প্রশান্তি ডেক্স \ দুই স্বৈরশাসক রাষ্ট্রের প্রতি পদে মাইন পুঁতে রেখে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলার পথে এখনো অনেক মাইন পুঁতে রাখা আছে। সেই মাইনগুলো সচেতনভাবে দেখে দেখে তিনি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মধ্যে দিয়ে দেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে প্রগতিশীল সাংবাদিক মঞ্চ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘ঘৃণ্য আইন ইনডেমনিটি’ শীর্ষক সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। সভায় বক্তৃতা করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)’র সাবেক সভাপতি মনজরুল আহসান বুলবুল প্রমূখ।
সভায় মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দায়মুক্তি শব্দটির সঙ্গে আমার নিজের কিছু সমস্যা ছিল। দায়মুক্তি কেবল আইন ও আদালত দিতে পাওে, এটি আমার ধারণা। পৃথিবীর কোথাও আমি দেখিনি নির্বাহী আদেশে দায়মুক্তি দিয়ে দিয়েছে। অন্যায় করেছি, এই অন্যায়ের বিচার তোমরা কেউ করতে পারবে না। খুন করেছি, খুনের বিচার তোমরা কেউ করতে পারবে না। আমি যেটা করেছি সেটাই সঠিক। এই দাম্ভিক, অনৈতিক, মূর্খতায় পরিপূর্ণ জিঘাংসা, ঘৃণা এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ রায় কোথাও কেউ দিয়েছে কি না আমার আমার জানা নেই। এটাই দুর্ভাগা বাংলাদেশকে মোকাবিলা করতে হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ওরা নির্বাহী আদেশে খুনের বিচার বন্ধ করেছিলো। এরপর সংসদে আইন পাস করেছিলো। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ব্যবস্থা করেছেন। এটা কিন্তু তার নির্বাহী আদেশে নয়। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসক ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে আমাদের স্বাধীনতার মূলভিত্তি অসাম্প্রদায়িকতাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যা বর্তমানে আমাদের প্রতিটি চলার পথে বিভ্রান্ত করছে। তারপরও শত প্রতিকূলতাকে জয় করে প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে চলেছেন। যারা বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করেন তাদের উচিত কোনো অন্যায় ও অপরাধের সমর্থন না দেওয়া। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সমর্থনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় বঙ্গবন্ধু হত্যায় খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততা ছিল এমন মন্তব্য করে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, খালেদা জিয়া ইচ্ছা করলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে খুনিদের বিচার করতে পারতেন। কিন্তু করেননি। কেন করেনি? কারণ, তারা নিজেরাই তো খুনি। খালেদা জিয়ার স্বামী খুনি, খালেদা জিয়াও এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। সুতরাং খুনিরা খুনিদের বিচার করবে না। পরে ২১ বছর চলল দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। এই সভ্য সমাজে বিচারহীনতা বলে কোনো আইন কোথাও খুঁজে পাবেন না। এটি চালিয়েছিল স্বৈরাচারী এরশাদ এবং জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। ২১ বছর পর যখন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসল, তখন এই আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু করেন। কিন্তু ৪ বছর পরে যখন খুনিরা আবার ক্ষমতায় আসল তখন তারা সেই বিচার বাধাগ্রস্ত করার সমস্ত চেষ্টা করল। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও রায় কার্যকর হয়েছে। এখনো যারা পালিয়ে জামাই আদরে আছে তাদের দ্রæত আইনের আওতায় আনতে হবে। হত্যাকান্তে নেপথ্যেও কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।
সভায় বক্তারা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকান্ডে নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান। যার মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম মীরজাফরদের মতো ওই সকল ঘটনায় জড়িত বিশ্বাসঘাতকদের ঘৃণা করতে শিখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।