়িয়েছে ৪দফা। ৪৬টাকা থেকে বৃদ্ধি করে এখন ৫৮টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার আর সিলিন্ডার প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে ২০০-৩০০টাকা। আইন মানা এবং ন্যায্য অধিকার ছেড়ে দেওয়া অথবা সাম্য থেকে বের হয়ে আসাই যেন মরার উপর খারার ঘ্যাঁতে পরিণত হয়েছে। তবে সরকারকে এই উদ্ধগতির রাস টেনে ধরতে হবে নতুবা নিরবে নিভৃতে জড়ো হবে জনবিস্ফোরণ। দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় স্থিতিশীলতা এবং নিয়ন্ত্রণ এমনকি উপযুক্ত ও নির্ভরশীল মানুষের প্রয়োজন। এই বিষয়টি গুরুত্বের সহিত ভেবে দেখা আবশ্যক। সারের ডিলারদের অনিয়ম বন্ধকল্পে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। সরকারের আকাঙ্খার প্রতিফলত যেখানে বিঘিœত হচ্ছে সেখানেই কাজ করার জরুরী ফর্মান জারি প্রয়োজন। সরকারের সদিচ্ছা থাকাসত্ত্বেও কেন জনগণ সুফল ভোগ করতে পারছেনা তা খতিয়ে দেখতে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
আমি বিশ্বাস করি সবকিছুরই একটি উপযুক্ত সময় আছে আর এই সময় আল্লাহ প্রদত্ত। তাই আল্লাহ প্রদত্ত বেধেদেওয়া সময়ের আলোকে আমাদেরও সময়োচিত কাজে মনোনিবেশ করা জরুরী। আর এই জরুরী কাজটুকু করতে পারলেই শতভাগ সাফল্য এবং জনবান্ধব সন্তুষ্টি ও নিশ্চিত নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা এমনকি প্রয়োজনীয় যোগানের পর্যাপ্ততা পরিলক্ষিত হবে। আল্লাহর কালামের সেই সব কিছুরই সময় আছে একটু পরখ করি: “ সব কিছুর জন্য একটা সময় আছে; আসমানের নীচে প্রত্যেকটি কাজেরই একটা নির্দিষ্ট সময় আছে- জন্মের সময় ও মরণের সময়, বুনবার সময় ও উপড়ে ফেলবার সময়, মেরে ফেলবার সময় ও সুস্থ করবার সময়, ভেংগে ফেলবার সময় ও গড়বার সময়, কাঁদবার সময় ও হাসবার সময়, শোক করবার সময় ও নাচবার সময়, পাথর ছুঁড়বার সময় ও সেগুলো জড়ো করবার সময়, ভালবেসে জড়িয়ে ধরবার সময় ও জড়িয়ে না ধরবার সময়, খুঁজে পাওয়ার সময় ও হারাবার সময়, রাখবার সময় ও ফেলে দেবার সময়, ছিঁড়ে ফেলবার সময় ও সেলাই করবার সময়, চুপ করে থাকবার সময় ও কথা বলবার সময়, ভালবাসবার সময় ও ভাল না বাসবার সময়, যুদ্ধের সময় ও শান্তির সময়, খাওয়া-দাওয়ার সময় ও না খাওয়ার সময়, বৃদ্ধির সময় ও কমানোর সময়, কাজের সময় ও কাজ না করবার সময়, পারিশ্রমিকের সময় ও পারিশ্রমিক না দেওয়ার সময়।” আমি দেখেছি তিনি সবকিছুর জন্যই একটি সময় ঠিক করে দিয়েছেন, কিন্তু তিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কি করেন তা মানুষ বুঝতে পারে না। আমি জানি, মানুষের জীবনকালে আনন্দ ও ভাল কাজ করা ছাড়া তার জন্য আর ভাল কিছু নেই। এটা আল্লাহর দান যে, সব মানুষ খাওয়া-দাওয়া করবে ও তার সব কাজে সন্তুষ্ট হবে। আমি এও জানি আল্লাহ যা কিছু করেন তা চিরকাল থাকে; কিছুই তার সংগে যোগ করা যায় না এবং কিছুই তা থেকে বাদ দেওয়াও যায় না।
এবার আসল কথা হলো আমরা কি করছি এবং কেন করছি আর কিসের জন্য করছি তাকি ভেবে দেখেছি? তবে আল্লাহর জন্য যদি না হয় বা তাঁর ইচ্ছায় ও অভিপ্রায়ে যদি না হয় অথবা তাঁর বাক্যানুযায়ী যদি না হয় তাহলে এখনই ভেবে দেখুন এবং আগামীর জন্য প্রস্তুতি নিন। বিগত দিনের ভুলগুলোর জন্য অনুশোচনায় অনুতপ্ত হয়ে তৌবা করুন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়লু আর তাঁরই নিকট আমাদেরকে প্রত্যাপন করতে হবে। ফিরে যেতে হবে তাঁরই কাছে। তাই সময় থাকতে মনা হুশিয়ার আর প্রয়োজনীয় উপকরণ ও উপঢৌকন গ্রহন করে খোদার সান্নিধ্য লাভে প্রতিযোগী হউন। উদ্ধগতির উদ্ধশ্বাস থেকে বের হয়ে এসে নি¤œগতির সমান্তরাল শ্বাস-প্রশ্বাসে যুক্ত হউন। সকল কিছুর সময়ানুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করুন। দায়িত্ব পালনেও সব কিছুরই একটা সময় আছে জ্ঞানে পরিপূর্ণ হয়ে কাজের সমাপ্তি টানুন। শান্তি, স্থিতিশীলতা, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় যোগানের পরিপূর্ণতায় পূর্ণ হউন। এই প্রত্যাশা ও আকাঙ্খা পোষণ করে বিশ্ব বিধাতার দরবারে করজোরে মিনতি করে আগামীর কল্যাণ সাধনে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার পথ-প্রদর্শক হিসেবে নতুন প্রেরণা ও চেতনার প্রত্যাশায় অপেক্ষারত… অবস্থায় বাদশা সোলায়মানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ যা আল্লাহপ্রদত্ত তা উল্লেখ করছি। “আল্লাহকে যে সন্তুষ্ট করে তাকে তিনি জ্ঞান, বুদ্ধি ও আনন্দ দান করেন, কিন্তু গুনাহ্গারকে তিনি ধন-সম্পদ, যোগাড় করবার ও তা জমাবার কাজ দেন, যাতে সে তা সেই লোককে দিয়ে যায় যে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। এটাও অসার, বাতাসের পিছনে দৌড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়।”