উন্নয়ন এবং অন্তরায় এখন পরস্পর বিরোধী হলেও একে অন্যের বন্ধুত্বে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সময়ের উন্নয়নই হলো অন্তরায়ের চাবিকাঠী। যেখানে অন্তরায় সেখানেই উন্নয়ন। তবে উন্নয়ন এবং অন্তরায়কে পৃথক বা আলাদা করার উপযুক্ত সময় এখনই। তবে উন্নয়ন ও অন্তরায়ের সাথে উৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে স্যোসাল মিডিয়া। মিডিয়ার কল্যাণে উন্নয়নের সুফল গড়ে তোলা সহজে পরিণত হয়েছে পাশাপশি উন্নয়নের নেতিবাচকতা ও প্রতিবন্ধকতাগুলো মানুষের দৃষ্টিসীমার সম্মুখপানে রয়েছে। সার্বিক দিকে মনযোগ বা দৃষ্টি দিলে দেখা যায় মিডিয়ার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে ঐ গুরুত্বকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে এমনকি ইতিবাচক কল্যাণের তরে ব্যবহার করতে হবে।
স্যোসাল মিডিয়া বা মিডিয়া এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি একযোগে উন্নয়ন ও অন্তরায়ের সামন্তরাল হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। কোনভাবেই মিডিয়াকে ইতিবাচক মনোভাবের আঙ্গিকে কল্যাণকামী করে তোলা যাচ্ছে না। ইদানিং এই স্যোসাল মিডিয়ার কল্যাণে ইতিবাচকতার চেয়ে নেতিবাচকতাই বেশী বিরাজমান থাকছে। বিশেষ করে আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ এই কথাটিকে মিথ্যায় পরিণত করার যাবতীয় ব্যবস্থা বিরাজমান রাখছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে এবং ডিজিটাল সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে এখন নেতিবাচকতা এসে ভীড় জমাচ্ছে। তবে এইসকল নেতিবাচকতাকে দুরে ঠেলে ইতিবাচকতা কোমড় সোজা করে দাঁড়াতেই পারছে না। তবে ইন্টারনেট এর গতিময়তা ও সহজলভ্যতা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে কোমলমতীদের অঙ্কুরেই বিনাশ করে দিচ্ছে। ফেসবুক, ইনষ্টাগ্রাম, লিংকডিন, ইউটিউব, ইমুসহ আরো বহুল প্রচলিত মাধ্যমে ঘৃণ্য সেক্স ও সেক্স পন্য এবং এর শিক্ষা এমনকি পর্ণ ভিডিও সয়লাভ রয়েছে। কারো ইচ্ছা না থাকলেও ঐ রাস্তা পার হয়েই নিত্য প্রয়োজনীয় মাধ্যমের প্রয়োজনীয় স্থানে পৌঁছাতে হয়। কিভাবে এর থেকে বাঁচা যায় তার ব্যবস্থা গ্রহন করা আশু প্রয়োজন। তবে সরকার কিছুটা লাগাম টানলেও পুরোপুরি পেরে উঠতে পারেনি। আমাদের দাবী ও মিনতি এই অঙ্কুরেই বিনাশ হওয়া কোমলমতিদে জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় এবং পারিবারিক সহাবস্থান অক্ষুন্ন রেখে ভবিষ্যৎ কান্ডারী হতে সহায়তা করুন। সয়ম এখনই কারন এই পেন্ডামিক পরিস্থিতিতে ২৪ গুন ৭ ঘন্টায় পুরো সময়টাই স্যোসাল মিডিয়ায় মজে আছে। আর ঐ সময়টুকুই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আগামীর ভবিষ্যতকে। আসুন আমরা সামাজিক ঐক্যের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়াই এবং সরকারকে সহায়তা করি।
একটি ঘটনাকে উদ্ধৃত্তি দিয়ে স্যোসাল মিডিয়া ও এর সঙ্গে জড়িতদের মানসিকতার ঘৃণ্যতম দিকটি তুলে ধরতে চাই। ঐইতো কিছুদিন আগে আমরা নায়িকা পরিমনি ও দোসরদের এবং এর সঙ্গে যোগসাজসকৃতদের ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা দেখেছি এমনকি কারো কারো আবার উদ্ধশাস বা মৃত্যু যন্ত্রণাও হয়েছিল। কিন্তু আজ আবার তারা পুর্বের জায়গায় ফিরে গিয়ে সমাজকে এবং সংস্কৃতিকে এমনকি পারিবারিক সম্প্রীতির ঐতিয্যকে ধুলিসাৎ করে ভূলুন্ঠিত করে যাচ্ছে। গত সপ্তায় নায়িকা পরিমনি তার জন্মদিন পালন করেছে এবং করবে এটাই স্বাভাবিক এবং তার মৌলিক অধিকারের একটি। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে এটাই সকলের জন্য কাম্য। কিন্তু ঐ স্বাধীনতাটুকুকে যেভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নোংরামির সর্বনিম্মস্তরে নামিয়ে দিয়েছে তা-ই এখন সমাজের মাথাব্যাথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জমকালো ঐ জন্মদিনের রঙ্গিন আয়োজনে লালসালু আবৃত্ত নোংরামিই ছিল সাদারও বাহার। লাল কে আমরা চিনি একভাবে আর সাদাকে চিনি আরেক ভাবে তবে এই দুইয়েরই চরিত্রহনন করেছে ঐদিন উপস্থিত পরিমণিদ্বারা আপ্যায়িত অবুঝ শিশুরা (মায়ের বুকের দুধ খাওয়া বা স্তন পানকরারা)। তবে কি তাই… আরো অশ্বস্থির ছিল ঐ লুঙ্গি পড়ে পুরুষালী অঙ্গভঙ্গির বিদঘুটে খেমটা নাচন। তারচেয়েও বেশী কুরুচিপূণ্যতা ছিল স্যোসাল মিডিয়ার বিকারগ্রস্থ চিত্রকর্মী, সংবাদকর্মী এবং ভিডিও চিত্রধারনকারীর দল’র কর্মকান্ডগুলি। যা এখন বিশ্ববাসী দেখেছে ও জেনেছে এবং লজ্জ্বায় মাথা নত হয়েছে। তবে ঐসকল উপস্থিতির তালিকা তৈরী করে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হউক সংশোধনের জন্য এবং সংশোধনাঘারে পাঠিয়ে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে রূপলাভ করিয়ে স্ব কর্মে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা আশু গ্রহণ করে কার্যকর ও দৃশ্যমান রাখা হউক। নতুবা সমাজ, পরিবার, সংসার এবং রাষ্ট্র এমনকি মূল্যবোধ বিসর্জিত হয়ে বিলুপ্তি ঘটার উপক্রম ঘনীভূত হবে। সময় থাকতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি এবং পাশাপাশি জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রতিবাদ প্রদর্শনের দৃশ্যমান অবস্থান কামনা করছি।
উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান এবং এই উন্নয়নের সঙ্গে অন্তরায় অদৃশ্য এবং দৃশ্যমান হিসেবে শক্ত অবস্থানে রয়েছে। শিক্ষার উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রের উন্নয়ন, কাঠামোগত উন্নয়ন, মূল্যবোধের উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, গীর্জা ও পেগুডা, সরকারী অফিসের, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ইন্টারনেট, সমতায় বন্টনের উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন, সৃজনশীলতা ও উৎপাদনশীলতায় উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কৃষি ও খাদ্যে উন্নয়ন, স্বাস্থ্য-চিকিৎসায় উন্নয়ন, রাষ্ট্রীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে উন্নয়ন, রাষ্ট্র পরিচালনায় উন্নয়ন, বৈশ্বিক যোগাযোগে উন্নয়ন এমনকি আবিস্কারেও উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই কঠোর ও কঠিন অন্তরায় মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই অন্তরায় দীর্ঘায়ীত হচ্ছে এবং এই দীর্ঘায়ীত ইচ্ছাকৃতভাবে করে রাখা হচ্ছে। এইগুলো হচ্ছে অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে, ব্যক্তিগত স্বার্থ্য হাসিলের লক্ষ্যেই এই অনৈতিকতার অন্তরায়গুলো বিরাজমান রয়েছে; ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিক লাভের অপকৌশল হলো অন্তরায় নামক প্রতিবন্ধকতাগুলো। তবে কোন কোন সময় রাষ্ট্র ঐ প্রতিবন্ধকতার জট পাকানোর খেলা খেলে ক্ষুদ্র লাভ বিসর্জন দিয়ে থাকেন বৃহত্তর লাভের আশায়। এইসকল অনৈতিকতার বেড়াজালে সৃষ্ট অন্তরায়গুলোকে প্রতিহত এবং আপসারণের উর্বর ও উপযুক্ত সময় এখনই। আর এই সময়কে কাজে লাগাতে রাষ্ট্রের পাশাপাশি আমাদের আম-জনতার সক্রিয় অংশগ্রহণ অবিশম্ভাবী হয়ে পড়েছে।
পরিশেষে মহান খোদার দরবারে দুহাত তুলে মোনাজাত করি যাতে আমরা ঐ উন্নয়ন ও অন্তরায়ের হাত থেকে রেহাই পেতে পারি। হ্যাঁ উন্নয়ন চাই এবং সকল অন্তরায়ের বেড়াজাল থেকে মুক্তিও চাই। উন্নয়ন হউক সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ে এবং অন্তরায় এর ঝঞ্জাল মুক্তও হউক ঐ সৃষ্টিকর্তারই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভুমিকায়। মানুষের ইচ্ছায় বা শয়তানের ইচ্ছার প্রতিফলনের নিমিত্ত্বে কোন উন্নয়ন আর অন্তরায় আমরা চাই না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন এবং আপনার মহা পরিকল্পনার অংশ যে উন্নয়ন সেই উন্নয়নে কামিয়াবী হাসীল করে তুলোন। আমীন॥